বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় সাহস জুগিয়েছে প্রকৌশল গুচ্ছের ফল
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৬২তম হয়েছেন রাজধানীর নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিম আল ফারাবি। এছাড়া তিনি প্রকৌশল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছেন ৪৬তম। ভর্তি পরীক্ষায় নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অনুজদের প্রতি দিয়েছেন পরামর্শ। কীভাবে নিজে প্রস্তুতি নিয়েছেন, সাফল্য এসেছে কীভাবে— জানিয়েছেন এসব গল্পও।
ফারাবির বাড়ি ঢাকা দোহারে। তার বাবা আব্দুল করিম জিয়ন। তিনি পেশায় একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার মা শাহনাজ করিম পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ফারাবি তাদের দুই ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় বোন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফারাবি মাধ্যমিক শেষ করেছেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং উচ্চমাধ্যমিক নটরডেম কলেজ থেকে।
পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসও করেছে ফারাবি। ছিলেন নটর ডেম আবৃত্তি দলের সভাপতি। ২০২২ সালের বাংলাদেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াডের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি। এছাড়াও নিয়মিতভাবে গণিত, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতেন। পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে একাধিক পদক।
ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সাফল্য নিয়ে ফারাবি বলেন, এই অনুভূতি আসলে অবর্ণনীয়। দুই বছরের প্রয়াস শেষে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দে উদ্বেলিত। সৃষ্টিকর্তার নিকট আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভর্তি পরীক্ষার পুরো সময়টাতে তিনি তার পরিবারকে সহযোগী হিসেব পাশে পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমার এ যাত্রায় পরিবারের সদস্যরা সবসময়ই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, সহায়তা করেছেন। আমি আমার কলেজের শিক্ষকদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। ক্লাসে তাদের যেকোনো প্রশ্ন নির্দ্বিধায় করতে পারতাম। তারা বেশ ভালোভাবে আমাকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। আমার পুরো কলেজ লাইফে বুয়েটের একজন ভাইয়া পড়ালেখার পাশাপাশি আমাকে মানসিকভাবেও তৈরি করেছেন।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি বেশ কৌশলী ছিলেন ফারাবি। তার মতে, এখানে মেধার চেয়ে পরিশ্রমটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে বিবিধ কারণে আমার পড়াশোনায় খানিক ছেদ পড়েছে। তবে ডিসেম্বর থেকে আমি আবার নবোদ্যমে পড়ালেখা শুরু করি।
আরও পড়ুন: প্রকৌশল গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম ইশতিয়াক মঈন
‘আমি অনুধাবন করলাম, ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে মেধা নয়, পরিশ্রমটাই বেশি জরুরি। যত বেশি প্র্যাকটিস করা যাবে, তত বেশি দুর্বলতা কাটবে। যেহেতু আমার পড়াশোনায় ছেদ পড়েছিল, সেই ঘাটতি পূরণ করতে আমাকে কিছুটা বাড়তি পড়াশোনা করতে হয়েছে— সকাল ৯টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত। কোনো কোনোদিন ঘুমের সময় আরও কমে যেতো। এভাবে ২-৩ মাস পেরিয়ে অ্যাডমিশন টেস্টের আগে ট্র্যাকে আসতে পেরেছিলাম।’
তিনি বলেন, প্রকৌশল গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা ছিলো ৩ মার্চ। পরীক্ষার স্ট্র্যাটেজি হিসেবে আগের ২ দিন পড়ালেখায় সময় কম দিয়ে মানসিক চাপমুক্ত ছিলাম। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার আগেও আমি এভাবে ২ দিন চাপমুক্ত থাকার স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলাম। প্রকৌশল গুচ্ছ পরীক্ষার ছয় দিনের মাথায় ৯ মার্চ ছিল বুয়েট রিটেন এক্সাম। ওইদিন ভোরবেলা প্রকৌশল গুচ্ছের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। সকালে ঘুম ভাঙে বাবার “সিকেরুয়েটে ৪৬তম হয়েছো” কথাটি শুনে। আমি বেশ উদ্দীপিত হয়েই বুয়েট এক্সামের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সিকেরুয়েট ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট আমাকে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার জন্য সাহস জুগিয়েছে।
অনুজদের পরামর্শ দিয়ে ফারাবি বলেন, যারা আমার মতো মিডিয়াম লেভেলের শিক্ষার্থী, এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত তোমরা শুধু বোর্ড এক্সামের জোরালো প্রস্তুতিই নাও। তোমরা কোনো টপিক স্কিপ করো না। এইচএসসি পরীক্ষার আগে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ডেডিকেটেড কোনো প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। ভর্তি পরীক্ষায় অর্ধেকাংশই আসবে বোর্ড স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্ন। বাকি অর্ধেক প্রস্তুতি নিতে হবে এইচএসসি পরীক্ষার পরে।
তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিদেশি লেখকদের বইয়ে গুরুত্বারোপ না করে বাংলাদেশি বইগুলো পড়েই বেশ ভালো ফল অর্জন করা যায়। বোর্ড পরীক্ষার পর প্রকৃতপক্ষে নতুন কোনো কনসেপ্ট জানার কিছু থাকে না। কেবল টপিকগুলোর বারবার রিভিশন ও প্র্যাকটিস করাই হলো মূল কাজ। এজন্য কিছু সহায়ক বই এবং কোনো প্রতিষ্ঠানের মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করাও বেশ উপকারী।
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে ফারাবি বলেন, তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে আমি অধ্যাপনায় নিয়োজিত হতে চাই। ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য আমি সকলের নিকট আন্তরিকভাবে দোয়াপ্রার্থী।