মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়ে আপেল চাষ করছে প্রণব
মেডিকেল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা শেষ করে প্রণব হালদার বাড়িতে আপেলের বাগান করেন। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধুভাঙ্গা গ্রামের প্রণব হালদার জেলায় প্রথম আপেল চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনটি জাতের ৬০টি চারা দিয়ে পরীক্ষামূলক আপেলের চাষ শুরু করে তাতেই সফলতা ধরা দিয়েছে তার হাতে। ভবিষ্যতে বাগান বড় করার স্বপ্ন দেখছেন প্রণব। জেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
প্রণব হালদারের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধুভাঙ্গা গ্রামে। সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রণব হালদারের বাড়ির সামনে ৫৫ শতাংশ জমিতে আপেলসহ মিশ্র ফলের বাগান। সেখানে ৬০টি আপেলগাছ রয়েছে। বেশির ভাগ গাছেই ফুল ধরেছে। অনেক গাছে ফলও এসেছে। আপেলের পাশাপাশি বাগানে বেদানা, আলুবোখারা ও আমগাছ লাগানো হয়েছে। বাগানে ফুলের পরাগায়নের জন্য বাড়িতে মৌমাছির চাষ করা হয়েছে।
আপেল চাষি প্রবণ হালদার জানান, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি। প্রণব কয়েক বছর আগে সবুজ বাগান সোসাইটি নামে একটি বাগান সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রথম জানতে পারেন বাংলাদেশেও আপেল চাষ করা সম্ভব। আমাদের দেশে ফলবে এমন কিছু আপেলের জাত এরই মধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের একটি জাত রয়েছে। যা আমাদের দেশে হরিমন ৯৯ আপেল নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ শতাংশ শিক্ষক ছুটিতে
প্রণব বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হরিমন ৯৯ আপেল জাতের ৫০টি চারা সংগ্রহ করি। উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষামূলক আপেল চাষ করা। গরম এলাকার আপেল চাষ গবেষক ভারতের পারভেজ নওশাদ ও হরিমন শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁদের পরামর্শ নিয়ে চারা নার্সিং করে বড় করি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রণব ভারতের হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে হরিমন শর্মার আপেল বাগানে প্রশিক্ষণের জন্য যান। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফলবে আরো দুইটি জাতের চারা ‘আনা (ইজরায়েল)’ ও ‘ডরসেট গোল্ডেন (বাহামাস)’ সংগ্রহ করেন।
২০২০ সালের এপ্রিলে তিনটি জাতের ৬০টি চারা বাড়ির পাশের জমিতে রোপণ করেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গাছে ফুল আসা শুরু করে। বর্তমানে গাছে ছোট আপেল ও ফুল আছে। ফল সংগ্রহ করা যাবে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত।
আপেল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রণব বলেন, জমিতে আপেলের চারা রোপণের জন্য ২×২×২ ফুট গর্ত তৈরি করে জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তে ১৫ দিন রেখে দিয়ে চারা গুলো রোপণ করা হয়।
সঙ্গে অন্য কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। আপেল গাছ আলো, বাতাস পূর্ণ এবং উঁচু জমিতে ভালো হয়। বেলে দো-আঁশ মাটি আদর্শ হলেও অন্য মাটিতে ও রোপণ করা যায়। তবে আপেল গাছ কোনোভাবেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
প্রণব হালদার আরও বলেন,পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছি এখন। কয়েক বছর পর্যবেক্ষণ করব। এরপর যদি লাভজনকভাবে আপেল ফলাতে সক্ষম হই তাহলে বাগান সম্প্রসারণ করতে চাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বিগবিজয় হাজরা বলেন, প্রণব হালদারের আপেল বাগানে গিয়েছি। সাধারণত আপেল চাষ হয় শীতপ্রধান দেশে। তবে প্রণবের আবাদ করা জাতের চারাগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। দুই বছর বয়সে গাছে ফুল ও ফল এসেছে। গাছগুলোর যখন পরিণত বয়স (পাঁচ বছর) হবে, তখন ফলন বৃদ্ধি পাবে।