ড. ইউনূসকে কারাদণ্ড দেওয়ায় ঢাবি শিক্ষকদের উদ্বেগ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া কারাদণ্ডের রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপি ও জামায়াতপন্থী সাদা দল সমর্থিত শিক্ষকরা। একইসঙ্গে এ রায় বাতিলের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তারা। আজ শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে একজন সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী। কেবল নোবেল পুরস্কার বিজয় নয়, দারিদ্র বিমোচনসহ অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে তার মৌলিক ও সৃজনশীল তত্ত্ব ও কর্মকৌশল বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। তার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে বিশেষ সম্মান লাভ করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, তিনি বারবার বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ও সরকারি দলের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ তাকে অসম্মান ও অপদস্থ করে বিভিন্ন সময় বক্তব্য রাখছেন।
এ রায় দেশের ন্যায় বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন অজুহাতে তার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাসহ তুচ্ছ অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলাটিও এমনি একটি মামলা, যার মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, মামলার এ রায়ে ড. ইউনূস ন্যায়বিচার পাননি। তড়িঘড়ি করে দ্রুততম সময়ে ড. ইউনূসকে একটি সাজানো মামলায় রায় প্রদানের মাধ্যমে ন্যায় বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের দোষী সাব্যস্ত করা 'বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবরুদ্ধ দশার প্রতীক' বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে বিবৃতি দিয়েছে, আমরা তাকে যথার্থ বলে মনে করি।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে এই রায় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, অগণতান্ত্রিক ও চরম কর্তৃত্ববাদী বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে নষ্ট করেছে। বিচার বিভাগও এর ব্যতিক্রম নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর বিরুদ্ধে দেওয়া রায়টিও এর নজির বলে আমরা মনে করি। তাকে সাজা দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিও রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এক তরফাভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় থাকার যে বন্দোবস্ত করেছে, এর প্রতিবাদে চলমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কৌশল হিসেবে এ রায়টি দেওয়া হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক কর্তৃক দায়ের করা শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের একটি মামলায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে।