গৃহবধূ হাফছার সফল নারী উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
২০২০ সালে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অল্প পুজি নিয়ে কয়েকটি থ্রি-পিস কিনে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন হাফছা। নাম দেন ‘লোহাগাড়া অনলাইন শপ’। এক বছরের মধ্যে হাফছা এখন সয়ং সম্পূর্ণ। তার মাসিক আয় এখন ২০ হাজার টাকা। এক বছরে পুঁজি রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকারও বেশি।
বলছিলাম চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরবাদ ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তা গৃহীণী হাফছা বেগমের কথা। নিজে অনলাইন থেকে কেনাকাটা করতে খুব ভালবাসতেন।
এসএসসি পরিক্ষার পর একই উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের প্রবাসী তারেকের সাথে বিয়ে হয়ে গেলে সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাফছা।
হঠাৎ একদিন অনলাইন ব্যবসা করার কথা মাথায় আসলে তার বড় ভাইকে বিষয়টি খুলে বলেন। শুরুতে অল্প পুঁজি দিয়ে ঢাকা থেকে কয়েকটি পিস থ্রি-পিস কিনে নিজের ‘লোহাগাড়া অনলাইন শপ’ নামক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন।
এরপর ধাপে ধাপে একটি দুটি করে অর্ডার আসতে থাকে। এখন তার অনলাইন শপে প্রতিদিনই ক্রেতা বেড়ে চলেছে। ভোক্তাদের আকর্ষণ ও পছন্দ অনুযায়ী পণ্য এনে থাকেন।
পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, থ্রি-পিস ও বেডসিট সহ আরও অনেক পণ্য। অর্ডারকৃত পণ্য হোম ডেলিভারির মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে উপজেলার কর্মরত বেশিরভাগ ডাক্তার, নার্স, প্রবাসীর স্ত্রীসহ পরিচিত আত্মীয়, কলেজের শিক্ষক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
শুধুমাত্র সামাজিক মাধ্যমকেই কাজে লাগিয়ে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যান্য নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাদের আর্থিক সচ্ছলতার পথকে সুগম করছেন ।
বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ৯ জন নারী কর্মচারী কমিশন ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন ৷ তাদের কাজ অর্ডারকৃত পণ্য হোম ডেলিভারীর মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়া।
হাফসার স্বামী তারেক প্রবাস থেকে চলে এসেছেন কয়েক মাস আগে। এখন দেশে ছোটখাটো ব্যবসা করেন। পাশাপাশি স্ত্রী হাফছা বেগমকে অনলাইন ব্যবসায় সহযোগিতা করেন।
নারী উদ্যোক্তা হাফছা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শুরুতেই পরিবারের সবাই আমাকে সাপোর্ট ও সহযোগিতা করেন। তাদের সহযোগিতা ছিল বলেই সফলতার দারপ্রান্তে আসতে পেরেছি। বিশেষ করে আমার বড়ভাই মিনহাজ আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন।’
নারীদের নিজের যোগ্যতা ও পরিচিতির জন্য স্বল্প বিনিয়োগে তার মতো অনলাইন ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে হাফছা বেগম বলেন, ‘পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে লেগে থাকলে যেকোনো কাজে সফলতা আসবেই। আমি প্রথম থেকেই কিছু একটা করার চেষ্টায় থাকায় আজ সফলতা পেয়েছি।’
‘পরনির্ভরশীল হতে হয় না এখন আর। আমার কাছ থেকে থেকে দেখে উপজেলার অনেক নারী এই ব্যবসায় উৎসাহীত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে আমার মত বেশ কয়েকজন অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছে। তারা প্রথমে আমার কাছ থেকে কাপড় কিনে ব্যবসা শুরু করেছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা সুমাইয়া আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘হাফছা বেগমের মত নারী উদ্যোক্তারা চাইলে গ্রামের অসচ্ছল নারীদের নিয়ে কাজ করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলায় যারা নতুন নারী উদ্যোক্তা আছেন তারা যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। লোহাগাড়া তথ্যকেন্দ্র থেকে সবসময় সহযোগিতা করা হবে।’