‘এসএসসিতে জিপিএ-৩.২৫ নিয়ে ভাইভা বোর্ডে কাউকে পাইনি’
৪১তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে (অর্থনীতি) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মো. আনিসুর রহমান। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে তুলে ধরেন তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা-
খুব সতর্কভাবে দরজা খুলে দেখলাম স্যারেরা কিছুটা দূরে বসে আছেন।
আমি: জোর গলায় বললাম স্যার আসতে পারি?
চেয়ারম্যান স্যার: আসেন।
সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলাম। স্যার বসতে বললেন। মাস্ক খুলে ধন্যবাদ দিয়ে বসলাম। স্যার আমার কাগজপত্রগুলো দেখছিলেন এবং আমার নাম, পছন্দক্রম, রেজাল্ট, পাশের সাল এগুলো বলতে লাগলেন।
চেয়ারম্যান স্যার: আমি আপনাকে একটা স্যালুট দিতে চাই। (আমি কিছু বুঝতে না পেরে চুপচাপ বসে রইলাম)। স্যার আবার বললেন আমি আপনাকে একটা স্যালুট দিতে চাই। এসএসসিতে ৩.২৫ জিপিএ নিয়ে এ পর্যন্ত ভাইবা বোর্ডে আমি কাউকে পাইনি।
আমি: ধন্যবাদ স্যার। (মুহুর্তেই নার্ভাসনেস কেটে গেল)।
তারপর পরীক্ষক-১ কে অর্থনীতি বিষয়ে প্রশ্ন করতে বললেন।
পরীক্ষক-১: এমপ্লয়মেন্ট এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কোনটা বেঁচে নিবেন?
আমি: এমপ্লয়মেন্ট।
পরীক্ষক-১: এমপ্লয়মেন্ট কেন?
আমি: স্যার এমপ্লয়মেন্ট বাড়লে একদিকে বেকারত্ব কমবে একইসাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হবে। তাই আমি এমপ্লয়মেন্ট বেছে নিব।
পরীক্ষক-১: এমপ্লয়মেন্ট বা দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে বর্তমান সরকারের একটি উদ্যোগ বলো।
আমি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দারিদ্র্য বিমোচনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার অন্যতম হলো আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প।
চেয়ারম্যান স্যার: আমার বাড়ি, আমার খামার নাকি আমার গ্রাম আমার শহর?
আমি: স্যার, আমার গ্রাম আমার শহর ছিল বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার।
পরীক্ষক-১: একটি বাড়ি একটি খামার।
আমি: চেয়ারম্যান স্যারের উত্তর দিয়ে ম্যামের দিকে তাকিয়ে বললাম স্যার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটির বর্তমান নাম আমার বাড়ি আমার খামার।
পরীক্ষক-১: জিডিপি কি?
আমি: একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে উৎপাদিত সমস্ত পণ্য ও সেবার আর্থিক মূল্যের সমষ্টিকে জিডিপি বলে।
পরীক্ষক-১: বর্তমানে জিডিপি কত?
আমি: ৪১৬.৩০ বিলিয়ন।
চেয়ারম্যান স্যার: বিলিয়ন না টাকা?
আমি: বিলিয়ন স্যার।
পরীক্ষক-১: তথসূত্র কি?
আমি: স্যার উইকিপিডিয়া।
পরীক্ষক-১: মাথাপিছু আয় কত?
আমি: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলার।
পরীক্ষক-১: মাথাপিছু আয় কিভাবে বের করা যায়?
আমি: জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে বের করা যায় স্যার।
পরীক্ষক-১: ভারসাম্য কি? কিভাবে হয়?
আমি: অর্থনীতির ভাষায় বললাম।
পরীক্ষক-১: রোহিঙ্গা নিয়ে বলো। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের ঘোষিত প্রকল্প কি?
আমি: সরি স্যার
পরীক্ষক-১: রোহিঙ্গাদের কোথায় স্থানান্তর করা হচ্ছে?
আমি: ভাসান চরে স্যার।
এরপর চেয়ারম্যান স্যার বললেন উনাকে সাবজেক্ট এর বাইরে প্রশ্ন করেন। নিজ বিষয় থেকে ধরলে তো পারবেই।
পরীক্ষক-২: নিজ বিষয় থেকে সব পারতে হবে। না পারলে?
চেয়ারম্যান স্যার বললেন, না পারলে ডিসক্রেডিট। এরপর পরীক্ষক-২ কে প্রশ্ন করতে বললেন।
পরীক্ষক-২: প্রশাসনের কোন পদটা তোমার পছন্দ?
আমি: মন্ত্রী পরিষদ সচিব।
পরীক্ষক-২: প্রশাসনে কেন আসবে?
আমি: সম্মানের জন্য আসতে চাই ম্যাম।
চেয়ারম্যান স্যার: এসব কোচিং এর পড়া বলবেন না। আসল কারণ বলেন। আপনি বলেন গ্রামে একজন প্রাইমারি শিক্ষক বেশি সালাম পায় নাকি ইউএনও পায়?
আমি: প্রাইমারি শিক্ষক বেশি পায় স্যার, তবে...
চেয়ারম্যান স্যার: থামিয়ে বললেন, থামুন, আর শুনতে চাই না। এসব শিখানো পড়া বলবেন না।
আমি: সরি স্যার। স্যার আমি তিনটা কারণে প্রশাসনে আসতে চাই (সুযোগ মতো ঘুরিয়ে উত্তর দিলাম)। স্যার প্রশাসনে সর্বোচ্চ সংখ্যক পোস্ট-৩২৩টি, আমার পঠিত অর্থনীতির সাথে প্রশাসন ক্যাডারের কাজ সম্পৃক্ত আর স্যার সম্মান।
পরীক্ষক-২: অর্থনীতি পড়ে প্রশাসনে কিভাবে কাজে লাগাবে?
আমি: আমি ভারসাম্য, ক্রেতা-ভোক্তার যুক্তিশীল আচরণ, সমস্যা সমাধানে অর্থনীতি এগুলো নিয়ে কয়েকটি পয়েন্ট বললাম। (খুশি হলো না মনে হলো)
পরীক্ষক-২: তোমাকে কেন নিব?
আমি: (ঐসময় মাথায় কিছুই আসছিল না)। আমি আমার সাবজেক্ট কে রিলেট করতে চাইলে চেয়ারম্যান স্যার উত্তর গ্রহণ না করে অনেকটা ব্যঙ্গ করেই বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ অর্থনীতি থেকে পাশ করে আসলেই আমরা সবাইকে প্রশাসনে নিয়ে নিব।
আমি: একটু হেসে বললাম না স্যার। (ধীরে ধীরে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিলাম)
পরীক্ষক-২: তুমি জনগণের সেবা করবে না?
আমি: অবশ্যই স্যার। আমি একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। ব্যাংকে অনেক মহিলা এবং বয়স্ক মানুষ আসেন। আমি তাদের সর্বোচ্চ সম্মান এবং সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।
পরীক্ষক-২: আচ্ছা তোমাকে প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হলে এলাকার নেতাদের চাপে কিভাবে কাজ করবে?
আমি: স্যার আমি এমন কোন কাজ করব না যাতে সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন হয়।
পরীক্ষক-২: তুমি কি তাদের সাথে তর্ক করবে?
আমি: না স্যার, আমি তাদের সাথে তর্ক করব না। আমি তাদের বলব আইনে আমি এটি করতে পারব না।
চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা Poverty anywhere is a threat to prosperity everywhere এ বিষয়ে তিন মিনিট ম্যাডামকে ইংরেজিতে বলুন।
আমি: ঐ সময় মাথায় যা এসেছিল লাউড ভয়েসে ফ্লুয়েন্টলি বলার চেষ্টা করেছি।
চেয়ারম্যান স্যার: ঠিক আছে আপনি তিন মিনিট বলেছেন। কিন্তু বিষয়টি ক্লিয়ার করতে পারেন নি।
আমি: সরি স্যার।
চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা আপনি আসুন।
আমি পরীক্ষক-২ স্যার থেকে কাগজপত্র নিয়ে আসলাম।
পরীক্ষক-২: গুড লাক। (মনে একটু সাহস পেলাম)
এ ছিল আমার ভাইবা অভিজ্ঞতা। আলহামদুলিল্লাহ, বেঁচে ফিরলাম। শেষের দিকে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। পরীক্ষক-২ স্যারকে (মহিলা) কয়েকবার ম্যাম বলে ফেলেছিলাম। আমার ভয়েস লাউড ছিল। সব সময় আই কন্টাক্ট রাখার চেষ্টা করেছি। পুরো সময়টা মুখে হাসি রাখার চেষ্টা করেছি। প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করার কারণে বেশি সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আপনারা যারা ভাইবা দিবেন সাথে পানি বা খেজুর, বাদাম নিয়ে যাবেন। শেষের দিকে ভাইবা হলে কাজে লাগবে। সবার জন্য শুভ কামনা। ধন্যবাদ।