দুই বছরে ৫ চাকরি, দুই বিসিএসে ক্যাডার সুমন থামলেন প্রশাসনে
৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন মন্ডল অপু। তিনি পড়াশুনা শেষ করেই শুরু করেন বেসরকারি চাকরি। তবে এ চাকরিতে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেননি। বেসরকারি এ চাকরি ছেড়ে সিদ্ধান্ত নেন দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার। তবে পরিবারের সমর্থন না থাকায় ভেস্তে যায় সুমনের এ সিদ্ধান্তও। অবশেষে সবকিছু রেখে শুরু করেন বিসিএস প্রস্তুতি।
সুমনের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি গ্রামে। তার বাবা কানাই মন্ডল। মা চিনু রানী মন্ডল। সুমনের বাবা (অবসরপ্রাপ্ত) সেনাসদস্য। বাবার চাকরির সুবাদে তার ছেলেবেলা কেটেছে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে।
তিনি তার মাধ্যমিক ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এবং উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন নটর ডেম কলেজ থেকে। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য বুয়েটের নৌযান ও নৌযন্ত্র বিভাগে ২০১২-১৩ সেশনে ভর্তি হন।
বিএসসি শেষ করেই শুরু করেন বেসরকারি চাকরি। কিন্তু কিছুদিন চাকরি করার পর সিদ্ধান্ত নেন দেশের বাইরে পড়তে যাবেন। এ জন্য জিআরই এবং আইইএলটিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন। তবে বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় তারা সুমনের এই সিদ্ধান্তে রাজি ছিলেন না।
পরে সবদিক বিবেচনা করে এক পর্যায়ে আবেদন করেন ৪০তম বিসিএসে। তবে করোনার কারণে এ বিসিএস দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এই বিসিএসে তিনি পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে আশানুরূপ ক্যাডার না পাওয়ায় ৪৩তম বিসিএসের জন্য শুরু করেন জোর প্রস্তুতি। অবশেষে সফলও হয়েছেন। এই বিসিএসে পেয়েছেন প্রশাসন ক্যাডার।
বিসিএসে প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, বড় বোনের চাপে পড়ে ৪০তম বিসিএস আবেদনের শেষের দিন জমা দিয়েছি। ১ মাসের প্রস্তুতিতে ১ম প্রিলিমিনারি পাস করি। রেজাল্টের পর রিটেনের পড়াশোনা শুরু করলেও খুব ভালো পরীক্ষা দিতে পারিনি। এরপর আসলে বিসিএসের সাথে অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষা শুরু করি।
‘‘করোনাকালীন সময়ে পরীক্ষা স্থগিত থাকায় একটু হতাশায় ছিলাম। তবে এ সময়ে টিউশনি এবং কোচিং করানোর কারণে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়নি। টিউশনি করানোর সাথে সাথে ৪১তম বিসিএসের প্রস্তুতি নেই। এরপর ৪০তম বিসিএসের পাশাপাশি আরও ৪টি ভাইভায় অংশগ্রহণ করলেও আশানুরূপ সাফল্য আসছিল না।’’
আত্মবিশ্বাসী সুমন বলেন, আমার পরিবারের এবং বন্ধুদের আমার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। এই সময়টায় আমার বাবা, মা, বোন আমাকে সর্বোচ্চ পরিমাণ সাপোর্ট করেছে।
নিজের সাফল্যের গল্প জানিয়ে সুমন বলেন, ২০২২ সালে ১ম সাফল্য ধরা দেয় ৬ষ্ঠ ভাইভায়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করি। মাঝে সোনালি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসারে সুপারিশ পেলেও যোগদান করা হয়নি। এরপর ২০২৩ সালের মার্চে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে সিকিউরিটি অফিসার পদে যোগদান করি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটে কর্মরত আছি।
‘‘সিলেটে থাকা অবস্থাতে নিজের সর্বোচ্চ পরিশ্রমে অংশগ্রহণ করা ৪১তম বিসিএসের রেজাল্ট পাই। ৪১তম বিসিএসে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও আশানুরূপ ক্যাডার না পাওয়ায় হতাশ হয়েছিলাম। এর কিছুদিন পরেই ৪৩তম বিসিএস ভাইভায় অংশগ্রহণ করি। যদিও ৪১-এর রেজাল্ট দেখার পর ৪৩তম নিয়ে খুব একটা আশা করিনি। কিন্তু ঈশ্বর হয়তো আমাকে নিরাশ করতে চাননি। তাই ৩য় বিসিএসে এসে নিজের লক্ষ্যের ১ম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।’’
বিসিএসের দীর্ঘ যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সুমন বলেন, চার বছরের এই স্বপ্নযাত্রায় বেশকিছু সময়েই ধৈর্যচ্যুতি ঘটলেও শেষ পর্যন্ত টিকে থেকেছি আমার বাবা, মা, বোনের অনুপ্রেরণায়। বন্ধু জামিল এবং সুজনের সাথে প্রতিদিন শেয়ার করা হতাশার গল্পগুলো এখনো মনে পড়ে। এছাড়া মাটিকাটায় চায়ের আড্ডায় এলাকার বন্ধুদের সাথে প্রতিদিনের বিশ্ব রাজনীতির তর্কগুলো হতাশা কাটানোর পাশাপাশি প্রস্তুতিতেও অনেক সাহায্য করেছে।
নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সুমন এখন দেশের মানুষের সেবা করতে চান। তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৪১তমের গ্যাজেটের পর পরিবার পরিকল্পনায় যোগদান করে পরে ৪৩তম প্রশাসন ক্যাডারে জয়েন করার পরিকল্পনা আছে। বাবার মত সৎভাবে চাকরি করে দেশের জনগণের সেবা করতে চাই। একজন বিসিএস ক্যাডার হিসেবে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা করতে পারলে সেটাই হবে আমার সার্থকতা।