তিন উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দিল বণিক বার্তা-বিআইডিএস

তিন উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দিল বণিক বার্তা-বিআইডিএস
তিন উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দিল বণিক বার্তা-বিআইডিএস  © টিডিসি ফটো

আজিজু রিসাইক্লিং অ্যান্ড ই-ওয়েস্ট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ, মুন লাইট পেট ফ্লেকস অ্যান্ড পেট স্ট্রিপের সিইও হাবিবুর রহমান জুয়েল ও রকমারির চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসানকে প্রতিভাবান উদ্যোক্তা সম্মাননা-২০১৯ প্রদান করা হয়েছে।

বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) যৌথ আয়োজনে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এ তিন উদ্যোক্তার হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো দেশের প্রতিভাবান উদ্যোক্তাদের সম্মাননা প্রদান করল বণিক বার্তা-বিআইডিএস।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও বিআইডিএসের পরিচালক ড. কে এস মুরশিদ। আরো বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্লাটিনাম স্পন্সর রবি আজিয়াটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। এরপর উদ্যোক্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন দুই মন্ত্রী। এছাড়া উদ্যোক্তাদের প্রত্যেককে লংকাবাংলা ফিন্যান্সের পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মারিয়া নূর। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পর সংগীত পরিবেশন করেন কুমার বিশ্বজিত।

বিআইডিএস ও বণিক বার্তাকে এ আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এখানে উপস্থাপন করা বিষয়গুলো আমাদের অর্থনীতির আরেকটি দিক। নিজেদের দায়িত্বের বিষয়ে আমরা আরো কিছুটা সচেতন হতে পেরেছি। উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক এমন বিষয় ও সরকার হস্তক্ষেপ না করে দূরে থেকেও কিভাবে সহায়তা করতে পারে তা আমাদের জানালে উপকৃত হব ।

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, বণিক বার্তা এবং বিআইডিএস যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কৃত বা সম্মানিত করার জন্য নির্বাচন করেছে, সেখানে চমক রয়েছে। তাদের এই সফলতা সত্যিই পুরষ্কার ও সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য। অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করে তারা এ জায়গায় এসেছেন। আমি মনে করি সামনের দিনগুলোতে তাদের এই প্রয়াস ও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের উদ্যোক্তাদেরকে এ ধরণের পুরস্কার উৎসাহিত করবে। ই-বর্জ্য যে একটা সমস্যা হবে আমাদের দেশে এটা অনেকেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলো। এই ধরণের প্রতিষ্ঠান আরো হবে বলে আমরা আশা করি। দেশে চার কোটি হত দরিদ্র রয়েছে, যাদের বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার জন্যই নিয়মিত কর প্রদানে আগ্রহী করে তোলা প্রয়োজন। দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতেই এর প্রয়োজন আছে।

সূচনা বক্তব্যে এ আয়োজনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছে। এসব মানুষ সম্পর্কে আমরা কম জানি। আমরা প্রতি বছর চেষ্টা করি সেই মানুষগুলোকে হাজির করার। আজকে যাদের সম্মাননা জানানো হলো, তারা শুধু নিজেরাই নিজের পরিচয় তৈরি করছেন না, বাংলাদেশেরও পরিচয় তারা দাঁড় করাচ্ছেন। বাংলাদেশকে একটা বড় জায়গায় নিতে ভ‚মিকা রাখছেন তারা।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ বলেন, বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেখানে অনেক অর্জনের পাশাপাশি বেশকিছু চ্যালেঞ্জও আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হলে আমাদের এসএমই সেক্টরটাকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। আজকে যারা সম্মানিত হচ্ছেন, তাদের নিয়েই এসএমই খাতটির অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

প্রতিভাবান উদ্যোক্তা সম্মাননা-২০১৯ অনুষ্ঠানে প্লাটিনাম স্পন্সর ছিল রবি। এতে আরো সহযোগিতা করেছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, আরএসআরএম, জাফলং টি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, বিকাশ, সামিট করপোরেশন লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, সিডিবিএল, এসিআই পিওর সল্ট, স্বপ্ন, এনসিসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।


এক নজরে পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান:

রকমারি ডট কম: পছন্দের বই পাঠকের জন্য দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দিতে ২০১২ সালে যাত্রা করে রকমারি ডট কম। বই কেনার এই অনলাইন প্লাটফরমে কাজ করছেন ১৩০ জন কর্মী। শিক্ষা যেমন মৌলিক অধিকার, তেমনি শিক্ষার প্রধানতম মাধ্যম বইও সঠিক সময়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়াকে নিজেদের অঙ্গীকার বলে মনে করে রকমারি পরিবার। এই এডুকেশন প্ল্যাটফরমটির প্রতিষ্ঠাতা মো. মাহমুদুল হাসান। সারাদেশে আড়াই লাখের বেশি পাঠক রয়েছে রকমারি ডট কমের।

আজিজু রিসাইক্লিং অ্যান্ড ই-ওয়েস্ট কোম্পানি লিমিটেড: তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পরিবেশ দূষণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ই-বর্জ্য। দূষণ না ছড়িয়ে বিভিন্ন ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে আজিজু রিসাইক্লিং অ্যান্ড ই-ওয়েস্ট কোম্পানি লিমিটেড। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়ায় ২০১২ সালে যাত্রা করে প্রতিষ্ঠানটি। স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক মিলিয়ে এখানে কাজের সুযোগ হয়েছে ৩০০ কর্মীর। আজিজু’র প্রতিষ্ঠাতা মো. আবুল কালাম আজাদ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৩৬ কোটি টাকা।

মুন লাইট পেট ফ্লেকস অ্যান্ড পেট স্ট্রিপ ইন্ডাস্ট্রি: স্নাতকোত্তর শেষ করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে প্লাস্টিকের বোতল রিসাইকেল করার কারবার শুরু করেন মো. হাবিবুর রহমান জুয়েল। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে তা থেকে প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল তৈরি করতে পেট ফ্লেকস অ্যান্ড পেট স্ট্রিপ ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০১২ সালে চীন ও ভারতে নিজেদের কারখানায় উৎপাদিত পেট ফ্লেকস ও পেট স্ট্রিপ রফতানি শুরু হয়। বর্তমানে চীনে প্রতিমাসে ২৪০ টন স্ট্রিপ রফতানি করছে মুন লাইট পেট ফ্লেকস অ্যান্ড পেট স্ট্রিপ ইন্ডাস্ট্রি।


সর্বশেষ সংবাদ