গল্পটা মানুষের হাড়গোড়ের, শিক্ষার্থীদের সংগ্রামের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৩৪ PM , আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:৫১ PM
'বোনস লাইব্রেরি' চালু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ তো বটেই, এমনকি বিশ্বের অন্য কোথাও 'বোনস লাইব্রেরি' আছে কিনা- তা তাদের জনা নেই। কী আছে এই গ্রন্থাগারে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস'র অনুসন্ধান-
বিধাতার বিষ্ময়কর সৃষ্টি মানবদেহ। হাত, পা, পাঁজর, মাথা, মেরুদন্ড, ত্বক, পেশি, চোখ, কানসহ কত শত অঙ্গ এই দেহের আওতাভূক্ত। অঙ্গ যে শুধু সংখ্যাতেই বেশি তা নয়, এর কার্যক্রমও বেশ জটিল, গুরুতর। শরীরের ভিতর ও বাইরের এসব অঙ্গ নিয়েই লাখো কাজ সম্পন্ন হয় প্রতিদিন। গবেষণা চলে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা। কিন্তু এসব গবেষণা কি আদৌ সাধ্যের মধ্যে? নাকি ব্যয়বহুল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবদেহের একটি মাথার খুলির সর্বনিম্ন মূল্য ১০ হাজার টাকা। আর মানবদেহের পুরো সেট হাড় কিনতে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৫০ হাজার। অর্থ্যাৎ মেডিকেলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরিহার্য হলেও, ব্যায়বহুল হওয়ায় তা কেনা দুস্কর। ফলে অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ থাকে ডাক্তারদের গবেষণা। অর্জিত হয় পাঠ্যপুস্তকের তত্ত্বীয় জ্ঞান।
লাইব্রেরির কারণে মানবদেহ ও দেহের হাড় নিয়ে গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা অনেকটা সহায়ক হবে
তবে এসব থেকে মুক্তি মিলেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পড়ুয়াদের। দেশের প্রথম 'বোনস লাইব্রেরি' চালু হয়েছে এই কলেজটি; যেখানে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের হাড় সংরক্ষণ করে হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছে ভিন্নধর্মী এই পাঠাগার। মেডিকেল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আশা, এই লাইব্রেরির কারণে মানবদেহ ও দেহের হাড় নিয়ে গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা অনেকটাই সহায়ক হবে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত মেডিকেল শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডা. মনসুর খলিলের নামে গ্রন্থাগারটির নামকরণ করা হয়েছে।
বোনস লাইব্রেরিকে অনেকটা স্বপ্ন আখ্যা দিয়ে মো. জামিউর রহমান আকাশ জানাচ্ছেন, সরকারি মেডিকেল কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত কিংবা গরীব পরিবার থেকে আসে। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর ১ম বর্ষে সম্পূর্ণ নতুন জায়গায় এসে মেডিকেলের দামি বই-খাতা কেনার পর ৩০-৪০ হাজার টাকা দিয়ে এক সেট বোনস ক্রয় করা সত্যিই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মূলত সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই আমাদের বোনস লাইব্রেরি বানানোর উদ্যোগ।
৪০ জন শিক্ষার্থী একসাথে ব্যবহার করতে পারবেন পাঠাগারটি
গ্রন্থাগারটি তৈরির গল্প শুনাতে গিয়ে আকাশ জানালেন, বলতে গেলে বিশ্বে প্রথম বোনস লাইব্রেরি স্থাপনের উদ্যোগ আমরাই নিয়েছি। প্রথম দিকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দরকার ছিল; কিন্ত সেটা আমাদের কাছে ছিল না। কীভাবে করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বোনস লাইব্রেরির রুম কোথায় হবে? বোনস কোথায় পাবো? অনেক ব্যাপার। অবশেষে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে করতে একটা খালি জায়গা পেলাম; যা কোন কাজে ব্যবহার হতো না। যেই চিন্তা, সেই কাজ। বলা যায়, স্যারদের অনুমতি নিয়ে শূন্যের ওপর বানানো শুরু করলাম আমাদের স্বপ্নের 'বোনস লাইব্রেরি'। যা আজ বাস্তব।
সৃজনশীল এই উদ্যোগ অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র চমেক হাসপাতাল পরিচালনা পর্যদ সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে এই বোনস লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন। গ্রন্থাগারটি উদ্বোধন করতে গিয়ে সিটি মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বোনস লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত করেছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল এই উদ্যোগ অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের সকল মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত প্রথম কোন বোনস লাইব্রেরি। এই বোনস লাইব্রেরির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিকরণে মেয়র সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন।
আ জ ম নাছির উদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে এই বোনস লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন
জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ১৫ সেট বোনস এবং এনাটমির প্রায় ১৩০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু বোনস লাইব্রেরির। এ সংখ্যা আরও বাড়বে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও দাতাদের সহায়তায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচে নির্মিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই পাঠাগার ৪০ জন শিক্ষার্থী একসাথে ব্যবহার করতে পারবেন। অনেকেই দাবি করছেন, বিশ্বে প্রথম বোনস লাইব্রেরী স্থাপন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজই করেছে। আর করবে না কেন, ইতিহাসের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন ও বীর বিপ্লবী প্রীতিলতার চট্টগ্রাম যে সংগ্রামের, এগিয়ে যাওয়ার।