‘স্বল্প সময়ের সঠিক ব্যবহার’- নীতিতে কর ক্যাডার সামিয়া
চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ এর মেয়ে সামিয়া নাসির। বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরেই। ডা. খাস্তগির সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচ এস সি এর পাঠ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি নিয়েছিলেন বিসিএসের প্রস্তুতি। সে পথ ধরেই ৪৩ তম বিসিএসে ট্যাক্স (কর) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া। গল্পে-আলাপে সেসব কথাই তুলে ধরেছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে শিক্ষায় গ্রাজুয়েট এই মেধাবী।
সামিয়ার ভাষ্য, একদম শুরু থেকেই বিসিএস দেয়ার জন্য সুপরিকল্পিত কোনো চিন্তা ছিল না। শুরু থেকেই চেয়েছিলাম, যে বিভাগে পড়াশোনা করছি সেটার উপর ক্যারিয়ার গড়তে। ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বের হই, এরপর ২০১৯ এ আন্তর্জাতিক এনজিও-তে চাকরিতে পাই। ২০২০ সালে এসে সে চাকরিও ছেড়ে দেই। শিক্ষার্থী থাকাকালীন সবসময়ই স্বেচ্ছাসেবামূলক এবং গবেষণা সংক্রান্ত কাজের সাথে যুক্ত ছিলাম। শুরু থেকেই পরিবার থেকে বিসিএস দেওয়ার একটা চাপ ছিল। মূলত এসব কারণেই ২০২১ সালে বিসিএস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
যদিও এর আগেও বন্ধুদের সঙ্গে বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল সামিয়ার। তবে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন ৪৩তম বিসিএস থেকে। প্রিলিমিনারি পাশ করার পর চাকরির পাশাপাশি লিখিত এবং ভাইভার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন সে সময়। বিসিএস দেওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে সামিয়া জানান, ২০২০ সালে কোভিডের সময় কোনো কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন না। দীর্ঘ একটা সময় বেকারত্বে ভোগার পর ভালোভাবে বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্বান্ত নেন ।
চাকরির পাশাপাশি কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন জানতে চাইলে সামিয়ার বক্তব্য, দিনের ১০-১২ ঘন্টাই বাসার বাইরে চাকরির জন্য ব্যয় হত। তাকে বিসিএস প্রস্তুতিতে মূলত সাহায্য করেছে সময় এবং বিষয়বস্তু অনুযায়ী পরিকল্পনা করা। মাসিক এবং দৈনন্দিন পরিকল্পনা থাকতো তার। প্রতিদিনের একটা টার্গেট থাকতো, পারি বা না পারি দৈনন্দিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকতো। আমার প্রস্তুতির প্রথম ধাপই ছিল প্ল্যানিং। সিলেবাস অনুযায়ী ম্যাপিং করে রাখতাম। একসময় দেখা যেত, পরিকল্পনা অনুযায়ী শতভাগ পড়া সম্পন্ন না হলেও অনেকখানিই শেষ হয়েছে। বিষয়টি আমাকে লিখিত পরীক্ষায় অনেক সাহায্য করেছে। বন্ধের দিনগুলোতে চেষ্টা করতাম গ্যাপগুলো পুষিয়ে নিতাম। যেহেতু চাকরি করে খুব বেশি সময় পেতাম না, তাই সব না পড়ে গুরুত্বপূর্ণ পড়াগুলো বেছে বেছে পড়তাম। দিন শেষে আমার মাথায় থাকত যেন একটা স্মার্ট প্রেজেন্টেশন দিতে পারি। এক্ষেত্রে পরিবার এর সহযোগিতামূলক মনোভাব আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমার বর চেষ্টা করতেন আমাকে অন্যান্য কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে, বিশেষ করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তিনি চেষ্টা করতেন আমি যতটুকু সময় পাই তা যেন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি এবং নিজের প্রতি মনোযোগ দিতে পারি।
ক্যাডার চয়েজের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বলব ব্যক্তি অনুযায়ী এর ভিন্নতা থাকে। প্রথমে আপনাকে দেখতে হবে আপনার আগ্রহ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা কোথায় । আরেকটা বিষয় বলবো- বিভিন্ন ক্যাডারসম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটুকু থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় প্যাশন, ব্যক্তিত্বের ধরন এ বিষয়গুলোও প্রাধান্য পেতে পারে।
বিসিএস যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার একটি ভালো সুযোগ বলে মনে করেন সামিয়া। তবে এক্ষেত্রে হুজুগে না এগিয়ে নিজেকে যাচাই করে নেওয়া ভালো। বিসিএস প্রস্তুতিতে এবং চূড়ান্ত ফলাফলে যেহেতু দীর্ঘ সময় লাগে সেটা মাথায় রাখা ভালো। বিসিএস প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। কারণ দিন শেষে আপনার দক্ষতাই আপনাকে সাহায্য করবে।
সবশেষ নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে সামিয়া জানান, দেশের জন্য ভালোবাসা এবং দেশের সেবার যে ইচ্ছা রয়েছে সে অনুযায়ী যেন কাজ করে যেতে পারেন সেটাই তার স্বপ্ন।