এইচএসসির জিপিএ ২.৯০, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহাব হলেন বিসিএস ক্যাডার
৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে (বাংলা) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. শাহাব উদ্দিন। দ্বীপঞ্চালে বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত পরিবারের শাহাব কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-২.৯০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ফলে ভর্তি হতে পারেননি শীর্ষস্থানীয় কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন নিজ কলেজের বাংলা বিভাগে।
সেখান থেকেই প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরে সিদ্ধান্ত নেন বিসিএস দেবেন। তবে প্রথমবারের মতো ৪০তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অবশেষে সাফল্য মেলে ৪৩তম বিসিএসে।
শাহাবের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার জাগিরা ঘোনা গ্রামে। বাবা আব্দুল বারী পেশায় একজন চালক ছিলেন। মা ছকিনা বেগম। তিনি মাধ্যমিক পাস করেন মহেশখালী আইল্যান্ড হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে। কলেজে ভর্তির জন্য তাকে তার গ্রাম ছেড়ে আসতে হয় কক্সবাজার সরকারি কলেজে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নানা কারণে জিপিএ ২.৯৫ পান।
ভালো ফলাফল না হওয়ায় পারেননি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। অবশেষে ভর্তি হন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে কক্সবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগে। সেখান থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। বিসিএস দেওয়ার সিধান্ত নেন তার অর্নাস পড়াকালে। প্রথমে ৪০তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে রিটেনে ফেল করেন। তবে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিসিএস সফলতার অনুভূতি জানাতে গিয়ে শাহাব উদ্দিন বলেন, অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আশা ছিল ক্যাডার পাব। ছোটবেলা থেকে আমার লক্ষ্য ছিল বিসিএস ক্যাডার হবো। রেজাল্ট পাওয়ার পর প্রথমে আমি মা-বাবাকে জানাই। আমার বাবা শুনে কান্নায় আবেগপ্রবণ হয়ে যান। আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
বিসিএস দেওয়ার সিধান্ত নেন কখন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি যখন অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি, তখন থেকেই আমি ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা শুরু করি। আমার বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আমাকে মোটামুটি একটা গাইডলাইন দিয়েছেন। সেভাবে নিজেকে প্রস্তত করার চেষ্টা করেছি। এরপর থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।
বিসিএসের প্রস্তুতির বিষয়ে শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রথমে ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে মোটিভেশনাল বা দিক নির্দেশমূলক ভিডিও দেখতাম। পরে একসেট বই কিনি। যে টপিকগুলো বুঝতাম না, সেগুলো ইউটিউবের ভিডিও দেখে সমাধান করতাম। এরপর কোচিং সেন্টারে প্রচুর মডেল টেস্ট দিতাম। প্রিলি পাস করার পর লিখিত মডেল টেস্ট দিয়েছি। ভাইভার জন্য নিজে নিজে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
আরো পড়ুন: ‘মেডিকেলে চান্স না পেলেও সমস্যা নেই’ বাবার এমন উক্তিই ছিল তার অনুপ্রেরণা
সফলতায় কার ভূমিকা বেশি ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সফলতায় অনেকেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাদের নাম লিখে শেষ করা যাবে না। তবে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমার কিছু ভালো বন্ধু ছিল। আমরা একে অপরকে পড়াশোনার বিষয়ে সহযোগিতা করতাম। আমার সব বন্ধু এখন ভালো ভালো জায়গায় চাকরি করে। আমি আমার সব শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে কৃতজ্ঞ।
শিক্ষার্থীরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিসিএস হল ধৈর্যের পরীক্ষা। এখানে মেধা,পরিশ্রম আর নিয়মিত পড়াশোনা করা লাগে। নতুনদের বলব, লেগে থাকুন। নিজের দুর্বলতা বের করুন। বিসিএসের সিলেবাসটা ভালো করে বুঝতে হবে। মানুষ চাইলে কি করতে পারে না। যদি আপনি লেগে থাকেন, সফলতা আসবেই।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শাহাব উদ্দিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার প্রতি আমার টান ছিল। শিক্ষার একজন আদর্শ কারিগর হতে চাই। ছাত্র-ছাত্রীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই হল আমার লক্ষ্য। আমার ইচ্ছে আছে, আমি আমার পঠিত বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করব। পাশাপাশি সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জাতির পিতার দেখানো স্বপ্নের সোনার বাংলার একজন আদর্শ সৈনিক হতে চাই।