অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে ইংরেজিতে দক্ষ হলেন একদল শিক্ষার্থী
মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে দেশের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম। নিজেদের নিরাপদ রাখতে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী। তবে অলস এই সময়কে নষ্ট করতে চায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ঝাঁক শিক্ষার্থী। এই সুযোগে নিজেদের ইংরেজি বলার দক্ষতাকে বাড়িয়ে নিয়েছে তারা।
আমেরিকান সরকারের সহায়তায় ‘টেক ইনিশিয়েটিভ এন্ড স্পিক’ নামক ভার্চুয়ালি পরিচালিত এক প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের ইংরেজির দক্ষতাকে দারুণভাবে ঝালাই করে নিয়েছে এসব শিক্ষার্থী। আর এ দক্ষতা নিজেদের শিক্ষাজীবন তো বটেই, সাহায্য করবে তাদের কর্মক্ষেত্রেও।
প্রকল্পটির প্রধান প্রশিক্ষক ও ঢাবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী জারিন তাসনিম রাইসা জানায়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাজার চাহিদার কারণে ইংরেজি বলার দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া উচ্চশিক্ষার বিষয়গুলোও ইংরেজির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমন সব কারণ থেকেই আমাদের এই কার্যক্রম।
তিনি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর ইংরেজি সম্পর্কে ধারণা থাকা সত্ত্বেও অনুশীলনের অভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে ভয় পায়। এই ভয় কাটিয়ে ইংরেজিতে কথায় উদ্বুদ্ধ করতেই 'Take Initiative and Speak'- প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা অংশগ্রহণকারীদের পারস্পরিক কথোপকথনের সুযোগ দিয়েছি। যাতে তারা ইংরেজি বলার ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে।'
ইংরেজি চর্চার এই পুরো কার্যক্রম চলেছে অনলাইন 'লাইভ মিটিং'-এ। যেখানে দেশ বিদেশের পাঁচজন প্রশিক্ষক অংশগ্রহণকারীদের সাহায্য করেছেন।
শুরুতেই আবেদনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৩০জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়। পরে ভার্চুয়াল মিটিং প্ল্যাটফর্ম 'জুমে' অংশগ্রহণকারীদের যুক্ত করে তাদের নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথোপকথনে উদ্বুদ্ধ করা হয়। পুরো প্রকল্পে WYLET grant এর মাধ্যমে অর্থায়ন করেছে আমেরিকান সরকারের স্টেট বিভাগের বুরো অব এডুকেশনাল এন্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ও আমেরিকান কাউন্সিল। এছাড়াও শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা iEARN-BD এবং YES alumni Bangladesh প্রকল্পে সার্বিক সহযোগিতা করেছে।
প্রকল্পে শুধু ইংরেজি ভাষায় কথা বলা নয়, বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কেও সচেতন করার প্রয়াস করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ, উৎসব ও খাবার সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের আবেগকে ইংরেজি ভাষার সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে আরও উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এক মাসে ১৪টি ক্লাসের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
রাইসা জানায়, অনুশীলনের এই পর্বটি দুইজনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সেরেছে অংশগ্রহণকারীরা। এজন্য জুমের 'ব্রেক-আউট রুম'র এর মাধ্যমে ভাগ করে দিয়ে তাদের অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। এটা করতে গিয়ে তারা যখন কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলো, সেই জায়গাটিতেই আমরা তাদের সাহায্য করেছি।
এ কাজে রাইসাকে সাহায্য করেছে ঢাবির ইংরেজির বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তাহমিদ আজাদ সোহান এবং ঢাকা কমার্স কলেজের মো. সাদমান সাকিব। এছাড়াও আমেরিকান শিক্ষার্থী টিয়া জেনিংস ও আরমেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবাী নারিনে বাঘদাসারইয়ান তাদের সাথে যুক্ত ছিলো। প্রকল্পে শুরু থেকে যুক্ত থেকে এর রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন iERAN-BD এর প্রোগ্রাম অফিসার রাতুল ফারুক।
নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে রাইসা জানায়, আমার উদ্দেশ্য ছিল অংশগ্রহণকারীরা অন্ততপক্ষে পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারুক। কিন্তু প্রকল্প শেষে দেখলাম তারা প্রত্যেকেই যেকোনো বিষয়ে ইংরেজিতে ৩০ মিনিট কথা বলতে সক্ষম। একটা সেশনে তাদের ইংরেজিতে দেয়া নির্দেশনা শুনে আমি ফুচকা বানিয়েছিলাম।
প্রশিক্ষকের মত সন্তুষ্টির আত্মতৃপ্তি প্রশিক্ষার্থীর মধ্যেও। এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বুশরা জাহান ঐশী বলেন, ভালো ইংরেজি বলতে না পারায় বিভাগের ভাইভা পরীক্ষাতে ভালো করতে পারছিলাম না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমি এখন সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারি। এই প্রজেক্ট থেকে ভাইভা চালিয়ে নেওয়ার মত ইংরেজি শিখতে পেরেছি।
আরেক প্রশিক্ষাণার্থী রিদওয়ান বলেন, ইংরেজি ভাষার বাহিরে এই প্রকল্পে আমরা অনেক দেশ ও তাদের সংস্কৃতি বিভিন্ন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রকল্পটি একইসাথে ইংরেজি শেখার সাথে সাথে সাংস্কৃতিক বিনিময়েও সাহায্য করেছে।