ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হলেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল
রাজধানীর পুরান ঢাকার বিসমিল্লাহ্ টাওয়ার ব্যবসায়ী সমিতির ২০২৩-২০২৫ইং মেয়াদের জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল থেকে এর আগেও সাধারণ সম্পাদকসহ শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদে নির্বাচিত একজন শিক্ষক নেতা। শিক্ষকতা, শিক্ষক রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন ব্যবসায়ীও। এবার তিনি ব্যবসায়ীদের নেতা নির্বাচিত হলেন।
পুরান ঢাকার মিডফোর্ড রোডে অবস্থিত বিসমিল্লাহ্ টাওয়ারে দুই-আড়াইশ দোকান রয়েছে। তবে সেখানকার ব্যবসায়ী সমিতির ২০২৩-২০২৫ইং মেয়াদের নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক ব্যবসায়ী। কারণ মার্কেটটি হাজী সেলিমের। সেখানকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই মার্কেটের প্রভাবশালী সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া যেহেতু আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক নেতা তাই তাকে কমিটিতে রাখলে তাদের পাল্লা ভারি হবে।
জানা যায়, বিসমিল্লাহ্ টাওয়ারে ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়ার এন. এস. সুরুচি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি দোকান রয়েছে। এই দোকানের অপর একটি শাখা রাজধানীর চন্দ্রিমা মার্কেটেও রয়েছে। এছাড়াও তিনি ইম্পোর্ট ব্যবসার সাথে জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়ার ছোট ভাই মো. স্বপন কানাডার নাগরিক। তারা দুই ভাই একসাথে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এন. এস. সুরুচি ইন্টারন্যাশনাল নামের দোকান ছাড়াও এই মার্কেটে ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়ার আরও দোকান আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যারের একটা দোকান হলেও তার ব্যবসা অনেক বড়। তিনি চায়না থেকে ইম্পোর্টের ব্যবসা করেন। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি হলেও ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই মার্কেটের আরেক দোকান মালিক জানান, নিজাম স্যারেও আওয়ামী লীগপন্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তার একটা পাওয়ার আছে না! এই মার্কেট হাজী সেলিমের। সমিতির সকল উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ করে। স্যারকে রাখতে পারলে তাদের পাল্লা ভারি হবে।
তবে ওই মার্কেটের মালিক সমিতির নির্বাচন শুধু নামের তবে কাজের না বলে মন্তব্য করে জয়নাল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে কারও নির্বাচিত হতে কোনও ভোট লাগেনি। ভোটের দিন অযথাই আমাদের দোকান বন্ধ রাখতে বলেছিল তারা। আওয়ামী লীগ পন্থী প্রভাবশালী লোক হলেই তাকে পদ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক আগে থেকে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন অধ্যাপক নিজামুল হক। তবে এবার প্রথম ব্যবসায়ীদের নেতা হলেন তিনি। নামী-দামি বিভিন্ন ক্লাব, সমিতিরও মেম্বারশিপ রয়েছে তার। ২০২১ সালে তৎকালীন উত্তরা ক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে পরীমনি ‘ধর্ষণের চেষ্টা’র অভিযোগ আনলে সে সময় তার সঙ্গে অধ্যাপক নিজামুল হকের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০২৩ সালের কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের নীলদলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, ওনি অনেক আগে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত। পারটেক্সের হাশেম গ্রুপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাব, সমিতির অনেক দামি-দামি মেম্বারশিপ রয়েছে। যেটা সবাই জানে। আজকাল টাকা-পয়সা থাকলে অনেক কিছুই ওন (Own) করা যায়। আপনি যদি খোঁজ খবর নেন। তাহলে দেখবেন তিনি শিক্ষক হওয়ার আগেই ব্যবসায়ী ছিলেন।
তবে ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতা হলেও দোকান মালিক হওয়ার কথাই অস্বীকার করেছেন ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া। তিনি বলেন, এই দোকানটা আমার ভাইয়ের। আমার ভাই কানাডা থাকার সুবাদে প্রায়ই আমি দোকানে যাই, তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। অনেক আগে থেকেই আমার ভাই সেখানকার ব্যবসায়ী। এ কারণেই আমিও সেখানে অনেকদিন যাবত যাতায়াত করছি, তার ব্যবসা দেখছি।
এছাড়াও নির্বাচনে হাজী সেলিমের প্রভাবের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিসমিল্লাহ টাওয়ার মালিক সমিতির নির্বাচন সাধারণত এমনই হয়। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা একসাথে বসে নির্ধারণ করে কে কোন পদ পাবে, এটা সাধারণ বিষয়। যারা প্রভাবশালী সবাই মোটামুটি আওয়ামী লীগ বা যুবলীগ করে, তাই তারা পদ পেয়েছে হয়তো।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগপন্থী হওয়ার কারণেই কি হাজী সেলিম আপনাকে কমিটিতে রেখেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাজী সেলিমের সাথে সাধারণ সম্পর্ক রয়েছে। তেমন কাছেরও না, আবার দূরেরও না। ব্যবসায়ী সমিতি আমাকে পদ দেওয়ায় তার হস্তক্ষেপ আছে কিনা আমি জানি না। পদ দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা আমাকে কল করেছিল, আমি না বলেছিলাম। তবুও তারা আমাকে সমিতিতে রেখেছে।