নিজ বিদ্যালয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করা মোশাররফ পেল জিপিএ-৫
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহম্মেদের শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করত মোশাররফ। সে উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে। বাবার আর্থিক দৈন্যতার কারণে পরিচয় গোপন রেখে যে স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সেই স্কুলের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজে শ্রমিকের কাজ করেছে মোশাররফ।
এবার এসএসসি পরীক্ষায় শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ থেকে অংশ নেয় মোশাররফ। গত ১২ মে প্রকাশিত ফলে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে মেধাবী এই শিক্ষার্থী।
মোশাররফের মা মোছা. নাজমা খাতুন বলেন, তার তিনি ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে মোশারফ হোসেন রাব্বি সবার বড়। লেখাপড়ায় তার খুব আগ্রহ। কোনোদিন তাকে স্কুলে আসা যাওয়া করার জন্য বা পড়ার জন্য তাগিদ করতে হয়নি। নিজের অদম্য উৎসাহ নিয়ে সে লেখা পড়া করেছে। পরীক্ষার কিছুদিন আগেও মুখে কাপড় দিয়ে বেধে মুখ ঢেকে রাজমিস্ত্রির কাজে শ্রমিকের কাজ করেছে। উপার্জিত টাকা মায়ের হাতে দিতে গিয়ে সে আবেগ আপ্লুত হয়ে মাকে বলেছে বাবার কষ্ট হয় তাই বাবাকে সাহায্য করতে আমি স্কুলে গিয়ে মুখ বেঁধে মুখ ঢেকে শ্রমিকের কাজ করেছি। অবশেষে মানবিক বিভাগ থেকে মোশারফ জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে।
ছেলের ফলাফলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা খুব খুশি। তাই স্কুলে গিয়েছিলাম স্যারদের মিষ্টি খাওয়াতে এবং কীভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করাবো এবং লেখাপড়া করাবো সে বিষয় জানতে বুঝতে। মোশারফের লেখাপড়া করার খুব আগ্রহ। কিন্তু আমাদেরতো টাকা পয়সা নাই। কীভাবে ভালো কলেজে লেখাপড়া করাবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। মোশারফ লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চায়। তার সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য মোশারফের মা-বাবা সরকার তথা সমাজের বিত্তশালীদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১২ মে। প্রকাশিত এই ফলাফলে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ৪৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ জনই জিপিএ-৫ পায়। ১২ মে কৃতিত্ব পূর্ণ ফলাফল অর্জনের জন্য আনন্দ উৎসব করেন বিদ্যাপীঠের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সহ সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ। সেদিন আনন্দ উৎসবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদারও গিয়েছিলেন কৃতী শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করতে। ৪৯ জনের মধ্যে ৪৮ জন জিপিএ-৫ পায় । সেদিন লোক লজ্জার ভয়ে আনন্দ উৎসবে যায়নি। বাড়িতে বসেই কান্না করছিল মোশারফ।
তিনি আরও বলেন, মোশারফ আমার অজানা গল্প তার অদম্য উৎসাহ ও মেধাকে এগিয়ে নিতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সুদৃষ্টি ও সহানুভূতি কামনা করছি।
রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে মোশাররফ জিপিএ-৫ পেয়েছে। অদম্য এই মেধাবীর সহযোগিতায় সকলের এগিয়ে আসা উচিত।
কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহম্মেদের পৈতৃক বাড়ির পাশেই তিনি গ্রামের পিছিয়ে পরা ছেলে-মেয়েদের কে আধুনিক, বিজ্ঞান ও মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে নিজ হাতে গড়ে তোলেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ।