অনলাইনে আম বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন শিক্ষার্থীরা, হচ্ছেন স্বাবলম্বীও

আম প্যাকেটিংয়ে ব্যস্ত জুয়েল মামুন ও আলমগীর হোসেন
আম প্যাকেটিংয়ে ব্যস্ত জুয়েল মামুন ও আলমগীর হোসেন  © সংগৃহীত

করোনা মহামারীর এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটছিলো শিক্ষার্থীদের। এরপর আমের মৌসুম চলে আসায় রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী এখন ঘরে বসে ফেসবুক মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ বা পেজ খুলে আমের ব্যবসা করছেন। এতে সফলতাও পাচ্ছেন তারা।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়ুয়া শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন। তিনি সেখানে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ছোট ভাই আলমগীর হোসেন সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবারের আর্থিক চাপে টিউশনি করিয়ে চলতেন দুইভাই। কিন্তু এরপরেও কুলাতে পারতেন না তারা। তারপর আমের মৌসুমে অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি শুরু করেন। এখন তারা বেশ সচ্ছল জীবনযাপন করছেন।  

ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী সরাসরি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে কুরিয়ারে ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে দেন তারা। ব্যবসা শুরুর বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কেজি আম বিক্রি হয়েছিলেএরপর থেকে প্রতিবছর তাদের আম বিক্রির চাহিদা বাড়তে থাকে। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার কেজি আম।

এবারের মৌসুমের শুরুতেই চার হাজার কেজি গোপালভোগ পাঠিয়েছেন। রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের বাজারে দুই ভাই আরও পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে এ কর্মযজ্ঞ চালান। কর্মীদের একজন শুধু আমের মান নিশ্চিত করেন। অন্যরা আম ওজন করা, প্যাকেট করা, কুরিয়ারে বা গাড়িতে পাঠানোর কাজ করেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আম পাঠানো হয়।

জুয়েল মামুন বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমের ব্যবসা করে আমরা সংসারের হাল ধরতে পেরেছি।’ জুয়েলরা ব্যবসার আয় থেকে বাড়ির কাঁচা মেঝে পাকা করে ওপরে নতুন টিনের ছাউনি দিয়েছেন। গরুর খামার করেছেন। খামারে এখন দুটি ষাঁড় আছে।

একইভাবে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ঐশী তাবাসসুম ফেসবুকে যে পেজের মাধ্যমে আম বিক্রি করেন, তার নাম ‘ম্যাংগোশাহী’। গত বছর তিনি ৩০০ কেজি গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বিক্রি করেছেন। রাজশাহী মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নীপা সেনগুপ্তা স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষা দিয়েছেন। এখনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। অনলাইনে ফল বিক্রির সুফল তিনি পেতে শুরু করেছেন। ৩ জুন পর্যন্ত তিনি ক্রেতাদের কাছে ১ হাজার ৬০০ কেজি আম পাঠিয়েছেন। ‘অমৃত স্বাদ’ নামে তাঁর একটি ফেসবুক পেজ আছে।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাকি আহমেদ জানান, তাঁর বন্ধুরা প্রায় সবাই এ বছর ফেসবুকের মাধ্যমে আম বিক্রির জন্য বিভিন্ন পেজ খুলেছেন। ইনাগাল ডটকম, কিনব ডটকম, রাজশাহীর আম, স্টোরহাউস অব ম্যাংগো—এমন আরও কত বাহারি নাম। এসব উদ্যোক্তার কাছেই হয়তো বলার মতো একটা গল্প আছে।


সর্বশেষ সংবাদ