ঢাবি ‘যোগাযোগ বৈকল্য’ বিভাগের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে পিএইচডিতে তোরসা জহুর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৩ AM , আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ বিভাগের ২য় ব্যাচের (২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের) মেধাবী শিক্ষার্থী তোরসা জহুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ডেকোটাতে ফল ২০২৪ সেমিস্টার থেকে স্পেশাল এডুকেশন বিষয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগ দিচ্ছেন। পিএইচডি প্রোগ্রামের পাশাপাশি তিনি গ্রাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবেন।
তোরসা জহুর সাংস্কৃতিক শহর কুষ্টিয়াতে এক শিক্ষক পরিমণ্ডিত পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ সহ উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস অনার্স ও থিসিসসহ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি পঞ্চম শ্রেণি থেকেই পর্যায়ক্রমে এসএসসি, এইচএসসি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ভালো ফলাফলের জন্য বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। তিনি অনার্স প্রথম সেমিস্টারে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বসহ অনার্স-মাস্টার্স (অনার্স সিজিপিএ ৩.৭০/মাস্টার্স সিজিপিএ ৩.৮০) সম্পন্ন করেন।
তিনি ঢাবি থেকে পড়াশুনা শেষ করে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে স্পিচ প্যাথলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রথম বর্ষ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ, ডিবেটিং সোসাইটি, আবৃত্তি সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত ছিলেন ও ন্যাশনাল ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। লার্নিং ডিসেবিলিটি ও ডিসগ্রাফিয়া বিষয়ে তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা চর্চা করেন এবং জনপ্রিয় পত্রিকা বণিক বার্তাসহ আরও বিভিন্ন পত্রিকায় এই বিষয়ে লেখালিখি করেন। আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের সঙ্গে তার একাধিকবার সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। এর মধ্যে সদ্য প্রণিত বাংলা মাতৃভাষা পিডিয়াতে যোগাযোগ বৈকল্য সম্পর্কিত ভুক্তি লিখন, শ্রবণ প্রতিবন্ধি শিশুর ককলিয়ার ইমপ্লান্ট পরবর্তী স্পিচ কেয়ার নিয়ে কেস প্রেজেন্টেশন ও বাংলা ইশারা ভাষাকে জাতীয় পাঠ্যক্রমে প্রাইমারি পর্যায় থেকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে মতামত প্রদান অন্যতম।
এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ থেকে প্রকাশিত কন্টিনেন্টাল বই "বাংলাদেশে যোগাযোগ বৈকল্য অধ্যয়ন" এ অনুবাদকের কাজ করেন। তিনি বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা ছাড়াও স্প্যানিশ, জার্মান, হিন্দি ইত্যাদি ভাষায় সমানভাবে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ মর্ডান ল্যাংগুয়েজ থেকে স্প্যানিশ ভাষায় জুনিয়র ও সিনিয়র কোর্স সম্পন্ন করেন।
এক অপ্রতিরোধ্য যাত্রার সারথী মেধাবী এই শিক্ষার্থী মাস্টার্স সমাপ্তের মাত্র অল্প সময়ের মধ্যেই বহুল কাঙ্ক্ষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপসহ প্রেস্টিজিয়াস পিএইচডি ডিগ্রির জন্য মনোনীত হন। তার স্বপ্ন তিনি বাংলাদেশের স্পেশাল নিড মানুষদের জন্য ইনক্লুসিভলি বিশ্বব্যাপি কাজ করবেন। তার এই অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতের সকল মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।
পিএইচডির যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তোরসা জহুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমেরিকার মতো দেশে সরাসরি পিএইচডি প্রোগামে ভর্তি হতে পেরে আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। ডিপার্টমেন্টের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে এতো বড় একটা সুযোগ পাওয়া খুবই গর্বের এবং চ্যালেন্জের। আমার বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাদের স্বপ্ন, প্রচেষ্টা এবং অধ্যাবসায় থাকলে এমন সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আগামী ২৬ আগষ্ট থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে এ শিক্ষার্থীর। সবার কাছে দোয়া চেয়ে এ শিক্ষার্থী বলেন, অর্জিত জ্ঞান যেন সমাজের কাজে লাগে এ বিষয়ে ফোকাস দিবেন সবসময়।