স্বর্ণপদক পাচ্ছেন ইস্ট ওয়েস্টের লামিয়া, হতে চান বাবার মতো ইঞ্জিনিয়ার
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ২৩তম সমাবর্তন আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনে ডিগ্রি প্রদান করা হবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২ হাজার ৮৬১ জন শিক্ষার্থীকে এবং স্বর্ণপদক দেওয়া হবে চার জন শিক্ষার্থীকে। সমাবর্তনে স্বর্ণপদকে মনোনয়নপ্রাপ্ত চারজন শিক্ষার্থীর একজন বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতক ডিগ্রিধারী লামিয়া তাসনিম মাহা।
কুমিল্লা জেলার নোয়াপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আবুল কালাম ও কুলসুম আক্তার দম্পতির বড় মেয়ে লামিয়া তাসনিম মাহা। তিনি ঢাকার লালমাটিয়ায় অবস্থিত একাডেমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ‘ ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করেন। তবে তার শৈশব কেটেছে মধ্যপ্রাচ্যে।
লামিয়া জানান, ছোট বেলায় যখন আত্মীয়রা তাকে জিজ্ঞাসা করতেন বড় হয়ে তিনি কী হতে চান? তখন তিনি কোনো নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারতেন না। তরুণ বয়সে সবকিছু নতুন ও উত্তেজনাপূর্ণ মনে হয়েছিল এবং তিনি ভাবতেন কীভাবে শুধু একটি পেশা বেছে নেওয়া যায়।
লামিয়া তাসনিম মাহার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার। বাবার মতো একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে চান তিনি। তার বাবার অফিসের কাজে তাদের বিভিন্ন শহরে বদলি হতে হয়েছে। এর মধ্যে কিছু শহর এতটাই দুর্গম ছিল যে সেখানে কোনো স্কুল ছিল না। কিন্তু তার বাবা তার শিক্ষার পথে বাধা হতে দেননি। তার বাবা প্রতিদিন অফিস থেকে আশার পর যতই ক্লান্ত লাগুক না কেনো তাকে ও তার বোনকে পড়াতেন। লামিয়া চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত তার মা এবং বাবার কাছ থেকে পড়াশোনা করেছেন। এই শৈশব স্মৃতি তার খুব প্রিয়।
লামিয়ার মাও তার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। লামিয়া যখন সপ্তমশ্রেণি শেষ করেন তখন তার মা এবং তার বোন বাংলাদেশে আসেন। তার বাবা চাকরির সুবাদে বিদেশেই ছিলেন। ওই সময় তার মা তাকে স্কুল ও কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নেন। যখন কোচিং এ ক্লাস করতেন, তখন তার মা ওয়েটিং রুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন। পৃথিবীতে আসার মুহূর্ত থেকে লামিয়ার মা লামিয়ার মানসিক সমর্থন, বন্ধু এবং তার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মনে করেন যে মা তার পাশে থাকলে তিনি যেকোনো কিছুর সমাধান করতে পারে। এজন্য লামিয়া সবসময়ই ভাবতেন বাবা- মা এই দু'জনকে গর্বিত করতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যান লামিয়া। তবে থেমে থাকেনি অদম্য এ শিক্ষার্থী। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে ভর্তি হন রাজধানীর আফতাবনগরে অবস্থিত বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তিনি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয় এবং এভাবে তিনি তার লক্ষ্য অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে যান। এ বিভাগে এসে শিক্ষকের দিকনির্দেশনা, পাঠদান ও সহযোগিতা ও সমর্থনে তিনি মুগ্ধ হন এবং অনুপ্রেরণা পান সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
এ যাত্রায় হতাশ করেননি তিনি। বাবা - মা ও শিক্ষকদের ভালবাসায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম সমাবর্তনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী হিসেবে স্বর্ণপদকে মনোনীত হয়েছেন।
স্বর্ণপদক পাওয়া সম্পর্কে লামিয়া বলেন, যখন আমি জানতে পারলাম যে আমাকে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে, তখন আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি। আমি অবশেষে আমার বাবা-মা এবং আমার শিক্ষকদের গর্বিত করতে পেরেছি। কারণ তাদের জন্যই আজ আমি এখানে এসেছি।
ভবিষ্যৎতে বিদেশে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন লামিয়া এবং এখন সে উদ্দেশ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন। জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে লামিয়া বলেন, কখনও কখনও জীবন জটিল মনে হবে। জীবন দ্রুত পরিবর্তন হবে, পরিবর্তন ভীতিকর মনে হবে কিন্তু পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুবক। সুতরাং, আপনার নিজের পরিবর্তন চয়ন করুন এবং অনুশোচনার কোনো সুযোগ দেবেন না। তবে এই যাত্রায় আনন্দের ছোট মুহূর্তগুলি উপভোগ করতে ভুলবেন না। আপনার বন্ধুদের সাথে সময় কাটান ও স্মৃতি তৈরি করুন কারণ আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মিস করবেন ঠিক যেভাবে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মিস করতে যাচ্ছি।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আফতাবনগর খেলার মাঠে আয়োজন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের সম্মতিক্রমে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ সময় তিনি গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে ডিগ্রি প্রদান করবেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক অ্যালান ম্যাকিনন (Professor Alan Mackinnon)।
এছাড়াও সমাবর্তনে পর্যায়ক্রমে বক্তব্য রাখবেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামস্ রহমান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন সৈয়দ মনজুর এলাহী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।