বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়ে পররাষ্ট্র ক্যাডারের পথে ঢাবির হাবিব
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান খান। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে পররাষ্ট্র ক্যাডার ক্যাটাগরিতে ২০তম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
হাবিবুর রহমানের বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদী থানার শফিপুর ইউনিয়নের ব্রজমোহন গ্রামে। তার বাবার নাম আলী আহমেদ খান। হাবিবুর যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তেন তখন তার বাবা মারা যান। ৮ ভাই বোনের বড় সংসারে এরপর তার বড় ভাই পরিবারের হাল ধরেন। কিন্তু বড় ভাইও ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি মারা যান। বাকি ভাইদের মধ্যে এক ভাই সাউথইস্ট ব্যাংকে ও এক ভাই একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন।
শিক্ষাজীবনে হাবিবুর সফিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং হাজী সৈয়দ বদরুল হোসেন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০-১১ সেশনে ভর্তি হয়ে বিবিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গেল বছরের আগস্টে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হাবিবুর। তার স্ত্রীও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন অফিসার।
নিজের সফলতা নিয়ে হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এটা এখন আমার নতুন পরিচয়। সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। এমন সফলতার পর আমার অনুভূতি ভাষায় বর্ণনা করার মত নয়। অফিস শেষ করে আমি যখন বাসায় ফিরলাম মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল ‘বাবা, এই পৃথিবীতে তোমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার আছে!’ তখন এক বাক্যে বলে ফেললাম আমার এই পার্থিব জগতে কিছু চাওয়ার নেই মা, আমি শুধু এখন সকলের জন্য বেঁচে থাকতে চাই।
সফলতার পেছনের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমার সফলতার পেছনের গল্পটা খুব কঠিন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করার সাথে সাথেই একটি প্রাইভেট ব্যাংকের এমটিও হিসেবে যোগদান করি। কখনই চাকরিবিহীন অবস্থায় বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। স্বপ্ন ছিল সেন্ট্রাল ব্যাংকার হবো। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করার কারণে পড়াশোনার তেমন সুযোগ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের সকল সহকর্মীবৃন্দ আমার প্রতি খুব আন্তরিক ছিলেন এবং আমার বিসিএস যাত্রায় তারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে ব্যাচমেট আব্দুল্লাহ আল জুবায়েরের সহযোগিতা অতুলনীয় ছিল।
চাকরিরত অবস্থায় যারা বিসিএসের প্রস্তুতি নেন আমার এ সফলতা তাদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে উল্লেখ করে হাবিবুর বলেন, আমি প্রথমে ৩৮তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করি। ৪৩তম বিসিএসের আগে আমি আরও তিনবার বিসিএস দিয়েছিলাম প্রতিবারই নন-ক্যাডারের জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত হই। ব্যর্থ হওয়ার পর প্রতিবারই মন খারাপ হয়েছে, কিন্তু হাল ছেড়ে দেইনি। কারণ আমার কৌশলই ছিল এমন যে আমি যেহেতু চাকরি করি সুতরাং অনেক বেশি পড়াশোনা করতে সময় পাবো না। তাই কয়েকটি বিসিএস মিলে আমি বিসিএসের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেই। অবশেষে ৪৩ এ এসে আশা পূরণ হলো।
সফলতার পেছনে স্ত্রীর ভূমিকা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুই বছরের মধ্যে আমাদের বিয়ে ছাড়া এটাই ছিল আমার স্ত্রীর জীবনে সবচেয়ে বড় সুসংবাদ। আমার ভাইভা ভালো হওয়ার একটি বড় কারণ হলো সে। আমাদের বিয়ের এক মাস দশ দিন পরেই আমার ভাইভা হয়। ভাইভার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তাকে একদমই সময় দিতে পারিনি বলে তার মন খারাপ হলেও সে কখনো অভিযোগ করেনি।
তিনি আরও বলেন, ভাইভায় জিজ্ঞেস করতে পারে এরকম গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় আমার স্ত্রী আমাকে অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে নোট করে পড়ার জন্য প্রস্তুত করে দিত। এমন একটা সময় গিয়েছিল যখন ২০ দিন পরে আমি তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বৈবাহিক জীবনের প্রথমদিকে তার এমন ত্যাগ স্বীকার আমি ভালোবাসার মাধ্যমে পুষিয়ে দিতে চাই।
এই সফলতায় সব থেকে বেশি অবদান কার জানতে চাইলে হাবিবুর বলেন, এমন সফলতার পেছনে হয়তো অনেকেরই ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সবার উপরে আমার বড় ভাইয়ের ভূমিকা। আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বাবা মারা যায়। তারপর থেকে এত বড় একটা পরিবারের পুরো দায়িত্ব তিনি বহন করেন। পরিবারের সকল সদস্যই আমার পড়াশোনার প্রতি যত্নশীল থাকলেও তার যত্নটা ছিল একটু বেশি। তাছাড়া ছোটবেলায় আমি বড় ভাইয়ের কাছেই ম্যাথ শিখেছি। আজ সে বেঁচে নেই। সফলতার এই দিনে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমার এই সফলতা বাবা, শ্বশুর এবং বড় ভাইয়ের জন্য উৎসর্গ করলাম।