২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৩

পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে গড়ে তুললেন আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে 

ইউসুফ আলী রায়হান  © টিডিসি ছবি

দেশের বাজারে চাকরি যেন সোনার হরিণ! সবাই যে চাকরির পেছনে ছুটবে তেমনও না। দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজস্বভাবে ব্যবসায়ী ও কর্মমুখী হচ্ছে অনেকে। তেমনই এক তরুণ হলেন ফেনীর ইউসুফ আলী রায়হান।

ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের নোয়াবাদ গ্রামের এই তরুণ নিজের দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছেন আইটি সেক্টরে এক সফল ক্যারিয়ার। তিনি বর্তমানে ফেনী সরকারি কলেজের মাস্টার্স বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন। ২০১৯ সালে অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইটি সেক্টরে প্রবেশ করেন এবং ফ্রিল্যান্সিং, ওয়েব ডিজাইনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আইটি সেক্টরের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। 

জানা যায়, ১৬০০ অধিক প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যাদের অনেকে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি তিনি কোডকাব্য আইটি ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন, যেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী আইটি সেক্টরের বিভিন্ন বিষয়ে ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তার আইটি উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প জানিয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে।

রায়হানের আইটি উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর গল্প সম্পর্কে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের এইচএসসি পরীক্ষার পর লক্ষ্য থাকে নিজে কিছু করার। ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর সে লক্ষ্য বিভিন্ন ভাবে চাকরির চেষ্টা করি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, ট্রাভেল এজেন্সি, এমনকি বাসের সুপারভাইজার হওয়ার চেষ্টাও করেছিলাম, কিন্তু ভাগ্য সাড়া দেয়নি। অবশেষে রবি কোম্পানিতে ৫,৭০০ টাকা বেতনে সিম বিক্রয়ের কাজ পাই। কাজটি প্রথমে কঠিন ছিল আমার জন্য। ১০ টাকা গাড়ি ভাড়া বাঁচানোর জন্য ৭ থেকে ১০ কিলোমিটার হেঁটে গ্রাহকদের কাছে সিম ও লোড বিক্রি করতাম। পরবর্তীতে কয়েক মাস চাকরি করার পর ৬১০০ টাকা বেতন হয়। রবিতে আট মাস চাকরির করার পর সেই সামান্য বেতন থেকে টাকা জমিয়ে ২২,৫০০ টাকা দিয়ে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আইটি সেক্টরের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। 

তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করার কারণে এলাকার অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল আইটি সেক্টরে কাজ করতে পারব কিনা। অনেকে বারণও করেছিল। তবে আমার মেজো ভাই আব্দুল আল রুবেলের অনুপ্রেরণা এবং যে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম সেখানের প্রশিক্ষক এসএম ইবরাহীম সুমন স্যারের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। এই দুজন মানুষ আমাকে শুরু থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে। যার জন্য তাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।

নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এই তরুণ উদ্যোক্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আইটি সেক্টরে যতটুকু দক্ষতা অর্জন করেছি সে দক্ষতা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কোডকাব্য আইটি ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছি। ৮ মাস আগে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানে মাইক্রোসফট অ্যাপ্লিকেশন, ওয়েব ডিজাইন এবং ফ্রিল্যান্সিংসহ আইটি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। এছাড়াও কোডকাব্য ওয়েব সলিউশন নামক আরেকটি সেবা চালু করেছি যেখানে গ্রাহকদের ওয়েবসাইট সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়। পাশাপাশি, আইটি পণ্যের চাহিদা পূরণে কোডকাব্য গ্যাজেট নামক একটি ব্যবসা শুরু করেছি যেখানে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহ করা হয়।

নিজের আয় সম্পর্কে এই উদ্যোক্তা বলেন, আমার প্রথম আয় শুরু হয় নাইজেরিয়ান এক ক্লায়েন্টের জন্য একটি প্রজেক্টে কাজ করার মাধ্যমে। প্রথমদিকে কাজটি ঠিকমতো বুঝতে পারছিলাম না, তবে শেষ পর্যন্ত সফলভাবে তা সম্পন্ন করি। ক্লায়েন্ট আমাকে ১০ ডলার পেমেন্ট করেন, যা পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম। এটি ছিল আমার আয়ের পথচলার প্রথম ধাপ। আলহামদুলিল্লাহ, সেই ছোট্ট শুরু থেকেই আজ পর্যন্ত আমার এই পথচলা অব্যাহত রয়েছে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে রায়হান বলেন, আইটি সেক্টরে কাজ করতে চাইলে ধৈর্য ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। এই সেক্টরে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। চাকরি পাওয়া কঠিন হলেও নিজেকে দক্ষ করে তুললে আইটি সেক্টরে সফল হওয়া যায়। এছাড়াও সঠিক ভাবে লেগে থাকলে চাকরি থেকে এ সেক্টরে বেশি টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে।