ছাত্রজীবনে সঞ্চয়, ভবিষ্যতের জন্য এখনই প্রস্তুতি নিন
ছাত্রজীবন শুধু বই-খাতা আর পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ই একজন মানুষ দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও আত্মনির্ভরতার পাঠ নেয়। আর এই আত্মনির্ভরতার প্রথম ধাপ হতে পারে সঞ্চয়ের অভ্যাস। অনেকে মনে করেন, সঞ্চয় বড়দের কাজ—কিন্তু বাস্তবতা হলো, অল্প অল্প করে হলেও ছাত্রজীবন থেকেই সঞ্চয় শুরু করলে ভবিষ্যতের জন্য অনেক বড় প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। এতে শুধু অর্থ নয়, মানসিক নিরাপত্তাও তৈরি হয়। বর্তমান সময়ের ব্যয়বহুল পরিবেশে টাকার যথাযথ ব্যবহার ও পরিকল্পিত খরচ একজন শিক্ষার্থীকে এগিয়ে যেতে শেখায়।
কেন সঞ্চয় করা জরুরি?
ছাত্রজীবনের সময়টা সাধারণত সীমিত আয় ও নির্ভরতার। এই সময়ে অনিয়মিত খরচ, বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খাওয়া কিংবা অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় টাকা উড়ে যায়। অথচ সামান্য কিছু বাঁচিয়ে রাখতে পারলে তা একসময় বড় সহায়তা হতে পারে। বই কেনা, জরুরি প্রয়োজনে খরচ, এমনকি ছোটখাটো অনলাইন কোর্সও করা সম্ভব হয় নিজের জমানো টাকায়।
কীভাবে শুরু করবেন?
সঞ্চয় শুরু করার জন্য বিশাল আয়ের প্রয়োজন নেই সহজ কিছু কৌশল মেনে চললেই সঞ্চয় করা যাবে।
বাজেট বানান:
মাসের শুরুতেই আপনার আয় ও খরচের একটি তালিকা তৈরি করুন। কী কী খাতে খরচ হবে—যেমন বাসা ভাড়া, খাবার, যাতায়াত, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি তা আগে থেকেই লিখে ফেলুন। এরপর খরচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখুন, কোন কোন খাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে বা আপনি কোথায় অপচয় করছেন। এই খরচগুলো চিহ্নিত করে কাটছাঁট করুন। বাজেট করার ফলে আপনি খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন এবং সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
আলাদা অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করুন:
সঞ্চয়ের জন্য একটি আলাদা বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে রাখুন। মাসের শুরুতেই সঞ্চয়ের টাকা ওই অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিন, যেন তা মূল একাউন্টে মিশে না যায়। এভাবে হাতের নাগাল থেকে সঞ্চয়ের টাকা দূরে থাকলে আপনি সহজে তা খরচ করার প্রবণতা থেকে বিরত থাকবেন। এতে টাকা জমিয়ে রাখা সহজ হবে এবং প্রয়োজনের সময় তা কাজে লাগানো যাবে।
লক্ষ্য ঠিক করুন:
সঞ্চয় যেন নিছক টাকা জমানো না হয়, তার জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন। ধরুন, আপনি ভালো মানের একটি হেডফোন কিনতে চান বা নতুন একটি ব্যাগ প্রয়োজন—তাহলে সেটিকে সামনে রেখে সঞ্চয় শুরু করুন। একটি ছোট লক্ষ্য পূরণ হলে আপনার মধ্যে আনন্দ ও উৎসাহ তৈরি হবে, যা আপনাকে পরবর্তী বড় লক্ষ্যের জন্য অনুপ্রাণিত করবে। এভাবে ধাপে ধাপে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে।
উপহারের টাকা জমা রাখুন:
ঈদ, পূজা, জন্মদিন বা কোনো উৎসবে আপনি যদি উপহারের টাকা পান, তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গেই খরচ না করে সঞ্চয়ের অংশ বানান। এই টাকাগুলো আপনার নিয়মিত আয় নয়, তাই সহজেই জমিয়ে রাখা সম্ভব। আলাদা একাউন্টে রেখে দিন বা সেই টাকার জন্য আলাদা একটি খাতা/নোট অ্যাপে হিসাব রাখুন। দেখবেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আপনার একটি ভালো পরিমাণ সঞ্চয় দাঁড়িয়ে গেছে।
ছাত্রজীবনে আয় ও সঞ্চয়—একসঙ্গে সম্ভব?
নতুন প্রজন্ম এখন অনলাইন টিউশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং কিংবা ইউটিউব থেকে আয় শুরু করছে। সেই আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সঞ্চয়ে রাখা উচিত। এতে ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার গঠনে প্রয়োজনীয় স্কিল শেখা বা যন্ত্রপাতি কেনার মতো খরচ সহজ হবে।
কোথায় সঞ্চয় করবেন?
সঞ্চয় করার জন্য ব্যাংকে স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে সবচেয়ে ভালো হয় তাতে প্রতি মাসে টাকা জমা রাখা। দেশের প্রায় ব্যাংকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এই অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে না চাইলেও মাটির ব্যাংক বা কাঠের বাক্সেও টাকা জমা রাখা যায়। তবে ব্যাংকে টাকা রাখলে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়ার আশঙ্কা নেই
শুধু অর্থনৈতিক না, সঞ্চয় একজন শিক্ষার্থীর মানসিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। ছাত্রজীবন থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুললে শুধু আর্থিক নয়, মানসিকভাবেও আপনি হবেন শক্তিশালী। আজকের ছোট ছোট সঞ্চয় কাল হয়ে উঠতে পারে বড় পরিবর্তনের হাতিয়ার।