৬৪ জেলা ঘোরার রোমাঞ্চকর গল্প শোনালেন ঢাবি ছাত্র
আমার দেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটি জেলা ভ্রমণ করার যে স্বপ্নটি ছিলো অবশেষে পূর্ণ হলো। একদম ছোট থেকে যেই যাত্রার শুরুটা হয়েছিল, তা একদিক থেকে দারুণ এক মোড়ে উপস্থিত হলো। এর মানে কখনোই এটি নয় যে দেশের বিভিন্ন অংশে ঘোরা কমে যাবে, দেশের আনচে-কানাচে ঘুরতে থাকা চলতে থাকবে। দেশকে দেখার নেশা এখনো একটুও কমেনি। এই দারুণ মোড়ে এসে কিছু স্মৃতি রোমন্থন করতে ইচ্ছে হলো... সেই শুরু থেকে...
১. যাত্রা শুরু
নিজের জেলা যশোরের বাইরে প্রথম ঘুরতে যাওয়ার যে হালকা স্মৃতি মনে পড়ে, তা ঢাকার। মামা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। মুহসীন হলে থাকতেন। এটুকু মনে আছে ঢাকায় এসে মুহসীন হলে ছিলাম। হলের রুমে জানালার পাশে বসে বসে আকাশ দেখতাম। মামাই মূলত আমার মধ্যে ভ্রমণের বীজ বুনেছেন। গাছ যখন হয়েছে, সেটিকে পানি দিয়ে কিছুটা যখন বড় করেছেন তখনই নিজে নিজে ঘুরতে শুরু করেছি। (বাড়ি থেকে ছোটবেলায় ঢাকাই আমার প্রথম বাস ভ্রমণ। মামার শ্বশুর বাড়ি জামালপুর যাওয়ার জন্য প্রথম ট্রেনে ওঠা, পটুয়াখালী থেকে ঢাকা রুট হলো প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ। আন্তর্জাতিক আয়োজনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে কলকাতা থেকে হায়দ্রাবাদে যাওয়া প্রথম বিমান ভ্রমণ। অবাক করা বিষয় হলো দেশের বাইরে ৩০ বারের অধিক বিমানে ভ্রমণ করলেও দেশে ডমেস্টিক কোন ফ্লাইটে উঠিনি!)
আমি ছোটবেলা মামার কাছে থাকতাম, মামার সরকারি চাকরির কারণে বিভিন্ন জেলায় বদলি হতে হতো। আমিও সাথে যেতাম। নতুন জেলায় নতুন স্থান দেখে অনেক ভালো লাগতো, সেখান থেকেই আগ্রহের শুরু।
২. বইয়ের রাজ্যে ঘোরা
ছোটবেলায় আমার বই পড়ার শখ তৈরি হয়। নেশার মতো হয়ে গিয়েছিলো। গল্প, উপন্যাস, কবিতা; যা সামনে পেতাম পড়তাম। স্কুলে আবার ভালো রেজাল্ট করায় এই বই পড়তে কেউ মানাও করতো না।। বরং মামা বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করতো। ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিতো গল্প উপন্যাসের বই। ছোটবেলায় এতো বেশি বই পড়তাম! এখনো অবাক হই। আমার বিশ্বাস বইয়ের রাজ্যই আমাকে সত্যিকারের রাজ্য দেখতে উদ্ভুদ্ধ করেছে। বইয়ের চরিত্র যখন বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়াতো, নিজেকেও তার জায়গায় কল্পনা করতাম।
৩. স্কুল-কলেজে
পুরো স্কুলজীবন আমি মামার বাসায় থেকেছি। এই সময়ে ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, মেহেরপুরে অনেক ঘুরেছি। পরবর্তীতেও এই জেলাগুলোতে গেলেও সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো অনেক মনে পড়ে। মামা বছরে কয়েকবার নতুন কোন স্থানে ঘুরতে যেতো আমিও সাথে যেতাম এবং ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলেই লাফিয়ে উঠতাম। ছোট বেলায় শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে অনেক ভালো লাগতো। কলেজে উঠে যেন নতুন পাখা পেলাম। মুভির রাজ্য আবিষ্কার করতে শুরু করলাম, টাকা জমিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। স্কুল জীবনে আমার যেমন ভালোবাসা ছিলো বই, কলেজ লাইফে এসে সেটি হয়ে যায় মুভি। মুভির মধ্যে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতাম; যা এখনো করি। কলেজ লাইফের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছি অনেক।
৪. ডানা মেলা
কলেজ লাইফেই ভ্রমণের পাখনা গজালেও ডানা মেলে ওড়ার সময়টি হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। ঢাকা নিয়ে এতো ভালোলাগা যে, এই শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরেও শখ মিটতো না। বিভিন্ন বন্ধুদের সার্কেল, কাজের সুত্রের সার্কেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে ঘোরাঘুরি কখনো থেমে থাকেনি। ডানা মেলে বিভিন্ন দেশেও উড়ে গিয়েছি। কি কি দেখেছি তার হিসাব না দিয়ে এটি বলতে পারি যে, প্রতিটি ভ্রমণই শিখিয়েছে অনেক।
আরো পড়ুন: শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে চাই
৫. বন্ধুরা
আমার স্কুল বা কলেজের বন্ধুদের সাথে ঘুরেছি, কাজের ও অর্গানাইজেশনের বন্ধুদের সাথে অনেক ঘুরেছি। তবে সবচেয়ে দারুণ দারুণ সব ট্যুর দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আমাদের ছোট্ট গ্রুপটির সাথে। ইউএনএইচসি- নামের আমাদের এই গ্রুপের সবাই মিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছি। ক্রেজি ক্রেজি সব ট্যুর দিয়েছি।
৬. বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বিশাল সমুদ্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে চান্স পাওয়াকে আমি আমার জীবনের অন্যতম সেরা একটি ঘটনা বলি। কারণ একদিক থেকে যেমন সাংবাদিকতা করে জীবনকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দারুণ কিছু ঘটনা ঘটিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায়। প্রথম দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংগঠনে কাজ করে তৃতীয় বর্ষে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ প্রতিষ্ঠা এবং দারুণ দারুণ সব আয়োজন ও অর্জন। সাংবাদিকতা ও সংগঠন করা আমার মধ্যে যে সত্ত্বা তৈরী করেছে তারই হয়তো ফলাফল নিজের প্যাশনকে প্রফেশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ট্রাভেল স্ট্যার্টআপ নিয়ে কাজ শুরু করা; তাও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই!
৭. দেশের সীমানা পেরিয়ে
দেশে ঘোরাঘুরির প্রতি ভালবাসারই একটি বহিঃপ্রকাশ হলো অন্য দেশে ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ। আমার প্রথম দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া ভুটান ও ভারতের দার্জিলিং। পরবর্তীতে ভারতের অনেকগুলো প্রদেশে ঘুরছি, আমাদের দেশের আশেপাশের অনেকগুলো দেশে গিয়েছি। সংখ্যা বেশি না হলেও এই সংখ্যা বাড়তে খুব বেশি দেরী হবে না আশা করি। দেশের ৬৪টি জেলা থেকে শুরু হয়েছে, এর শেষ কোথায় হবে তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
৮. আন্তর্জাতিক আয়োজনে দেশের প্রতিনিধি
ছাত্র অবস্থাতেই বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে সহায়তা করেছে আমার বিভিন্ন কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস। দেশের বাইরে বেশিরভাগ গিয়েছি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। সাথে ঘোরা তো থাকেই। অনেক সময় দেখা গেছে প্রোগ্রাম ৫ দিনের, আরও ৩-৫ দিন এক্সট্রা থেকে ঐ দেশের বিভিন্ন অংশ ঘুরে বেড়িয়েছি।
৯. একটি গভীর রাত
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছি, পত্রিকায় কাজ করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন পরিচালনা করছি, কর্পোরেটেও নানা কাজ করছি। ভবিষ্যতে কোন দিকে যাবো তখনো ঠিক করিনি। মুহসীন হলের ২৪৮ নম্বর রুমে একদিন রাতে নিজে নিজেই ভাবছিলাম নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তখনই ভাবতে ভাবতে একসময় মনে হলো নিজের প্যাশনকেই প্রফেশন হিসেবে নিতে পারি। রাতে আর ঘুম হলো না, সেই রাতেই ঠিক করে ফেললাম- ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রি নিয়েই কাজ করবো। ট্রাভেলিং পেশায় আসা পর থেকেই মনে মনে ৬৪ জেলা ঘুরে দেখার আগ্রহ তৈরী হয়। শুধু বিভিন্ন জেলায় যাওয়া নয়, প্রকৃতপক্ষে ঘুরে দেখা।
১০. পরিবর্তনের স্বপ্ন
কয়েকটি দেশে ঘুরতে গিয়ে এবং বিভিন্ন দেশের পর্যটনকে এক্সপ্লোর করতে গিয়েই আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টর নিয়ে কাজের অনেক সুযোগ আছে। ফলে যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি সবসময় মাথায় ঘুরেছে নতুন নতুন আইডিয়া, নানা পরিবর্তনের চিন্তা। যেহেতু দেশের প্রতিটি প্রান্তই দেখার সুযোগ হলো, এখন ক্রমে ক্রমে আইডিয়াগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পর্যটনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও বেশি উদ্যমে এগিয়ে যাবো।
১১. নেশা যখন পেশা
ভ্রমণ করা আমার কাছে নেশার মতো। জীবনে এখন পর্যন্ত সিনেমা দেখা আর ভ্রমণ আমার নেশা৷ ভ্রমণ করতে যেমন ভালো লাগে, অন্যদেরকে ভ্রমণ বিষয়ে সহায়তা করতেও ভালো লাগে। এই পেশায় এসে তাই নানাভাবে বিভিন্ন প্রবলেমের সল্যুশন খোঁজার চেষ্টা করছি এবং সেগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে কোটি মানুষকে সহায়তা করতে চাই।
১২. অভিজ্ঞতা অর্জনের যাত্রা
আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন অভিজ্ঞতাপ্রেমী। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিতে সবসময় ছুটে চলি। দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেও নানা রকম অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই অভিজ্ঞতা সংগ্রহের যাত্রাটা ভালোই দীর্ঘ ছিলো, অনেক কষ্টেরও ছিলো, ঘোরাঘুরিকেই গুরুত্ব দেওয়াতে অনেক সমস্যা তৈরী হয়েছে; কিন্তু দিনশেষে মনের মধ্যে প্রশান্তি ছিলো, যেকোন সমস্যা সমাধানের পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা ছিলো। ক্রমে ক্রমে বিভিন্ন অভিজ্ঞতাগুলো নতুন পেইজ, ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
১৩. কর্পোরেট ক্যারিয়ার ও ভ্রমণ
নিজের স্ট্যার্টআপকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে একজন উধ্যোক্তাকে নানারকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমাকেও কর্পোরেট চাকরির দ্বারস্থ হতে হয়েছিলো। সপ্তাহে ৫-৬ দিন অফিস করে ঘোরাঘুরি কিছু কমলেও থেমে যায়নি। পরবর্তীতে কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে নিজের স্ট্যার্টআপে কাজ করার পর থেকে ঘোরাঘুরির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
১৪. একলা চলো রে
নতুন জায়গায় ঘুরতে, নতুন পথে হাঁটতে সবসময় বন্ধুবান্ধব বা সঙ্গী পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক মেনেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছি। অনেক সময় বন্ধুদের সাথে, কিছু সময় সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে ঘুরেছি কিন্তু একা একা যখন বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে গিয়েছি তখন অনেকেই জানতে চেয়েছে, একা ঘুরলে কি মজা পাওয়া যায়? এক্ষেত্রে আমার একটাই উত্তর- একা ঘুরতে গেলে নিজেকে ও বিভিন্ন স্থানগুলোকে যেভাবে কাছে থেকে আবিষ্কার করা যায়, তা অন্য কোনভাবেই সম্ভব নয়৷ একা ঘোরা আমার কাছে অনেক সময় মেডিটেশনের মতো লাগে।
১৫. মুক্ত পাখির স্বপ্ন
আগেও ঘুরেছি, তবে ২০২১-২২ সালে যখন ঘুরেছি তখন নিজের কাছে নিজেকে মুক্ত পাখির মতো মনে হয়েছে। যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াচ্ছি, আকাশটাকে আরও সুন্দর লাগছে যেন, প্রকৃতি আরও বেশি যেন মুগ্ধতা ছড়ায়৷ ফলে এই সময়ে অনেক অনেক ঘুরেছি, নতুন সব অভিজ্ঞতা নিতে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে গিয়েছি। গত বছরের শেষের দিকে হিসেব করে দেখলাম আর কয়েকটি জেলা ঘুরলেই ৬৪ জেলা ঘোরা হয়ে যাবে। তখনই ঠিক করি ২৬ মার্চ জন্মদিনের আগেই বাকি সবগুলো জেলা ঘুরে ফেলবো। ৫ মার্চ, ২০২২-এ এসে ৬৪ জেলা ঘোরার ইচ্ছাপূরণ হলো।
১৬. সংস্কৃতি ও প্রকৃতিতে মুগ্ধতা
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া'র বাংলাদেশের নানা প্রান্তে নানা রঙ, নানা ভাষা, নানা সংস্কৃতি। ফলে একেক প্রান্তে গেলে একেক রকম অভিজ্ঞতা হয়। আমিও নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধানে নতুন কোন জেলায় ছুটে চলি। বাংলাদেশের সৌন্দর্যের কথা হয়তো সবাই শুনেছে, পড়েছে। কিন্তু সেই সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পারাকে নিজের জীবনের সেরা অর্জন বলবো।
১৭. ঐতিহ্যের কাছাকাছি
দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য আমাকে বরাবরই টানে, ঐতিহাসিক নানা ঘটনা মুগ্ধ করে। কোন জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়িতে আগে যখন ঘুরতে যেতাম তখন একরকম লাগতো আর এখন যেন অনুভব করতে পারি। আমাদের পুরনো ঐতিহ্যকে অনুভব করতে পারার এই অনুভূতি অকল্পনীয়। ঐতিহাসিক যেকোন স্থানে এখন গেলে যেনো এক প্রাচীন জনপদকে খুঁজে পাই, আমরা যে পৃথিবী ও সময়ের কাছে কতটা ক্ষুদ্র তা অনুভব করি।
১৮. গ্রামের স্নিগ্ধতা
গ্রাম যে বাংলাদেশের কতো বড় সম্পদ তা আমরা হয়তো এখনো উপলব্ধি করতে পারিনি। আপনার বাড়ি যদি উত্তরবঙ্গের কোন গ্রামে হয় তাহলে আপনি দক্ষিণ বঙ্গের গ্রামে গেলেও ব্যতিক্রমী নানা কিছু পাবেন, নতুন সব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর এতো সুন্দর সুন্দর যে গ্রাম আছে তা আসলে আমিও না দেখার আগে বিশ্বাস করিনি। এ দেশের গ্রাম পর্যটনকে এগিয়ে নিতে পারলে সারা পৃথিবীর কাছে আমরা এদেশের প্রতি আলাদা আকর্ষণ তৈরি করতে পারব।
১৯. বাংলার সংস্কৃতি ও মানুষ
একটি নতুন স্থানে গেলে আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পাশাপাশি ঐ এলাকার সংস্কৃতি ও মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের সংস্কৃতির বৈচিত্র্য আমাকে সবসময় অবাক করেছে। ঘুরতে গিয়ে কত শত মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, বন্ধুত্ব হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। আমি এই ভ্রমণে তাই অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অনেক মানুষও সংগ্রহ করেছি।
২০. বাংলার স্বাদ
দেশের যে জেলাতেই গিয়েছি একটি বিষয় অবশ্যই করেছি। সেটি হলো- সেই জেলার নতুন নতুন সব খাবারের স্বাদ নেওয়া। এই অন্বেষণে যে কত শত খাবার খেয়েছি তা গুনে শেষ করা যাবে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের স্বাদ, ধরণ, উপকরণের বৈচিত্র্য খাদ্যপ্রেমি হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেছে। সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও বাংলার নানা প্রান্তের খাবারের স্বাদ ভুলবো না।
২১. যানবাহনের বৈচিত্র্য
এতো রকম বৈচিত্র্যময় যান চলাচল বাংলাদেশের! সত্যিই অবাক করার মতো। বাংলাদেশে চলে এমন কোন যানবাহন নেই যেটিতে চড়িনি। প্রত্যেক জেলায় চলাচলের যে ব্যতিক্রমী সব ব্যবস্থা তা একমাত্র অনেকগুলো জেলা ঘুরলেই বোঝা যায়। একটি জেলা কতটা উন্নত হয়েছে তা সেই জেলার যানবাহন দেখেই বলে দেওয়া যায়। আমার ক্ষেত্রে নানা রকম যানবাহনগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর চালকদের জন্য। অনেকেই আমার জন্য নতুন জেলায় গাইডের কাজ করেছে এবং এরকম অনেকজনের নাম্বার এখনো ফোনবুকে পাওয়া যাবে।
২২. চাইলেই সম্ভব
দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের ৬৪টি জেলা শুনলে অনেক বড় মনে হলেও চেষ্টা করলেই ঘুরে দেখা সম্ভব। স্কুল-কলেজ জীবনে শুরু করতে পারলে ভালো, তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শুরু করলে যে কারো পক্ষেই সম্ভব। একটু আগে থেকে প্ল্যান করে নতুন কোন জেলায় গেলে খুব একটা খরচও হয় না। লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে, হালকা খাওয়া-দাওয়া করে এবং স্থানীয় কারো কাছ থেকে প্ল্যানিং রিচেক করে নিলে দেখবেন খরচ একদম কম। সারাদেশ ঘুরে দেখতে হলে ট্যুরিস্টের মতো চললে হবে না ট্রাভেলারের মতো করে চলতে হবে। তাহলেই সম্ভব।
২৩. প্ল্যানিং ইজ এভরিথিং
বাংলাদেশে যেহেতু লোকালি ঘোরাফেরা করা কিছুটা জটিল তাই প্ল্যানিং করা খুব জরুরি। সবচেয়ে বেশি সহায়তা করবে গুগল ও ট্রাভেল বাংলাদেশসহ ভ্রমণ বিষয়ক কিছু ওয়েবসাইট। এ ছাড়া ৬৪ জেলা ভ্রমণ বিষয়ক কয়েকটা বই আছে, সংগ্রহ ক,রে নিতে পারেন। স্থানীয় পরিচিত কেউ থাকলে তার সাথে ঘুরতে গেলে সবকিছু সহজ হয়, স্থানীয় কারো সাথে ঘুরতে যেতে না পারলেও স্থানীয় কারো কাছ থেকে সাহায্য নেবেন; সকল সমস্যার সমাধান সহজ হবে।
২৪. সেফটি ও সিকিউরিটি
অনেকেই মনে করে দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানো হয়তো তেমন সেইফ না। একদমই সত্য নয়। স্থানীয় মানুষজন আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। আমি নিজে চেষ্টা করেছি এমনভাবে ঘোরার প্ল্যানগুলো করার যাতে করে নিজের সেফটি নিয়ে তেমন চিন্তা করতে না হয়। আর একথা বাস্তব যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এলাকাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা এখন অনেক জোরদার।
২৫. নতুন সব স্নপ্নের উঁকি
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে নতুন নতুন অনেক স্বপ্ন বুনেছি। এখন সময় এই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার। সকলের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। দেশের পর্যটনকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে নতুন নতুন নানা উদ্যোগ নিয়ে, নানা সমস্যা সমাধান নিয়ে হাজির হবার চেষ্টা করবো। সকলের সহযোগিতা পেলে এই স্বপ্নগুলোও ইনশাল্লাহ বাস্তবায়ন হবে।
২৬. নিজেকে খুঁজে ফেরা
আমি ১০০ ভাগ বিশ্বাস করি এদেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে নতুন আমিকে খুঁজে পেয়েছি। প্রতিদিন নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি এবং সারা বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখা শিখেছি। অন্যরা কি ভাবছে তার থেকে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমি নিজেকে নিয়ে কি ভাবছি এবং নিজের উন্নয়নে কতটা কাজ করছি। পরিবর্তন তো নিজের থেকেই শুরু করতে হবে।
২৭. কৃতজ্ঞতা
আমার ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে শুরু থেকেই আমার মামা সবসময় অনেক অনেক সহযোগিতা করেছেন। ছোট থেকে যখন ঘুরতে চেয়েছি বা যখন ট্রাভেলিং নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি সবার আগে সাপোর্টার হিসেবে পেয়েছি মামাকে। অফিশিয়ালি ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই তারপরও মামার প্রতি কৃতজ্ঞতার আসলে কোন শেষ নেই। আমার বন্ধুরা সাথে ঘুরতে গিয়েছে, অনুপ্রেরণা দিয়েছে; সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের কাছ থেকে সহায়তা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি, কৃতজ্ঞতা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সেই সকল মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা যারা অচেনা-অজানা আমাকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে সামনের দিকে এগিয়ে চলার পথ মসৃণ করে দিয়েছেন।
২৮. এ যাত্রার শেষ নেই
দেশের ৬৪ জেলার বেশিরভাগ জায়গাতে গেলেও আরও অনেক জায়গায় ঘুরতে যেতে চাই। যে স্থানে সৌন্দর্য শীতকালে দেখেছি, বসন্তে আবার দেখতে চাই; হয়তো এক জেলার কয়েকটি খাবার খেয়েছি, বাকিগুলোরও স্বাদ নিতে চাই। পথে-প্রান্তের অভিজ্ঞতা নেওয়ার যাত্রায় শেষ বলে কোন কথা নেই। দেশের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে দেখেছি; এবার পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দেখতে চাই। সবাই দোয়া করবেন।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)