অপরাজনীতি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে গবেষণামুখী করার পরামর্শ চবি ভিসির
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেছেন, আমরা যদি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোযোগী করে গড়ে তুলতে পারি তবে শিক্ষার্থীরা অপরাজনীতিতে জড়াবে না। বেশি বেশি গবেষণামনস্ক শিক্ষার্থী তৈরি হলে দেশ স্মার্ট বাংলাদেশে রূপ নেবে।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এডুকেশন রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘অপরাজনীতিমুক্ত, দারিদ্রমুক্ত ও শিক্ষা সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে চবি ভিসি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে শুধু উদ্ধুদ্ধই করতেন না তিনি স্বপ্ন পূরণে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী নেতা। অল্প সময়ের দেশ গঠনের সময় করেছেন বেতবুনিয়া ভূ উপগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করেছেন। শিক্ষার জন্য কুদরত ই খুদা কমিশন গঠন করেছেন। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন শিক্ষা ছাড়া এ জাতির মঙ্গল সম্ভব নয়। তিনি পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই বেঈমান জাতি থাকে হত্যা করে ফেললো। ৭৫’র সে চক্র আবার সক্রিয় হয়েছে। তাদের রুখে দিতে হবে। আর তার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা গবেষণা করে সচেতন হলে তারা তরুণদের বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
এ সময় তিনি উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের শিক্ষার্থীদের সত্যটা শেখাবেন। তারা সত্য জেনে সচেতন হলে কেউ তাদের বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গবেষণার খাত বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যদি গবেষণার খাত কম থাকে তবে আমার কাছে প্রজেক্ট নিয়ে এসো। আমি সহযোগিতা করবো, কমপক্ষে ৫লাখ থেকে শুরু হবে। তিনি ব্লু ইকোনমির কথা বলেছেন। আমরাও তা নিয়ে ভাবছি। ব্ল ইকোনমি গবেষণা কেন্দ্র করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের ৬০ একরের মতো জায়গা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো: সাজ্জাদ হোসেন।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো: ইসমাইল খান, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এএসএম লুৎফুল আহসান, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগাং এর ভিসি অধ্যাপক ড জাহিদ হোসেন শরীফ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, পাকিস্তানিরা আমাদের শোষণ করেছে। তারা যদি বাংলায় উৎপাদিত পাটের অর্থও যদি এইদেশের জনগণের জন্য ব্যয় করতো দেশ ‘৭১ সালের দিকে উন্নত হয়ে যেতো। তারা আমাদের কেবলই শোষণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এখন আমাদের সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। প্রধানমন্ত্রীর এই উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে একদিন তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে জ্বালাও, পোড়াও, হরতাল অবরোধের নামে যেসব অপকর্ম চলছে তা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। দেশকে এসব অপরাজনীতি থেকে মুক্ত করতে হবে। তা না হলে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করা যাবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা যাবে না। তাঁরা আরও বলেন, একটা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারলে সমাজের সব অন্ধকার দূরীভূত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসির সদস্য ড. মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা একটি শিক্ষা সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ চাই। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক। এজন্য শিক্ষার্থীদেরকে গবেষণা এবং উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমেই তৈরি হবে একটি শিক্ষা সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ।