০৭ আগস্ট ২০২১, ১১:১৭

গুগলে চাকরি পেলেন ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী

সাদমান সাকিব  © টিডিসি ফটো

টেক জায়ান্ট গুগলের পক্ষ থেকে চাকরির অফার পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের এক শিক্ষার্থী। প্রতিবছরই গুগল, মাইক্রোসফট, আমাজন ইত্যাদি বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে চাকরি হচ্ছে দেশসেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের।

এ বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে গুগল থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরির অফার লেটার পেয়েছেন সাদমান সাকিব নামে ওই শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের (ব্যাচ-২১) শিক্ষার্থী ছিলেন সাদমান সাকিব। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে কিন্তু বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন নটরডেম কলেজ থেকে। 

তিনি তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, গুগল আমার জন্যে একটা স্বপ্নের চাকরি ছিলো। ভার্সিটি জীবনের শুরু থেকেই আমি গুগলের জন্যে ফ্যাসিনেটেড ছিলাম, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। 

নিচে তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“Alhamdulillah! After tons of rejections, from the very initial stages to the very last stages of interviews, finally, got an offer from the Google! If everything goes well, I will be joining ChromeOS team soon!(*) My gratitude goes to the Almighty, my family and friends, my better half, and all of my good wishers!

সেই ২০১৫ সাল থেকে একটা ইচ্ছা (স্বপ্ন বলা যাইতে পারে) বুকে নিয়ে ডিপার্টমেন্টে আসছিলাম। কীভাবে সেই পথে হাটা লাগবে, সে ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না। প্রোগ্রামিং সম্পর্কে কোনো ধারণাই যার ছিলো না, সেই মানুষটা স্বপ্ন ঠিকই বুকে নিয়ে চলে আসছিলো। ভার্সিটি জীবনে আমার প্রথম ক্লাসের দিন একটা ছবি তুলছিলাম ব্যাচের সবাই মিলে। ছবির পিছনেই গুগলের একটা ব্যানার ছিলো, ছবি তোলার পর বাসায় এসে আব্বুকে দেখানোর পর আব্বুই এটা প্রথম খেয়াল করে। এরপর থেকে, মাঝেমধ্যেই রাতের বেলা যখন আমি নিজের মত প্র‍্যাক্টিস করতাম, আব্বু এসে দেখে যাইতো। একদিন বলেই ফেললো, ‘এই দেশ থেকে তো মনে হয় গুগলে যায় অনেকে। কম, কিন্তু যায় মনে হয়। তোর পক্ষেও কি যাওয়া সম্ভব হতে পারে?’

মানুষটা ভয়ানক বিনয়ী ছিলেন। আল্লাহ পাক উনাকে জান্নাতবাসী করুক, আমীন। আমি সেদিনই বুঝছিলাম, আমি ভবিষ্যতে কই যাবো কি করবো আমি জানিনা, সেটা আল্লাহ পাক ঠিক করবেন কিন্তু এই একটা জায়গায় আমার চেষ্টা করা লাগবে।

আমি কোনকিছুর জন্যে এতো পরিশ্রম করিনাই যতটা প্রোগ্রামিং এবং প্রবলেম সলভিং নিয়ে করছি। Noob থেকে Average, Average থেকে above average হতে জীবনের অনেকগুলা সময় চলে গেছে। শিখতে পারছি, জীবনে একটা কিছু মন থেকে চাইলে সেটার জন্যে তোমার নিজেকেই কাজ করতে হবে। অন্য কেউ হেল্প করবে না, করলেও খুব একটা কাজের কাজ হবে না।

ভার্সিটির ৩য় বর্ষে তখন। জীবনে প্রথমবার আইসিপিসি রেজিওনালে অংশ নেয়ার সুযোগ পাই। কিন্তু ততদিনে আব্বা চলে গেছেন। মানুষটার খুব বেশি ইচ্ছা ছিলো অন্ততঃ একটা আইসিপিসিতে আমাকে অংশ নিতে দেখার। দুনিয়ার কোনকিছুই ভালো লাগতো না। সবকিছু বিরক্ত লাগতো। সেইবার কনটেস্ট শেষ করে কাউকেই কিছু না বলে একা একা বাসায় চলে আসছিলাম। একে তো ভালো পারফর্ম করতে পারি নাই, তার উপর মাথায় চাকরি বাকরির একটা বাড়তি চাপ ছিলো। ভাবলাম, আর একটা বছর। কষ্ট করি। বাকিটা দেখা যাবে।

৪র্থ বর্ষটা আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলা এই সময়টাতেই আসছে। সেই প্রথম বর্ষের শেষ থেকে শুরু হওয়া পরিশ্রম থেকে বলার মতো কিছু একটা অবস্থানে আসতে পারছিলাম। আমি মন থেকে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ সজীব ভাই এর কাছে। যখন সবাই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিছিলো, এই মানুষটা আমার উপর বিশ্বাস ধরে রাখছিলো। আইসিপিসি রেজিওনালে স্টেজে উঠে টপ ১০ এর পুরস্কারটা নিতে পারছিলাম সেই বার আমরা। সে বছরেই দক্ষিণ ভারতের কেরালায় আরেকটি আইসিপিসিতে অংশ নিই। ১৭ বা ১৮ তম হই প্রায় ৩০০ টিমের মাঝে। আমার লাইফের সবচেয়ে সুন্দর কিছু দিন সেখানে কাটে।

যাত্রাটা ‘মোটেই’ সহজ ছিলো না। আমি শুধু আত্মবিশ্বাসী ছিলাম এবং সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। বাকিটা পরিশ্রম এবং আল্লাহর ইচ্ছা। সবাই দোয়া করবেন, যেন আমার উপর সামনে যেসব দায়িত্বই অর্পিত হবে, আমি যেন সেসব ঠিকঠাক পালন করতে পারি।

প্রতি বছর অনেকেই গুগলে যাচ্ছে, আমি যেন একটা difference তৈরি করতে পারি। সেটা যদি দেশের নাম ‘আসলেই’ উজ্জ্বল করে হয়, তবে আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। (*) = করোনার কারণে গ্যারান্টি দিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না।”