৭ সরকারি চাকরি ও ৩ বিসিএস জয় করা ইমন থিতু পররাষ্ট্র ক্যাডারে
প্রথমে ৪০তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডার, এরপর ৪১তম বিসিএসে পেয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে সুপারিশ। সবশেষে ৪৩তম বিসিএসে পেয়েছেন পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশ। টানা তিন বিসিএসে সাফল্যের মালিক শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন ইমন।
সাখাওয়াতের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়ইহাজার থানার ফাউসা বাজারে। তার বাবা আব্দুল হাকিম। আর মা শিরীন বেগম। ইমন তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
স্থানীয় এএম বদরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে মাধ্যমিক এবং সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন ইমন। পরবর্তীতে তিনি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেনারি মেডিসিন অ্যান্ড এনিমেল হাজবেন্ড্রীতে ভর্তি হন।
মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করলেও উচ্চশিক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে পারেননি ইমন। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি বলে জানান। এমনকি চাকরির প্রস্তুতির কারণে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা হয়নি তার।
চাকরির প্রস্তুতির মাঝেই জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেন ইমন। তার স্ত্রীর নাম হোমায়রা কামাল। বর্তমানে ইমন ৪০তম থেকে প্রাণীসম্পদ ক্যাডারে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কর্মরত আছেন।
ইমন বলেন, এখন পর্যন্ত ৭টি সরকারি চাকরি পেয়েছি। যার মধ্যে পরপর তিন বিসিএসে সুপারিশ অন্যতম। প্রথমে ৪০তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডার, তারপর ৪১তম বিসিএসে পরিবার পরিকল্পনা এবং সবশেষ ৪৩তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।
টানা তিন বিসিএসের এ যাত্রা মোটেও সহজ ছিলো না ইমনের। বিসিএস যাত্রায় নিজের সংগ্রামের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সফলতায় আমি ওয়ান ম্যান আর্মির মতই ছিলাম। লিভিং কস্ট এবং স্টাডি কস্ট মেটাতে প্রচুর স্ট্রাগল করতে হয়েছে। তবে বর্তমানে আমেরিকান প্রবাসী শামীম আহমেদ পুলক নামে এক বন্ধু আমার স্ট্রাগলিং পিরিয়ডে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট দিয়েছে।
ইমনের এমন সাফল্যে স্ত্রী হোমায়রার অবদানও কম নয়। তিনি বলেন, হোমায়রা আমাকে প্রচুর অনুপ্রাণিত করতো। শেষ বিসিএসে আমি যেন প্রথম চয়েস পররাষ্ট্র ক্যাডার পাই, সেজন্য অনেক দোয়াও করতো সে। আর আমি ভাবতাম হয়তো দ্বিতীয় পছন্দ পুলিশ বা অন্য ক্যাডার আসবে। কিন্তু আমার স্ত্রী সব সময় বিশ্বাস করতো যে, আমার প্রথম চয়েস পররাষ্ট্র ক্যাডারই আসবে।
‘‘অবশেষে তাই হল। আমার এ সাফল্যে সে অসম্ভব খুশি হয়েছে। আমার মতো তারও দেশ-বিদেশে ভ্রমণের শখ। এখন পররাষ্ট্র ক্যাডার পাওয়াতে দু’জনের খুশির মাত্রাটা আরও বেড়ে গেছে।’’
নিজের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ইমন আরও বলেন, আমার লাইফে অনেকবার বিভিন্ন স্বপ্ন পূরণের কাছে গিয়েও পা ফসকে গেছে। বাট এবারের অর্জন আমার অতীতের সকল ব্যর্থতাকে নিমিষেই মুছে দিয়েছে। তাই ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর (রেজাল্ট প্রকাশের দিন) ছিল আমার লাইফের সবচেয়ে অবিস্মরণীয় দিন।
তিনি বলেন, আমার অনুভূতি প্রকাশের জন্য যত বিশেষণই ব্যবহার করি না কেন, একটু বোধ হয় কমই হয়ে যাবে। নিজের ফোনে পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে রেজাল্ট দেখার পর আনন্দে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট ননস্টপ চিৎকারই করেছি।
‘‘রেজাল্ট প্রকাশের কয়েকদিন পর পর্যন্ত উত্তেজনায় ঠিকঠাক ঘুম আসতো না। ঘুম থেকে উঠে মাঝে মাঝে ভাবতাম আসলেই কি আমি ফরেন ক্যাডার হয়ে গেছি! আসলে একটি ড্রিম লাস্ট ৮ বছর ধরে বুনে আসার পর যখন ফাইনালি আল্লাহর রহমতে সেটা ফুলফিল হয়, তা কতটা আনন্দের সেটা বলে বোঝানোর মত নয়।’’
টানা তিন বিসিএসে সাফল্য পেলেও পররাষ্ট্রকেই বেছে নিয়েছেন ইমন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, একজন দক্ষ কূটনীতিক হতে চাই। বিশেষত একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করে এদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাই। সর্বোপরি বিদেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করতে চাই।