ঢাবি শিক্ষক সমিতির প্রস্তাবনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: ইউট্যাব
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে যেসব বক্তব্য ও প্রস্তাবনা দিয়েছেন তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট ২০২৩) এক বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতি জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষ্যে ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সমাজতাত্বিক কারণসমূহ বিশ্লেষণ করেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় ও বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র, একশ্রেণী সামরিক কর্মকর্তার ক্ষমতার প্রতি অতি আগ্রহ ও লোভ, অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া প্রবর্তন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশেরে মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রক্রিয়া রহিতকরণ, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া, মুজিব সরকার বিরোধী প্রচার, প্রচারনায় একশ্রেণীর সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ ও তথাকথিত সুশীল ও সাংবাদিকদের ভূমিকার বিষয় নিয়েও শিক্ষকবৃন্দ বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তাঁরা বলেন, উক্ত বিষয় ছাড়াও সম্মানিত শিক্ষকসমাজ শিক্ষক সমিতির এ আলোচনা সভায় বেশকিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন। তন্মধ্যে ৩ নং প্রস্তাবনাটি হচ্ছে- ‘একটি বিশেষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী (মাস্টার মাইন্ড) ও নেপথ্য কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি তোলা হয়। এক্ষেত্রে এদেশের ‘প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে’ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত একজন মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়’।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভায় যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া ও প্রস্তাবনা তোলা হয়েছে তা অত্যন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একপাক্ষিক। এ ধরনের বক্তব্য ও প্রস্তাবনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কলুষিত রাজনীতির বহি;প্রকাশ। যা প্রতিহিংসামূলক এবং গণতন্ত্রের অন্যতম অন্তরায়। কেননা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে দেশের মানুষকে জাগ্রত ও উদ্বুব্ধ করেছিলেন। তার স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমেই বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের প্রধান। যিনি রণাঙ্গণে নিজে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর প্রধান ও বাংলাদেশের একজন অনুকরণীয় প্রেসিডেন্ট। তার শাসনামলে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে ও পরে তার অনস্বীকার্য ভুমিকা দেশের মানুষ কখনোই ভুলবে না। সুতরাং তিনি কখনোই শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ছিলেন না এবং থাকার প্রশ্নই আসে না।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে যে ধরনের নিন্দনীয় বক্তব্য এবং প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য, অপ্রাসঙ্গিক। আমরা শিক্ষক সমাজের পক্ষে ঢাবি শিক্ষক সমিতির এহেন উদ্যোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং উল্লিখিত প্রস্তাবনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় ইউট্যাব।