জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বাংলাদেশি প্রেসিডেন্ট শাহরিয়ার আহমেদ
প্রথমবারের মতো জাপানের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি শাহরিয়ার আহমেদ। এ বছরের এপ্রিল মাসে নিইগাতা জেলার সানজো শহরে চালু হওয়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হচ্ছে সানজো সিটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নগর প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত এটি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। জাপানের সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ভাইস চ্যান্সেলরের কোনো পদ নেই। তাই প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী।
জাপানে সাত শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র আটটিতে বিদেশি প্রেসিডেন্ট আছেন। তবে সানজো বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য সাতটি হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিক থেকে প্রথমবারের মতো দেশটির সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়েছেন শাহরিয়ার আহমেদ। বাংলাদেশি একজন শিক্ষাবিদ ও গবেষকের জন্য এ বিরল এক অর্জন।
বাবার চাকরির সুবাদে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে জাপানের সঙ্গে পরিচিত হন শাহরিয়ার আহমেদ। ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাপানি সহায়তায় তৈরি হচ্ছিল। সেখানে বেশ কয়েকজন জাপানি প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ কর্মরত ছিলেন। নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিক ভবনে থাকতেন তাঁরা। জাপানিদের কর্মনিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে শৈশবেই প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
শৈশবের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন শাহরিয়ার। তিনি জাপানে আসেন ১৯৮৮ সালে। সেখানে এসে জাপানি ভাষা শিখে তিনি ভর্তি হন তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। চার বছরের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন এবং এরপর পিএইচডি পর্যায়ের ডিগ্রি লাভের জন্য ভর্তি হন টোকিও দেনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত টোকিও দেনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পর্যায়ের গবেষণায় নিয়োজিত থাকার সময় শাহরিয়ার আহমেদ কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড নিয়ে কাজ করেছেন। কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা, বিশেষ করে মানবদেহে এটা ব্যবহারের সময় রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার সমস্যা সমাধান করে নেওয়ায় তাঁর উদ্ভাবন ছিল ব্যতিক্রমী এক অর্জন। পিএইচডি শেষ করার পর একই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতার সুযোগ হয় তাঁর। এরপর নিইগাতার সাঙ্গিও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করে পরে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ওকিনাওয়ার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে। সেখান থাকা অবস্থায় এ বছর এপ্রিল মাসে চালু হওয়া নিইগাতা জেলার সানজো বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের পদ তিনি গ্রহণ করেছেন এবং নতুন এই বিদ্যাপীঠকে প্রযুক্তিশিক্ষার ক্ষেত্রে জাপানের একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলায় তিনি এখন সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত আছেন। প্রথম বছর ৮১ জন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে এবং এরা সবাই জাপানি।
দুই থেকে তিন বছর পর বিদেশি ছাত্র গ্রহণের ব্যবস্থা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারবে বলে আশা করেন শাহরিয়ার আহমেদ। সেই সুযোগ দেখা দিলে বাংলাদেশের ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি। যেকোনো উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে গণ্য হওয়ায় বিদেশি ছাত্রদের জন্য দোয়ার উন্মুক্ত করার মধ্যে দিয়ে সেই বৈচিত্র্যের পথে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে বলে কতিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।