দেশের হয়ে অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন রাশেদের

মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে সাথীদের সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশনরত রাশেদ
মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে সাথীদের সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশনরত রাশেদ   © সংগৃহীত

গত জুলাই মাসে ভারত, নেপাল আর স্বাগতিক বাংলাদেশের অংশগ্রহণে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দক্ষিণ এশিয়ান ভভিনাম চ্যাম্পিয়নশিপ। চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে ১টি স্বর্ণপদক ও ৩টি রৌপ্য অর্জন করেন রাশেদ। দেশের মাটিতে বড় অর্জনের অনুপ্রেরণায় রাশেদের স্বপ্ন এখন অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে খেলা।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের করলিয়া পাড়ায় রাশেদুল ইসলামের জন্ম। তাঁর বাবা শফিউল আলম একজন দিনমজুর। আর মা হাসিনা গৃহিণী। দুই বোন আর তিন ভাইয়ের মধ্যে রাশেদ তৃতীয়।  

অভাব অনটনের সংসারে জীবন সংগ্রামের মধ্যেই বেড়ে ওঠা রাশেদের। টিউশনির টাকা আর নিকটাত্মীয়দের সহযোগিতায় পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার সম্বল। নিম্ন মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েই বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছাড়েন কিশোর রাশেদ।  ভর্তি  হন চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি মাদ্রাসায়। সেখানে গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যতিক্রম কিছু করতে চাইত রাশেদ।  

রাশেদের ভাষ্যে ‘একদিন বসে বসে ভাবছি এভাবে জীবন চলবে না, আমাকে অন্য কিছু করতে হবে। প্রায় ১মাস পটিয়ার আনাচে-কানাচে ঘুরলাম। মনের মত কোন কিছু চোখে পড়েনি। পরে মনের ভাবনার কথা জানালাম এক বন্ধুকে। ওই বন্ধু বলল- চল আমার সাথে। তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। সে আমাকে একটা মার্শাল আর্ট ক্লাবে নিয়ে গেলো। ক্লাবটির নাম ডায়মন্ড মার্শাল আর্ট ট্রেনিং সেন্টার। ওই বন্ধু আমাকে বলে, আমি এখানে মার্শাল আর্ট  শিখি। তোর যদি ভালো লাগে ভর্তি হবি, না লাগলে হবি না। এটা তোর ইচ্ছা। প্রায় এক মাস পর অনেক চিন্তাভাবনা করে ঠিক করলাম ভর্তি হব।’

দক্ষিণ এশিয়ান ভভিনাম চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জয়ী রাশেদ


সেখান থেকেই রাশেদের জীবনে নতুন মোড় নেয়। উন্মোচিত হয় নতুন দিগন্ত। শুরু হয় জীবনের কঠিন সংগ্রাম।  কিছুদিন পরই স্বপ্ন এসে হাতছানি দেয়।  ৮ম বাংলাদেশ গেমসে যোগ দিতে ডাক পায় রাশেদের ক্লাব। সিনিয়রদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ আসে রাশেদেরও। উসো মার্শাল আর্টে অংশ নিয়ে প্রথম রাউন্ডেই হার।  কিছুটা ভেঙ্গে পড়লেও আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। তাঁর কথায়, ‘হেরে স্টেডিয়ামের এক পাশে গিয়ে কাঁদতেছিলাম। তখন এক বড় ভাই শান্তনা দিয়ে বললো- এত তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পড়ো না। খেলার জগতে কেবল মাত্র তোমার যাত্রা। দৃঢ় সংকল্প করলাম মার্শাল আর্টই করবো, অন্য কিছু নয়।’

এরপর ক্লাবে ফিরে অনুশীলন বাড়িয়ে দেয় স্বপ্নবাজ রাশেদ। তবে বিপত্তি বাঁধে ফের। খেলতে গিয়ে পায়ে বড় আঘাত পেয়ে দু-তিন মাসের বিশ্রাম। দূর্ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে স্রেফ বারণ- খেলা করা যাবে না।  

ওই সময়ের কথা স্মরণ করে রাশেদ বলেন, ছোটমামা বিভিন্ন সময় আর্থিক ভাবে সাহায্য করে খেলতে অনুপ্রেরণা দিত। আরেক অনুপ্রেরণাদাতা হলেন ওস্তাদ দিলদার হাসান দিলু। তাঁদের অনুপ্রেরণায় আমার পথচলা। 

২০১৪ সালে রাশেদ ন্যাশনাল গেমসে উসো মার্শাল আর্টে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিলেও প্রথম রাউন্ড পার করতে পারায় আগের চেয়ে মনোবল বেড়ে যায় রাশেদের। এরপর ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম হাজ্বী ক্যাম্প সোতেকান কারাতে  খেলায় গোল্ড মেডেল লাভ আত্নবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেয়। ২০১৬ সালে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী স্টেডিয়ামে ট্রেডিশনাল উসো গেমসে ব্রোঞ্জ পদক মিলে রাশেদের। ২০১৭ সালে ঢাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়ামে ওয়ালটন জাতীয় মার্শাল আর্ট গেমস সফলতার সাথে গোল্ড মেডেল লাভ। আর চলতি বছর অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া ভভিনাম চ্যাম্পিয়নশীপে দেশের জন্য ১টি স্বর্ণপদক ও ৩টি রৌপ্য অর্জন করেন রাশেদ। 

এই সফলতায় সামনে এগিয়ে যাবার সাহস পান রাশেদ। তাঁর ভাষ্যে, এখন আন্তর্জাতিক অলিম্পিকে দেশের হয়ে খেলায় বড় স্বপ্ন।

উল্লেখ্য, রাশেদ পটিয়া শাহ চান্দ আউলিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ২০১৪ সালে দাখিল পাস করেন। একই মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ সালে আলিম পাস করে বর্তমানে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। 


সর্বশেষ সংবাদ