ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের বিজয় কেতনধারী ইউআইইউ
কোনো ধরনের তথ্য পরিবর্তন কিংবা মুছে ফেলা সম্ভব নয়—এমন অতি প্রয়োজনীয় নব প্রযুক্তিভিত্তিক ধারণা ব্লকচেইন। মূলত ডিজিটাল এ প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হয় লেনদেন সংরক্ষণ করার মতো জটিল কাজে। বিশ্বব্যাপী নব প্রজন্মের এ ধারণাকে সহজ থেকে সহজতর করা এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী আয়োজিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড। বৈশ্বিক এই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়েই সর্বশেষ আসরে নিজেদের প্রমাণ করল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ)’ দল ‘অ্যাপোক্যালিপস’।
শ্রেষ্ঠত্বের এ গল্পের পেছনের গল্প জানতে টিম ‘অ্যাপোক্যালিপস’র অন্যতম সদস্য এবং ইউআইইউ'র কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সহিদ হোসেন মুস্তাকিমের সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তিনি জানান, অলিম্পিয়াডের ফাইনালে যখন গোল্ড চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমাদের টিমের নাম ঘোষণা করা হয়—সেটি ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত। কারণ, ওই প্রতিযোগিতায় এটিই ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রথম কোনো স্বর্ণ পদক জয়। বৈশ্বিক শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষ এ অর্জনকে নিজেদের একার নয় বরং বাংলাদেশের বলেও মনে করেন এই তরুণ শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জে যেভাবে শ্রেষ্ঠত্বের জয়মালা বুঁনলো ইউআইইউ
সহিদ হোসেন মুস্তাকিম জানান, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে দেখলাম, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনন্য সব আইডিয়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। আমরা পারব কি, পারব না—এমন ভাবনায় পড়লাম। যদিও লাঞ্চ শেষে জানানো হলো আমরা শীর্ষ পাঁচে। এখন জুরি বোর্ডের সামনে আমাদের পিচ করার চ্যালেঞ্জ। আমরাই একমাত্র বাংলাদেশি টিম যারা এটার জন্য নির্বাচিত হয়েছি। দেশের নাম উজ্জ্বল বা সম্মান বয়ে আনার দায়িত্বও তখন আমাদের ছিল।
‘অ্যাপোক্যালিপস’র দলনেতা ও ইউআইইউ’র কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আহমেদ বলছেন, ব্লকচেইন নিয়ে আগামী দিনে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তার এবং দলের অন্য সদস্যদের। সাফল্যের গল্প-আড্ডায় এই শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ব্লকচেইন নিয়ে আমরা বিগত এক বছর ধরে কাজ করছি। এর আগে আমরা জাতীয় পর্যায়ে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করি এবং সেখান থেকেই আমাদের পথচলা শুরু।
বৈশ্বিক শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে টিম অ্যাপোক্যালিপসে ছিলেন ইউআইইউ’র কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আহমেদ, এস এম জিসানুল ইসলাম, সহিদ হোসেন মুস্তাকিম এবং আদিবা তাসনিম আনাম।
সাদিয়া আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এবং বর্তমান বিশ্বে এখনও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে—যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এছাড়াও প্রযুক্তির নিরাপত্তা এবং আধুনিকায়নের ধারণা থেকেই ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজের আগ্রহ জন্মায়। আগামী দিনে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ প্রযুক্তির উন্নতিতে কাজ করার ইচ্ছে এবং সেজন্য প্রাপ্ত পুরস্কারের সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করার কথাও জানান তিনি।
নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আসরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গোল্ড উইনার হয়েছে ইউআইইউ’র ‘অ্যাপোক্যালিপস’। পাশাপাশি তাদের এ অর্জন বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবও। অত্যাধুনিক ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করা ইন্টারন্যাশনাল ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড প্রতিষ্ঠিত ২০১৭ সালে।
আরও পড়ুন: চাকরির বাজারে ‘ডে ওয়ানে’ কাজ পাবেন ইউআইইউ স্নাতকরা
গল্প-আলাপনে তরুণ এই শিক্ষার্থী বলেন, পিচ দেওয়ার পর আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলো—স্টেজে আমাদের কী নামে ডাকা হবে? তখন আমরা টিমের নামেই ডাকার জন্য বললাম। ততক্ষণে বুঝে গেছি, আমাদের অবস্থান শীর্ষ তিন-এ; যা শুধু আমাদের জন্য না; দেশের জন্যও গর্বের।
প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ স্কোর পেয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে মর্যাদাপূর্ণ গোল্ড উইনার অর্জনের পাশাপাশি ইউআইইউ’র টিম অ্যাপোক্যালিপস তাদের অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য অর্জন করেছে একটি প্রশংসাপত্রসহ চ্যাম্পিয়নদের জন্য নির্ধারিত প্রাইজমানি। বৈশ্বিক শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে টিম অ্যাপোক্যালিপসে ছিলেন ইউআইইউ’র কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আহমেদ, এস এম জিসানুল ইসলাম, সহিদ হোসেন মুস্তাকিম এবং আদিবা তাসনিম আনাম।
বাংলাদেশ এবং বর্তমান বিশ্বে এখনও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে—যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। সেজন্য আমাদের ব্লকচেইন নিয়ে আগামী দিনে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে—সাদিয়া আহমেদ, টিম লিডার, অ্যাপোক্যালিপস।
বৈশ্বিক আসরে বড় অর্জন হলেও এখন থামার ইচ্ছে নেই দলটির। ব্লকচেইন প্রযুক্তি উন্নয়নে তারা ভবিষ্যতে আরও বেশি কাজ করতে চান। পড়াশোনার ও ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন জানিয়ে মুস্তাকিম বলেন, এককথায় ‘নিরলস প্রচেষ্টা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে আমাদের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে’ এবং সামনের দিনেও আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। দল হিসেবে নিজেদের আইডিয়াগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার ছাড়াও আধুনিক ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য মেরিট পুরস্কার পেয়েছে ইউআইইউ’র আরও একটি দল ‘টিম আনচেইনড’। পাশাপাশি ‘টিম অ্যাপোক্যালিপস’ দেশে আয়োজিত ৪র্থ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে ২য় স্থান অর্জন করে স্টুডেন্ট ক্যাটাগরিতে।
বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ের লড়াইয়ে খুব কম সময় এবং চ্যালেঞ্জিং পথচলার কথা স্মরণ করে মুস্তাকিম বলেন, আমাদের টিম মেম্বার জিসান ও সাদিয়ার নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এত অল্প সময়ের মধ্যে এটি করা সম্ভব হয়েছে । আমরা ভাইবার পর আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এমনকি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পর্যন্ত যাই নি। সাদিয়ার ফোনে বিষয়টা জানতে পারলাম। ফলাফল পেয়ে নিজেই অবাক হয়ে গেছি। এত অল্প সময়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন ভাবনার অতীত ছিল বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি একশ’ শিক্ষার্থীর ৮ জন পড়েন বিনা খরচে
প্রতিযোগিতার এবারের আসরে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ, কানাডা, চীন, ইউরোপ, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, কাজাখস্তান, মেসিডোনিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মঙ্গোলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপাইন, রাশিয়া, তাইওয়ান, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য এবং ভিয়েতনামসহ সর্বমোট ২০টি দেশ থেকে প্রায় ৪৫টি দল। আসরে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অংশগ্রহণকারীরা তুলে ধরেন স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং দক্ষতা।
বৈশ্বিক আসরের ছোট অর্জনের হিসেবও কম নয় দলটির। এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের পাশাপাশি সংযুক্তি হয়েছে সীমানাহীন বিস্তৃত একটি তরুণ নেটওয়ার্কের। পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য এসেছে একটি বৈশ্বিক সাফল্য এবং স্বীকৃতি।