২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:০০

স্বপ্ন থেকে বাস্তবে; একদল তরুণের প্রত্যয়ে সমাজসেবার নতুন দিগন্ত 

স্বপ্ন রুরাল ফাউন্ডেশন  © টিডিসি ফটো

একদল শিক্ষিত ও উদ্যমী তরুণ। হৃদয়ে সমাজসেবার দৃঢ় প্রত্যয়। সমাজের মানুষদের জন্য চোখে মুখে গভীর স্বপ্ন। গ্রামের এক প্রান্তে থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশ রক্ষা, মাদকবিরোধী কার্যক্রম এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে মরিয়া তারা। তারা যেন কবি কামিনী রায়ের অমর পঙক্তির জীবন্ত প্রতিফলন— ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।’ বলছিলাম সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের কিছু স্বপ্নবাজ তরুণদের কথা। 

সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার নিমিত্ত গঠন করেছে স্বপ্ন রুরাল ফাউন্ডেশন নামের একটি জনকল্যাণমুখী সংগঠন। সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমাজের সার্বিক উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ, শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষকদের সহায়তা, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, এবং প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তাদের ব্যতিক্রমধর্মী ও সময়োপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে সংগঠনটি। 

কথা হয় সংগঠনটির সহ-সভাপতি মারুফ হোসেনের সাথে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।  তিনি বলেন, ‘সমাজের প্রতিটা মানুষের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে। তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছাই আমাদের পথচলার প্রেরণা। আমরা বিশ্বাস করি, মানবসেবা কেবল কাজ নয়, এটি এক পবিত্র দায়িত্ব—যা মানবিকতার বন্ধনে সকলকে একত্রিত করে। আমাদের লক্ষ্য সমাজের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। আমাদের স্বপ্ন একটি এমন সমাজ, যেখানে কেউ বঞ্চিত থাকবে না, কারো মুখের হাসি মলিন হবে না। সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের জীবনে আলোর শিখা জ্বালানো এবং একটি ন্যায়সংগত ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানি, ছোট ছোট উদ্যোগ একত্রে মিললে গড়ে ওঠে একটি বড় পরিবর্তন। তাই আমরা প্রতিটি মানুষকে এই অভিযাত্রায় সঙ্গী হতে আহ্বান জানাই। একসঙ্গে আমরা একটি এমন সমাজ গড়তে পারব, যেখানে ভালোবাসা, সমতা এবং মানবিকতা হবে সবার জন্য অভিন্ন। মানুষের কল্যাণে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ- একটি সুন্দর, মানবিক ভবিষ্যতের দিকেই অগ্রসর।’

সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ ও গভীর অনুধ্যানের ফসল। পরিবেশের অবক্ষয়, মাদকের করাল গ্রাস, এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের বঞ্চনার বিরুদ্ধে এটি একটি পরিবর্তনের আহ্বান। আমরা চাই, মানুষ অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হোক এবং পরিবেশ ও সমাজ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখুক। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তি, উন্নয়ন, ও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একটি সমাজ গড়াই আমাদের লক্ষ্য।’

সংগঠনটির সভাপতি মো. হাবিবুল কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে আমি এই সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। এটি কেবল একটি উদ্যোগ নয়, বরং আমার অন্তরের গভীর তাগিদ থেকে উৎসারিত এক প্রতিজ্ঞা। সমাজের বঞ্চনা, প্রকৃতির অবক্ষয় এবং মানুষের অসহায়তা আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে সমাজের উন্নয়নে একটি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।’

‘আমি দেখেছি, রাস্তার পাশের বৃক্ষগুলো রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে কীভাবে নির্বিচারে উজাড় করা হয়েছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম তৈরি করেছে। এসব বৃক্ষ কেবল পরিবেশই রক্ষা করত না, বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বৃক্ষ নিধনের ফলে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে,’  যোগ করেন হাবিব। 

তরুণ এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে মাদকের ভয়াবহতা কিশোর-কিশোরীদের সম্ভাবনাময় জীবন ধ্বংস করছে এবং সমাজের ভিত দুর্বল করছে। তাদের আলোর পথে ফেরাতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই আমি এ উদ্যোগ নিতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাছাড়া আমাদের গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে শিক্ষার সুযোগ সীমিত, স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল এবং কৃষি সহায়তা প্রায় নেই। এসব সমস্যা সমাধানে একটি সুসংগঠিত প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন।’ 

‘আপনার সংগঠন কীভাবে সমাজের পরিবর্তন আনতে পারবে?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এই সংগঠন কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের নাম নয়; এটি একটি স্বপ্ন, একটি আন্দোলন। এটি সেই পরিবর্তনের প্রতীক, যেখানে মানুষ প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হবে, তরুণ প্রজন্ম তাদের সম্ভাবনাগুলো পূর্ণ করতে পারবে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশ রক্ষা, মাদকবিরোধী কার্যক্রম, এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব ইনশাআল্লাহ।’