২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩৩

ভর্তিযুদ্ধে সফল না হওয়া রিফাত এখন বিদেশে পড়ছেন স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে

আল ফারাবি কাজাখ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও মাহতাব অ্যাজমাইন রিফাত  © সংগৃহীত

এসএসসি ও এইচসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এরপর নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে। তবে সুবিধা করতে পারেননি। পরে ভর্তি হন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিষয়ে। তবে মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতির একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে অ্যাড ছিলেন তিনি। সেখানে বন্ধুদের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে জেনে শুরু করেন প্রস্তুতি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমে তিনি সফলও হয়েছেন। এখন পড়ছেন কাজাখস্তানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।

অদম্য তরুণটির নাম মাহতাব অ্যাজমাইন রিফাত। ছোটবেলা থেকে ভালো ছাত্র হবার সুবাদে এসএসসি ও এইচসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। তখন সবাই ভেবেছিল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে যাবেন। কিন্তু কোথাও চান্স হয়নি না। তারপর এক বছর জ্ঞাপ দিয়ে ফের শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি। এবারও সফল হতে পারেননি। তখনই মেডিকেল প্রস্তুতির মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ধারণা পান। 

রিফাত জানান, বন্ধুদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেন ২০২০ সালে। তখন উচ্চ শিক্ষার জন্য যেসব ডকুমেন্টস লাগে, তা জোগাড় করতে পারেননি। তবে তার মাঝে ছিল প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর কঠোর পরিশ্রম। লেগে যান সব গোছানো কাজে। রিসার্চ করে শিক্ষাবৃত্তিগুলোতে আবেদন করতে থাকেন। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ শেষে কোথাও চান্স না পেয়ে ঠায় হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভালো প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষাও দেন। কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল করতে পারলাম না।

এরপর অনেকটাই মন ভেঙে যায় রিফাতের। তবে বিদেশে পড়াশোনার প্রতি আরো দৃঢ় মনবল তৈরি হয়। মূলত সরকারি স্কলারশিপগুলোতে নিজে ঘরে বসে আবেদন শুরু করেন। সর্বপ্রথম তুর্কি সরকারি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সফল হননি। তারপরও দমে যাননি। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, একটা স্কলারশিপ ম্যানেজ করতেই হবে বিদেশ উচ্চ শিক্ষার জন্য। তারপর সব সরকারি বেসরকারি স্কলারশিপের আবেদন করকেন।

রিফাত বলেন, ‘আমি ভাবতাম, হোক বা না হোক আবেদন করব। তারপর একে একে পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি, রিকমেন্ডেশন লেটার, এসওপি জোগাড় করতে থাকি। এইখানে বলে রাখা ভালো যে, LOR, SOP গুলো আমি অনেক ভাইয়া আপুদের কাছ থেকে জোগাড় করে আইডিয়া নিয়ে নিজের মতো করে লিখতাম। একে একে অনেকগুলো স্কলারশিপ আবেদন করে ফলাফল পাচ্ছি না, রিজেক্ট খাচ্ছিলাম। তখন খুজছিলাম কি কারণে রিজেক্ট হচ্ছে? কি ইমপ্রুভমেন্ট করা দরকার? নিজেকে আরও প্রস্তত করছিলাম। যেহেতু সবার কাছে শুনেছিলাম বাইরে যেতে হলে নাকি ECA ভূমিকা অনেক।’

যেই ভাবা সেই কাজ। নেমে যান বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ক্যাম্পাস এম্বাসেডর, ভলেন্টিয়ারের কাজে। সঙ্গে ইন্টার্নশিপও করছিলেন কয়েকটি। নাসার বেশি কিছু কোর্স প্রজেক্ট অংশগ্রহণ করেন। অনেকগুলো সার্টিফিকেটও পান। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং শিখে রেখেছিলেন। ড্রাইভিং শিখেছিলেন। তারপর ফিনল্যান্ড আবেদন করলেও রিজেক্ট হন। মালেশিয়ার আলবুখারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে সেখানেও বাদ পড়েন।তারপর ইন্দোনেশিয়ার  সোরাবায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অফার লেটার পান।

ভারতের জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, দিল্লি থেকেও অফার লেটার পান। সবশেষ কাজাখস্তানে সরকারি স্কলারশিপের আবেদন করেন। তিনি বলেন, এখানে আবেদন প্রক্রিয়া ছিল একদম সহজ। ডকুমেন্টগুলো সাবমিট করা ছিল কাচ। আমার কাছে সব ডকুমেন্টস জোগাড় করা ছিল। তাই কষ্ট করতে হয়নি। আবেদন করার পর এখানে দু’টি ধাপ ছিল- সাইকোলজি টেস্ট ও ইন্টারভিউ।

মাহতাব অ্যাজমাইন রিফাত বলেন, আল্লাহর রহমতে আমি সাইকোলজি টেস্ট পাস করি। তারপর আসে ইন্টারভিউ মেইল। ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে একটু বলি। যেহেতু অনেক স্কলারশিপে আমি আবেদন করেছি ইন্টারভিউ দিয়েছি, মোটামুটি একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছিল কি রকম প্রশ্ন হতে পারে? কি রকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে? তবে এখানে সব থেকে বেশি কাজ করেছে আমার নিজের কনফিডেন্ট। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করে গেলাম ইন্টারভিউ বোর্ডে।

যদিও ইন্টারভিউ হয়েছিল অনলাইনে। বোর্ডে একজন ম্যাডাম ছিলেন বন্ধুসুলভ ও হাসি-খুশি মনের। বেশ সাধারণ প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আমি ঠিকঠাক উত্তর দিয়েছিলাম। আর দীর্ঘ দু’মাস পর আমার কাঙ্খিত স্কলারশিপটি পেলাম, তাও আবার পছন্দের স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আল ফারাবি কাজাখ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। সবশেষ একটা কথাই বলব, নিজের ইচ্ছাশক্তি, সাহস ও পরিশ্রম করতে পারলেই সব সম্ভব। নিজের পথ নিজেকেই খুজে নিতে হবে। সবার জন্য শুভ কামনা।