প্রচারপত্রে ৩৪টি ভুল করা অধ্যাপক জামাল পেলেন ১৩২ ভোট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির ২০২৩ সালের কার্যকর পরিষদ নির্বাচনে আলোচিত ও সমালোচিত আওয়ামী লীগপন্থী বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন। অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনের নির্বাচনী প্রচারপত্রেই ভুল ছিল ৩৪টি। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৩২ ভোট।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন সমিতির নির্বাচন পরিচালক ও ফার্মাসি অনুষদের ডিন সীতেশ চন্দ্র বাছার। আর ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরই এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিলি করা লিফলেটে অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বঙ্গবন্ধুর নামসহ ৩০টিরও অধিক ভুল করেছেন। ৩ পাতার একটি প্রচারপত্রের এমন ভুলের কারণে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল খোদ শিক্ষকদের মধ্যেই।
তখন অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন নিজেও এসব ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছিলেন, এসব ভুল সংশোধন করা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনের সেই লিফলেটে ভুল বানানের মধ্যে ছিল-‘তিমি’ (তিনি), ‘১২৮৫’ (১৯৮৫), ‘উত্তীণ’ (উত্তীর্ণ), ‘ইং্যান্ডের’ (ইংল্যান্ডের), ‘ক্যাতনামা’ (খ্যাতনামা), ‘মেডিটেল’ (মেডিকেল), ‘কলেটে’ (কলেজে), ‘নিন্ডিকেট’ (সিন্ডিকেট), ‘গভনিং’ (গভর্নিং), ‘সামরিক’ (সামাজিক), ‘জাতীঢ’ (জাতীয়), ‘পবন্ধ’ (প্রবন্ধ), ‘পিতিবেদন’ (প্রতিবেদন), ‘ব্যানবেই্স’ (ব্যানবেইস), ‘ভিাগের’ (বিভাগের), ‘শ্রেনীকক্ষ’ (শ্রেণিকক্ষ), ‘গবেষণাা’ (গবেষণা), ‘অংশগ্রহন’ (অংশগ্রহণ), ‘তম্মধ্যে’ (তন্মধ্যে), ‘বসংশেষষ’ (সর্বশেষ), ‘গনতন্ত্র’ (গণতন্ত্র), ‘প্রশংসিত’ (প্রসংশিত), ‘আবদন’ (অবদান), ‘বর্নাঢ্য’ (বর্ণাঢ্য), ‘কারা অন্তরীন’ (কারা অন্তরীণ), ‘দাবীতে’ (দাবিতে), ‘গন্তি’ (গণ্ডি), ‘অন্তর্জাতিক’ (আন্তর্জাতিক) ‘আওয়ার্ড’ (অ্যাওয়ার্ড), ‘বঙ্গবব্ধু’ (বঙ্গবন্ধু), ‘সন্মাননা’ (সম্মাননা), ‘মারাত্নকভাবে’ (মারাত্মকভাবে), ‘মুক্তিযুদ্ধোর’ (মুক্তিযুদ্ধের)।
এ বিষয়ে তখন অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, প্রথম দিনে (প্রচারণার) যে লিফলেটগুলো দেওয়া হয়েছিল সেখানে ভুল ছিল। তবে গত দুদিনে দেওয়া হয় তাতে কোনো ভুল ছিল না। মূলত ছাপাখানায় সমস্যায় কারণে এই ভুলগুলো হয়েছিলো। আমরা আজকে যে লিফলেট বিতরণ করেছি সেখানে দেখতে পারেন কোনো রকম ভুল ছিল না।
তিনি তখন প্রতিবেদককে সংশোধিত সফট কপিটি পাঠান। তবে সংশোধন করার পরও বেশ কয়েকটা ভুল পাওয়া যায় লিফলেটটিতে।
এ বিষয়ে নীল দলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছিলেন, ওনি (জামাল উদ্দীন) নীল দল থেকে নির্বাচনে দাঁড়াননি। নীল দল থেকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নিজে নিজে দাঁড়িয়েছেন। আর নীল দল থেকে সভাপতি পদে আমিই একমাত্র মনোনীত প্রার্থী।
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তো ওনার একটা প্যানেল থাকত। এখন ওনি তো একাই। তাই ওনি একক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বলা যায়।
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন তার লিফলেটে নীল দলের সভাপতি প্রার্থী দাবি করছেন। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ওনি তো এটা অন্যায়ভাবে লিখছে। ওনি তো এটা লিখতে পারেন না। নীল দলে আমিসহ ১৫ জন প্রার্থী। সেখানে তো ওনার নাম নেই। তাহলে তিনি নীল দলের প্রার্থী হন কিভাবে! অর্থাৎ তিনি নীল দলের প্রার্থী নন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির ২০২৩ সালের কার্যকর পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪টিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরা। তাদের সংগঠন নীল দলের প্রার্থী মো. নিজামুল হক ভূইয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জিনাত হুদা। শুধুমাত্র সহ-সভাপতি পদ বাদে অন্য সব পদে জয় পেয়েছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান জিতেছেন ৪৭ ভোটের ব্যবধানে। তিনিই একমাত্র প্রার্থী যিনি সাদা দল থেকে বিজয়ী হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতিবছর শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয় ১৫টি পদে। গত এক যুগে সমিতিতে নীল দলের অবস্থান ক্রমাগত নিরঙ্কুশ হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর। আওয়ামীপন্থী নীল দল সর্বশেষ নির্বাচনেও ১৫ পদের ১৪টিতে জিতেছিল।