৪৩তম বিসিএস ভাইভার পর বলেছি- হয় এখন, না হলে কখনোই নয়
৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। তার বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার বামনবাড়িয়া গ্রামে। বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। নাম মো. শরিফুল ইসলাম। দুই ভাইয়ের মধ্যে জুবায়ের ছোট। বাবার চাকুরির জন্য তাদের এক জায়গায় বেশি দিন থাকা হতো না। ছেলেবেলা উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ এই জেলাগুলাতেই কাটে। মাধ্যমিক তিনি কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে শেষ করেন। ইচ্ছা ছিল ঢাকার নটরডেম কলেজে পড়ার কিন্তু চতুর্থ বিষয়ে এ প্লাস না থাকায় সেই সুযোগ হয়ে ওঠে নি আর। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা সিটি কলেজে ভর্তি হোন। ২০১৪ সালে সকল বিষয়ে এ প্লাস পেয়ে পাশ করে ভর্তি হোন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স)। তিনি ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে বুটেক্সের টপ সাবজেক্ট ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে তার সম্মান শেষ করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে আছেন।
সফলতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ৪৩ তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। ৪৩তম বিসিএস ভাইভা দিয়ে বলেছিলাম হয় এখন নাইলে কখনোই না। আল্লাহ আমাকে হতাশ করেন নি।
তার সফলতায় তিনি কাদেরকে ধন্যবাদ দিতে চান প্রশ্নে তিনি জানান, আমার এই অর্জনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই আমার মমতাময়ী মাকে যে আমার থেকেও বেশি কষ্ট করে গিয়েছেন। যেদিন আমি রিটেন পরীক্ষা দেই সেদিনও তিনি বাইরে ৩/৪ ঘন্ট দাঁড়িয়ে ছিলেন। এছাড়া আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই এর ভুমিকা অনেক। আর সবশেষে আমার সাথে পাশে থেকে আমাকে মানসিকভাবে সার্পোট দিয়ে গেছে আমার স্ত্রী। তাদের সবার কাছে আমি চিরঋনি।
তার বিসিএসে সফল হওয়ার পিছনের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাশ করে বের হওয়ার পরই শুরু হয় বেকার জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে সিদ্ধান্ত নেই যে আমি বিসিএস দিব। সেটাই করি আমি, প্রাইভেট জবে না ঢুকে শুরু করি আমার সরকারি চাকুরি প্রস্তুতি। শুরুতে এক অথৈই সাগরে পড়ে যাই, কিভাবে এত বড় সিলেবাস শেষ করব। করোনার সময়টা আমার জন্য সাপে বর হয়ে দাঁড়ায়। টানা চার প্রিলি (৪১, ৪৩, ৪৪, ৪৫) পাশ করি। ৪১ থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়। কিন্তু আমি জানতাম ৪৩ আমাকে হতাশ করবে না। আল্লাহ রহমতে তাই হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ এর জানুয়ারিতে যখন প্রথম সিদ্ধান্ত নেই বিসিএস দিব, কতই না উৎকন্ঠা নিয়ে ভাবতাম কি হবে যদি কিছুই না পাই। দশ, এগারো, বার, তের সকল গ্রেডের চাকুরিতেই আবেদন করতাম। মাঝে কেটে গেল কত রাত কত দিন। আগারগাঁও এর বড় রাস্তায় আমার বন্ধু ফিরোজ ও জালালের সাথে করা শত আলোচনা। সবশেষে ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ সেই স্বপ্নের দিন আসল। আমি জানি বিসিএস শুধুমাত্র একটা চাকরি। কিন্তু এই চাকরির জন্য যৌবনের তিন চার বছর এর যে আবেগ তা এই পথ পাড়ি না দিলে কারো বোঝা সম্ভব নয়।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি স্বপ্নবাজ মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। সিটি কলেজে পড়াকালীন সময়ে পত্রিকা পড়তে পড়তে পড়তে বাসযাত্রা করতাম। তখন আমি ভাবতাম একদিন সব সমস্যার সমাধান করব। আমি মনে করি বাংলাদেশে বিসিএস ক্যাডারের মত সম্মানজনক পেশা খুব কম। কাজেই এই পেশা থেকে নিজের ও দেশের জন্য ভালো কাজ করাটা সহজ হবে। সবার কাছে ভালোবাসা ও দোয়া চাই আমি যেন দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারি।