সহকারী জজ পরীক্ষায় এক ব্যাচ থেকেই ১০ শিক্ষার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত
মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই বিজেএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১ম স্থানসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আইন বিভাগের এক ব্যাচ (৪০তম) থেকেই ১০ শিক্ষার্থী সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়াও ৩৯তম ব্যাচ থেকে ৫ জনসহ বিভাগের অন্যান্য ব্যাচ থেকে আরও ৬ শিক্ষার্থীসহ মোট ২১ জন সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের এমন সাফল্যে আনন্দিত বিভাগের শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরাও।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২১ জনের নাম নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর।
আইন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফলাফলে প্রথম হয়েছেন রাবির আইন বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুসরাত জেরিন জেনি। তিনি ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছিলেন। তার বাসা গাইবান্ধা জেলায়। মেধাতালিকায় ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছেন একই ব্যাচের ফাহাদ ইশতিয়াক। আরিফ আফসার শুভ ৭ম, সাথী ১০ম, বাপ্পি ভূঁইয়া ১১তম, রাফিউল ইসলাম ৩০ম, মৌসুফা তানিয়া মৌলি ৩১তম, আহামাদুল কবীর শাকিল ৩২তম, সুদীপ ঘোষ ১০১ ও মেহেদী হাসান ১০২তম স্থান অর্জন করে রীতিমতো বাজিমাত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪০তম ব্যাচের এই ১০শিক্ষার্থী।
আরও জানা যায়, ৪০তম ব্যাচ ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের পাঁচ জনসহ অন্যান্য ব্যাচ থেকে আরও ৬ জন শিক্ষার্থী বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে রাবি থেকে মোট ২১ জন শিক্ষার্থীর তথ্য প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে।
বিজেএস পরীক্ষায় ১ম হওয়া নুসরাত জেরিন বলেন, বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। কখনো ভাবতে পারিনি আমি প্রথম হব, ভাগ্য আমাকে প্রেফার করেছে। আমি একজন সাধারণ মেয়ে, পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফলেই আমার এ সাফল্য। আমার কাছে আমার বিভাগের শিক্ষকদের প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। সেই প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, সব থেকে ভালো লাগার বিষয় হলো আমারই ব্যাচের ১০ জন সহপাঠী সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। আমাদের যখন ট্রেনিং হবে, তখনকার পরিবেশটা আমাদের বিভাগের পরিবেশের মতো লাগবে। এটা চমৎকার একটা বিষয়।
বিজেএসে ৬ষ্ঠ হওয়া ফাহাদ ইশতিয়াক বলেন, প্রথমেই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমার এই সাফল্যের পেছনে আমার বাবা-মা, ভাই-বোনের অবদানও রয়েছে। আমি আইন বিভাগ ও আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
এ সাফল্য পেতে কীভাবে পড়াশোনা চালিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুডিশিয়ারির জন্য প্রিলির পরপরই লিখিত পড়াশোনা শুরু করি। একাডেমিক জীবনে যথেষ্ট সতর্ক থাকায় লিখিত পরীক্ষার প্রিপারেশনের জন্য যথেষ্ট সুবিধা হয়েছিল। লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন ৮-৯ ঘন্টা পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। তবে মূল ছিল ধৈর্য। মূল টার্গেট ছিল প্রতিটি বই লিখিত পরীক্ষার আগে ৩-৪ বার রিভাইস দেওয়া। সেটা করতে পেরেছিলাম।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের বিভাগ থেকে ২১ জন শিক্ষার্থী বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন করে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে।
সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তারা আমাদের গর্ব। তাদের এ অর্জনে আইন বিভাগ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত। তাদের হাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা এ শিক্ষকের।
শিক্ষার্থীদের এমন সাফল্যে গর্বিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাসিবুল আলম প্রধান। তিনি বলেন, টানা চতুর্থবারের মতো এবারও বিজেএস পরীক্ষায় আমার শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এতে আমরা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে গর্বিত। এক ব্যাচ থেকেই ১০ জন শিক্ষার্থীর এমন সাফল্যে আমরা আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, যেসকল শিক্ষার্থী জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারা তাদের সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নিষ্পেষিত গরীব মানুষকে সঠিক বিচার পেতে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবে।