শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণসহ ১২ দফা দাবি ১০ শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ০৪:৪২ PM , আপডেট: ২৯ মে ২০২৩, ০৪:৫৫ PM
শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণ ও পেনশন প্রদানসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। আজ সোমবার (২৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পর্যায়ের ১০টি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশন’ এসব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৮ ভাগ দায়িত্ব পালন করে আসছেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। ইউনেস্কো এবং আইএলও'র সুপারিশমালা মোতাবেক সমযোগ্যতা, সমঅভিজ্ঞতা ও সমদায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এক ও অভিন্ন বেতন স্কেল এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি অনেকবার পাঠিয়েছি এবং ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি সভা আহ্বানের জন্য অনেকবার ব্যক্তিগতভাবেও অনুরোধ করেছি। আজ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার জন্য কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকলাপের প্রতি খুবই হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, শেষবারের মতো আমরা শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহবান জানাই, তিনি যেন আমাদের নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের ১২ দফা দাবির ব্যাপারে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অন্যথায়, আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হব।
বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের ১২ দফা দাবি হল:
১) শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা।
২) সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও পেনশন প্রদান করা।
৩) ইউনেস্কো ও আইএলও'র সুপারিশ অনুযায়ী, শিক্ষা খাতে জিডিপি’র ৬ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা।
৪) অনুপাত প্রথা বিলুপ্ত করে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের পদ বাতিল করে আগের মতো সহকারী অধ্যাপকের পদ চালু করা।
৫) এমপিও শর্তপূরণকারী এবং বিধি সম্মত নিয়োগপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও এবং অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে পাঠদানকারী শিক্ষকদের প্যাটার্নভুক্ত করে এমপিওভুক্ত করা।
৬) অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পূর্বের ন্যায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দুটি উচ্চতর স্কেল প্রদান করা।
৭) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের অনুরূপ প্রদান করা।
৮) এমপিও জনবল কাঠামো-২০২১ এর ১১.১৩ ধারা বাতিল করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোপূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা।
৯) শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ‘চাকরি বিধিমালা-২০১২’ দ্রুত বাস্তবায়ন ও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডিতে একজন কর্মচারী প্রতিনিধি রাখা এবং শিক্ষার্থীদের আনুপাতিক হারে কর্মচারীদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
১০) শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব দফতরে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আনুপাতিক হারে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া।
১১) কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি কারিগরি ও ভোকেশনাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।
১২) ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং অবিলম্বে শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের আহবায়ক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম, মো. ফরিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. ফয়েজ হোসেন, মো. মহসীন রেজা, মো. আব্দুর রহমান, মো. হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।