১২ এপ্রিল ২০২১, ১৪:১৬

মেডিকেলে সুযোগ পেল ৬ কিমি হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়া মেয়েটি

বাবা মায়ের সঙ্গে রাবেয়া  © সংগৃহীত

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের মোল্যা কান্দির কৃষক দাদন মোল্লার মেয়ে রাবেয়া আক্তার। সে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় ২৪৬৩তম হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে টাকার অভাবে তার ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় খবর শুনে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। উপমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম আশ্রাফুন্নেছা ফাউন্ডেশন থেকে রাবেয়ার মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াকালীন যাবতীয় খরচ বহন করা হবে।

জানা গেছে, দাদন মোল্লার পাঁচ মেয়ের মধ্যে রাবেয়া তৃতীয়। ৭০ নম্বর মোল্লা বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন রাবেয়া। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. হুমায়ূন কবির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও হাজী শরীয়তুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান রাবেয়া।

রাবেয়া আক্তার বলেন, প্রাইমারিতে যখন পড়তাম তখন বিদ্যালয়ের পাশে বাবার ছোট দোকান ছিল। ক্লাস শেষে বাবার সঙ্গে সময় দিতাম। আমরা পাঁচ বোন। বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছোট একটি ঘরে মা-বাবা ও পাঁচ বোন থাকি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব। বড় বোন যে জামা পরতেন, একই জামা আমরা ছোট বোনরা পরতাম। কারণ সবাইকে জামা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না বাবার। তাই এক জামা ভাগ করে পরতাম সবাই।

রাবেয়া আরো বলেন, প্রতিদিন ৬ কিলোমিটার হেঁটে বিদ্যালয়ে গিয়েছি। গ্রামে টিউশনি পাওয়া যায় না। তার পরও যে দু-একটা পড়াইতাম সেই টাকা দিয়েই চলতাম। টিউশনির টাকা থেকে কিছু কিছু জমিয়ে রেখে সে টাকা দিয়ে কোচিং করেছি এবং ভর্তি পরীক্ষার খরচ চালিয়েছে। তবে আমার পরিবার আমাকে যতটুকু পেরেছে সহযোগিতা করেছে, কিন্তু তারা আমাকে যে উৎসাহ ভালোবাসা দিয়েছে তাতেই আমি খুশি। আমার স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।

তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ায় উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে সে।

রাবেয়ার বাবা মোহাম্মদ দাদন মোল্লা বলেন, জীবনে কষ্ট করে পাঁচ মেয়েকে বড় করেছি। মানুষের সহায়তায় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। রাবেয়া টিউশনির টাকায় পড়াশোনা করেছে। আমি বাবা হয়ে শুধু উৎসাহ দিয়েছি। টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারিনি। এখন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে মেয়ে। এখনো তাকে সহায়তা করতে পারছি না।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ইউএনওর কাছ থেকে জানতে পেরেছি কৃষক দাদন মোল্লার মেয়ে রাবেয়া মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছে। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিই। তারই ধারাবাহিকতায় রাবেয়ার ভর্তিসহ যাবতীয় খরচ আমি দেব।