টেবিলে বড় করে লিখুন ‘আমি ক্যাডার হবো, আমিই পারবো’
‘‘অন্যদের সফলতা দেখে প্রথমে বিসিএস ভাবনা মাথায় আসলেও আমার পারিপার্শ্বিকতা, প্রতিকূলতা এবং অসচ্ছলতা বিসিএস যাত্রার মূল কারণ। আর আমার সফলতার নেপথ্যে জেদ, ধৈর্য ও পরিশ্রম।’’ এভাবেই নিজের অনুভূতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা হালদার।
প্রিয়াংকা হালদারের শৈশব কেটেছে পিরোজপুর জেলায়। তার গ্রামের বাড়ি স্বরূপকাঠি থানার আওতায় ছোট্ট গ্রাম সুলতানপুরে। স্কুল জীবন কেটেছে গ্রামেই।
ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলেন প্রিয়াংকা হালদার। তবে সঠিক গাইডলাইনের অভাবে আশানুরূপ রেজাল্ট করতে পারেননি এসএসসিতে। সংগীতকাঠী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ এর মধ্যে পেয়েছিলেন ৪.৮১।
অন্যদিকে নিম্ন পরিবার বিধায়, জেনারেল লাইনে পড়ালেখা করাতে সাহস পাচ্ছিলেন না প্রিয়াংকা হালদারের বাবা। তবে নিজের প্রবল ইচ্ছা ও বড়দা সাপোর্টে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন বিভাগীয় শহর বরিশালের অমৃত লাল দে কলেজে। প্রচন্ড জেদ নিয়ে ও পরিশ্রম করে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ মধ্যে ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
প্রিয়াংকা হালদার বলেন, এসএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জনের পর থেকেই পড়ালেখার প্রতি আরও আগ্রহ বেড়ে যায় আমার। এরপর বড়দা ঢাকা নিয়ে আসেন। কিন্তু খাপ খাওয়াতে পারলাম না শহরের নতুন পরিবেশে। একটা বছর লস। এরপর কোন রকম প্রিপারেশন ছাড়া ২০১১-১২ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হই। সিজিপিএ-৩.৬৪ নিয়ে বিএসসি এবং সিজিপিএ- ৪.০০ নিয়ে এমএসসি কমপ্লিট করি।
তিনি বলেন, আমার বাবা একজন কর্মকার এবং মা গৃহিণী। তিন ছেলে-মেয়েকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছেন। আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যে দিয়ে প্রত্যন্ত একটা অঞ্চল থেকে উঠে এসে এই জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা খুব সহজ ছিলো না।
তিনি বলেন, যেহেতু স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পেশায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ থাকে, তাই আমার কাছে এর বিকল্প ছিলো না।
অন্য আর কোথাও চাকরিতে নিযুক্ত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোথাও চাকরি করছি না। কারণ আমার স্বপ্ন কেবলই বিসিএস কেন্দ্রিক। শুধু বিসিএস নিয়েই ছিলাম, আছি। আগেই বলেছি, আমার বাবা কর্মকার। অনেকেই আমাদের একটু নিম্ন চোখে দেখতো। এসব নিয়ে মনে অনেকটা চাপা ক্ষোভ ছিলো। অন্যদিকে, আমার চলার পথে আলো ধরেছে আমার বড়দা। এই সবকিছুই আমার অনুপ্রেরণা। সব মিলিয়ে নিজের অনুপ্রেরণা নিজের কাছেই খুঁজে নিতাম। পরম সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, প্রথম বিসিএসেই সফলতা এনে দিয়েছেন।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, লক্ষ্য স্থির করুন, সময়কে কাজে লাগান, প্রতিকূলতা থেকে মনে শক্তি যোগান। ধৈর্য, চেষ্টা, রুটিন ও জেদ- এই চারটা জায়গায় যে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবে; সফলতা তার কাছে এসে ধরা দেবে। স্বপ্ন যদি হয় বিসিএস, পড়ার টেবিলের সামনে বড় করে লিখে রাখুন ‘‘আমি ক্যাডার হবো, আমিই পারবো’’। শুভ কামনা সকলের জন্য।