০৩ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৫৩

৪০তম বিসিএস: প্রথম হওয়া চার প্রকৌশলীর গল্প

৪০তম বিসিএস: প্রথম হওয়া চার প্রকৌশলীর গল্প
প্রথম হওয়া চার প্রকৌশলী

সদ্য প্রকাশিত ৪০তম বিসিএসে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার। প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, আবগারি ও শুল্ক ক্যাডারে প্রথম হওয়া চারজনই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। দুজন পাস করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে। আর দুজন পাস করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে।

প্রশাসনে প্রথম হয়েছেন কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ করছেন। পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়া কাজী ফাইজুল করিম পাস করেছেন কুয়েটের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে। বুয়েটের পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল ইসলাম পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন। আবগারি ও শুল্ক ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন।

আরও পড়ুন: এসএসসিতে ফেল, ট্যাক্স ক্যাডার হলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল

পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম মোহাইমিনুল ইসলাম শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে বুয়েটে ভর্তি হন এই তরুণ। বাবা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আর মা আলপনা বেগম গৃহিণী। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়।

২০১২-১৩ সেশনে বুয়েটে পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। শুরু থেকেই মোহাইমিনুলের চিন্তা ছিলো পাশ করে দেশে থেকে কোন চাকরি করবেন। পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নেবেন। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি।

স্নাতক শেষে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন মোহাইমিনুল। পুরোদমে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করার আগে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন নিয়ে কয়েক দিন ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। এভাবে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে তাঁর একটা ধারণা হয়েছে। এরপর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তিনি।

শুরু থেকেই পররাষ্ট্র ক্যাডার তার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। বিসিএসের প্রথম দুই স্তরে পাস করে তার মনে হলো, ভাইভার প্রস্তুতি ভালোভাবে না নিলে পছন্দের ক্যাডার ফসকে যেতে পারে। তাই ভাইভার জন্যও সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছেন।

আবগারি ও শুল্ক ক্যাডারে প্রথম হওয়া সাকিবের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তবে বাবার চাকরির সুবাদে পড়াশোনা করেছেন যশোরে। ২০০৯ সালে যশোরের পুলিশ লাইনস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। আর ২০১১ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিভাগে।

আরও পড়ুন: তর্কঘর থেকে বিসিএস ক্যাডার ওরা ৬

বাবা সরকারি চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকে আশপাশে ক্যাডার কর্মকর্তা দেখে তখন থেকেই সাকিবের মনে ক্যাডার হওয়ার বাসনা জাগে। বুয়েট থেকে বিএসসি পাস করার পর সেই বাসনাকে পূর্ণ করতে উঠে পড়ে লাগে। বন্ধুদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে বিদেশ গিয়েছেন। তাদেরকে দেখে একটু ইচ্ছা জাগলেও শেষ পর্যন্ত বিসিএসের চেষ্টা করবেন বলেই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

সাকিব সবচেয়ে বেশি প্রেরণা পেয়েছেন মা-বাবার কাছ থেকে। বুয়েট ক্যাম্পাসের বড় ভাই যাঁরা বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত, তাঁরাও অনুপ্রাণিত করেছেন। সাকিব বলেন, ‘আগে একটা ট্রেন্ড ছিল, অনেকে বিদেশ গিয়ে স্থায়ী হতে চাইতেন। কিন্তু বিসিএসের মাধ্যমে ভালো চাকরি ও সম্মান পাওয়া যায় বলে এখন ট্রেন্ড বদলেছে।’

জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবা বিএম সবুর উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক। মা সামসুন্নাহার গৃহিণী। ঢাকার দনিয়ার এ কে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে।

বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষে করে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিলো। কিন্তু বেশি দিন ভালো লাগল না। আত্মীয়দের অনেকেই সরকারি চাকরিজীবী তাই শেষ পর্যন্ত বিসিএসের দিকেই ঝুঁকেছেন তিনি।

২০১৮ সালে সবকিছু বাদ দিয়ে ৪০তম বিসিএসের জন্য পড়াশোনা শুরু করে। প্রিলিমিনারি শেষে লিখিত পরীক্ষায়ও টিকে গেলো। করোনার কারণে বারবার ভাইভা পরীক্ষা পেছানোতো একপর্যায়ে হতাশা হয়ে যান। বসে না থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হয়ে গেলেন। এখন সেখানে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। বিসিএসের ফল হাতে পেয়েতো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা।

কাজী ফাইজুলের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। বাবা আফতাব উদ্দিন ব্যবসায়ী। মা কাজী মীর জাহান বেগম (অব.) ব্যাংক কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন: স্বামী প্রশাসনে ৭ম, স্ত্রী পুলিশ ক্যাডার

পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি নিজের মতো বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ৪০তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেন ফাইজুল। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি হলো। কাছাকাছি সময়ে সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদেও চাকরি পেলেন তিনি। সেই হিসেবে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দিলে এটি হবে তাঁর ৪ নম্বর চাকরি।

ফাইজুল ঠিক করেছিলো বিসিএস একবারই দেব। আর পুলিশ ক্যাডারই ছিল তার প্রথম পছন্দ। এই লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনা করেছে। আত্মবিশ্বাসও ছিল। তাই ৪০–এর পর আর কোনো বিসিএসে আবেদন করিনি। অবশেষে তার স্বপ্ন সত্যি হলো।