২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:২৮

নাসার উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় স্থান পেল মাধ্যমিকের ৫ তরুণের প্রজেক্ট

নাসার উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় ১০ম মাধ্যমিকের ৫ তরুণের প্রজেক্ট  © টিডিসি ফটো

‘নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় ১০ম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের এ মহাকাশ সংস্থা আয়োজিত প্রতিযোগিতাটিতে ‘এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্ট’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের সমন্বিত দল ‘নট এ বোরিং টিম’।

‘নট এ বোরিং টিম’র সদস্যরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. ত্বসীন ইলাহি (অধিনায়ক), নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহদী বিন ফেরদৌস, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. নূর আহমেদ, নওগাঁর নজিপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী নাদিম শাহরিয়ার অপূর্ব এবং নরসিংদীর লরেটো স্কুলের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী মো. সঞ্জীব হোসেন।

এই দলটির মেন্টর ছিলেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান। 

‘নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ’কে খুদে উদ্যোক্তাদের বিশ্বসেরা মঞ্চ বলা হয়ে থাকে। ১৩-১৮ বছর বয়সের যে কেউ এতে অংশ নিতে পারেন। মোট ৪ ধাপে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হয়। প্রতিযোগিতায় প্রতিটি দলকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কাজ করতে হয়। একটা ফিল্ডের সমস্যা সমাধান করতে হয়। তারপর সেটার মডেল বানাতে হয়। সমাধানটা বাস্তব জীবনে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে হয়। উদ্ভাবন করার পর প্রজেক্টটিকে প্রোডাক্টে রূপান্তর করে এটার একটি বিজনেস মডেল রেডি করতে হয়।

‘নট এ বোরিং টিম’র অধিনায়ক মো. ত্বসীন ইলাহি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ‘নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্টেজ পার করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এ প্রতিযোগিতার ফাইনাল স্টেজে গিয়েছিল বাংলাদেশের একটি দল। নয় বছর পর আমরাই দ্বিতীয়বারের মতো তৃতীয় স্টেজ পার করতে পেয়েছি এবং বর্তমানে অল্টারনেটিভ ফাইনালিস্ট হিসেবে অবস্থান করছি।

তৃতীয় স্টেজে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশ থেকে ২৫০টিরও বেশি দল প্রতিযোগিতা করে জানিয়ে তিনি বলেন, তুমুল প্রতিযোগিতা পূর্ণ এই কম্পিটিশনে আমাদের মেন্টরসহ ৬ সদস্যের দল বিশ্বের মধ্যে ১০ম হয়েছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের। এ বছর রেকর্ড ৩ হাজার ৪০০ জন অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে পুরো বিশ্ব থেকে ৪ ক্যাটাগরিতে ১০টি টিমকে বিশ্ব সেরা ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ‘নট এ বোরিং টিম’ স্থান করে নিয়েছে।

পরিবেশ এবং শক্তি ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করেছেন তারা। পরিবেশকে বাঁচাতে পারে এবং শক্তি সংরক্ষণ করতে পারে এরকম কোন সমস্যা সমাধানের কাজ করতে হয়েছিল। মূলত সড়ক দুর্ঘটনার ফলে পরিবেশ এবং শক্তির কি ক্ষতি হয় এবং সেটার জন্য একটি সমাধানও বের করা হয়েছে তাদের প্রজেক্টে। দেশের ক্ষুদে তরুনদের এই প্রজেক্টির নাম ছিল ‘Smart Road Safety Beast’। এই সিস্টেমটি মূলত গাড়িতে লাগানো থাকবে এবং এটি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে তাদের মত। 

‘নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ’-এ অংশগ্রহণ করতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রস্তুতি শুরু করেন জানিয়ে দলটির অধিনায়ক আরও বলেন, সবাই নাম ডিটেইলস দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলাম। তারপর লীন ক্যানভাস রাউন্ড। এই রাউন্ডে জয় পাওয়া অবিশ্বাস্য ছিল। তবে আমরা পেরেছিলাম। আমাদের ১৫ হাজার টাকার কম্পোনেন্ট পুড়ে যাওয়ায় হার্ডওয়্যার করা হয়নি, অ্যানিমেশন করেছিলাম।

দলের কারোরই ব্যবসা সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না তাই কমার্সের বিষয়গুলো শিখতে সময় লেগেছিল জানিয়ে ত্বসীন বলেন, ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা বাড়াতে বড় ভাইদের কাছে পরামর্শ নিয়েছি। রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। টিমের সদস্যদের মধ্যে তিনি ও মাহদী টানা ১৯ ঘণ্টা কাজ করেছেন। সাবমিশন ডেডলাইনের শেষ ৭২ ঘণ্টায় মাত্র ১০ ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন তিনি। অন্যরাও ঠিক মতো ঘুমায় নি। 

সকলের কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, নূর ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং সফটওয়্যার ডেভেলপ করে। মাহাদী বিভিন্ন বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে এবং তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা নিতে থাকে। নাদিম হার্ডওয়্যার দেখতে থাকে এবং সঞ্জীব বিভিন্ন রিসার্চ পেপার পড়তে থাকে। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি সামনে আসলেও কেউ হাল ছেড়ে দেয়নি। এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিন রাত টানা কাজ করে প্রজেক্ট সাবমিট করি। 

‘‘আমরা ৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। ভয়ে ছিলাম কারণ গণিত পরীক্ষার আগের দিন ফলাফল ঘোষণা হয়। ফলাফল আসার পর নিজ চোখে বিশ্বাস করতে পারিনি যে আমরা গোটা বিশ্বের সবাইকে হারিয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছি।’’

প্রতিযোগিতার সর্বশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে ত্বসীন বলেন, আমরা বর্তমানে সরাসরি ফাইনালে অংশগ্রহণ করবো কিনা সেটা কয়েক সপ্তাহ পর জানা যাবে। যদি অংশগ্রহণ করতে পারি তাহলে এপ্রিলে আমরা নাসার ঐতিহাসিক জনসন স্পেস সেন্টারে Conrad Innovation Summit 2024-এ অংশগ্রহণ করব। 

তিনি আরও বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশে আমরা নিজেরা প্রযুক্তির মাধ্যমে স্যাটেলাইট তৈরি করব। দেশীয় প্রযুক্তিতে স্যাটেলাইট নিজের দেশ থেকে উৎক্ষেপণ করব। সব কাজ বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের দ্বারা সম্পন্ন হবে। একটি অন্যরকম বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা বুকে লালন করি। আমাদের বিশ্বাস সেদিন দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশও চন্দ্র ও মঙ্গল জয় করবে।

প্রসঙ্গত, নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জে’ প্রতিযোগিতাটির আয়োজক কনরাড ফাউন্ডেশন নামক একটি সংস্থা। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিযোগিতাটি প্রত্যেক বছর আয়োজন করা হয়। বর্তমানে নাসা, ডেল টেকনোলজিস এবং বিশ্বের অনেক নামিদামি টেকজায়ান্ট কোম্পানি এ প্রতিযোগিতার সাথে যুক্ত রয়েছে।