১০ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৫৯

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে অচল সব সরকারি কলেজ

ঢাকা কলেজ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে তিনদিনের কর্মবিরতি চলছে  © টিডিসি ফটো

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ নানান দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে সারাদেশের সরকারি কলেজে শুরু হয়েছে তিন দিনের সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) শুরুর দিনে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে শিক্ষকরা পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, সভায় অংশগ্রহণ ও দাপ্তরিক কাজ হতে বিরত আছেন। ফলে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অচলাবস্থার। 

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারের নানাবিধ সমস্যা ও যৌক্তিক দাবীগুলো পুরণের জন্য বারবার কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান এবং ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডার তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার, জেলা উপজেলায় শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রশাসন সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদসৃজন, চাকরীর ৫ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড প্রদানসহ করতে হবে। এসব দাবি আদায় না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। 

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকা দেশের সকল সরকারি কলেজ, সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা, সরকারি টিটি কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, সকল শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, নায়েম, ব্যানবেইসসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাগণ সর্বাত্মক কর্মাবরতি পালন করছেন।

সমিতির এ কর্মসূচি ক্লাস-পরীক্ষা, শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অধীন ভর্তি, ফরম পূরণ, সকল ধরনের পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, এবং দাপ্তরিক সকল কর্মকান্ড, কর্মবিরতির আওতায় রয়েছে।

শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থী শূন্য শ্রেণিকক্ষ

এদিন সরেজমিনে রাজধানীর ঢাকা কলেজ ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও আজ একেবারেই ফাঁকা। বিভাগগুলোতেও নেই তেমন কোন কার্যক্রম। শিক্ষকরা উপস্থিত হলেও কোন ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম কিংবা পাঠদানে অংশগ্রহণ করেননি।

রাজধানীর ঢাকা কলেজ ছাড়াও ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজসহ সারাদেশের সবগুলো কলেজে একযোগে তিন দিনের এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

বিসিএস শিক্ষা সমিতির ঢাকা কলেজ ইউনিটের সম্পাদক ড. মো. দিললুর রহমান বলেন, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি আমরা পালন করছি। শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য অবিলম্বে দূর করতে হবে। আমরা চাই সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হোক। আমরা কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, সভায় অংশগ্রহণ ও দাপ্তরিক কাজ হতে বিরত আছি।

অপরদিকে পরিকল্পিতভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মাধ্যমে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী।

প্রফেসর শাহেদুল খবির বলেন, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারবিরোধী আমলারা এক্ষেত্রে মূল নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছেন। শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে বা বিপন্ন করার জন্য অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন। সংবিধানের স্পষ্ট বলা রয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সমানভাবে সুযোগ-সুবিধা গুলো প্রাপ্য হবেন। প্রত্যেকটি ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নির্ধারণের কথা বলা রয়েছে।

তিনি বলেন, কিন্তু আমরা এডুকেশন ক্যাডারে একটি ভিন্ন চিত্র দেখেছি। অন্য অনেক ক্যাডারের সাথেও দীর্ঘদিন ধরে এ বৈষম্য চলমান রয়েছে। এই বৈষম্যগুলো নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা দেখেছি যে এই নির্দেশনা অমান্য করে বৈষম্য দূর করার বদলে দিনদিন বৈষম্য বাড়ছে।