যুক্তরাষ্ট্রের ইউসি বার্কলের সমাবর্তনে বক্তব্য দিলেন বাংলাদেশি নাজমুল
যুক্তরাষ্ট্রের ইউসি বার্কলের সমাবর্তনে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাজমুল আহসান। বার্কেল জার্নালিজম বিভাগের ২০২৩ সালের সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তিনি।
নাজমুলসহ বিভাগটির দু’জন শিক্ষার্থী সমাবর্তনে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান। অপরজন এম জে জনসন। এটিকে বড় ধরনের সম্মান বলে উল্লেখ করেছে বিভাগটি।
বক্তব্যের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন গীত আনন্দ-সহপাঠী গ্র্যাজুয়েটসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে নাজমুল বলেন, ‘আমার মা-বাবাকে ধন্যবাদ। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারেননি, তাই অনলাইনে আমার স্পিচ দেখছে। ফাইনালি আমার স্ত্রী অমি-কে ধন্যবাদ যে, দর্শকদের মাঝে বসে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে এইখান থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়াটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। পরিবারে আমাকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করা হতো বার্কলে আমার অভিজ্ঞতা কেমন। আমি বলব এটি ছিল খুবই ভালো একটি অভিজ্ঞতা। তবে মাঝে মাঝে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তাম যখন সহপাঠীরা বলতে পারতো না, কোনটি বিফ আর কোনটা পোর্ক (অনেকটা হেসে)।’
তারা (পরিবার) আমাকে এটাও জিজ্ঞেস করতো এই স্কুলে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন কি? আমি বলতাম, ফুটবল দলে আমার বন্ধুর ক্যাপ্টেন হওয়া। কারণ আমরা এ পর্যন্ত যতগুলো দলের বিপক্ষে খেলেছি কেউ আমাদের হারাতে পারেনি। প্রতি বুধবার আমার প্রিয় সময় এটা (ফুটবল)। আমারা অনেক মজা করেছি। দলীয় বক্তব্যে আমি তাদের বলেছিলাম আমারা যতদিন এখানে আছি খারাপ কিছু হবে না। আর হ্যাঁ আমরা কোন ফুটবল ম্যাচ বরবাদ করিনি।
নাজমুল বলেন, এটা ছাড়াও আমারা আরেকটা ম্যাচ জিতেছিলাম, কারণ অপর দল খেলতে আসেনি (অনেকটা রসিকতা করে)। আমি পাবলোকে অসম্মান থেকে বাঁচিয়ে দিব কারণ সে আমার কথা না শুনেই বার বার গোল করে জাচ্ছিলো। আমার সফটওয়্যার ক্যারিয়ার থেকে সরে আসলে সবচেয়ে ভালো যে জিনিসটা আমি অর্জন করেছি সেটা হচ্ছে আমার থিসিসগুলো। প্রতি সোমবার আমার থিসিস পার্টনার এবং আমি একসাথে বসতাম। তার আমরা একজন অপরজনের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম আমরা দুজনেই এই থিসিস করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
কিন্তু মঙ্গলবারে আমরা যখন ডেভিডের সাথে দেখা করতাম তখন সে কিভাবে যেন আমাদেরকে উৎসাহিত করত এবং যখন আমরা তার রুম থেকে বেরিয়ে আসতাম তখন আমাদের মনে হত যে, হ্যাঁ আমরা করতে পারবো, আমাদের করতেই হবে, আমাদেরকে লোকজনের কাছে যেতে হবে। আমাদেরকে লোকজনের দরজায় যেতে হবে। আর গত কয়েকমাস ধরে এটিই চলছিল যোগ করেন তিনি।
নাজমুল আরও বলেন, আর দেখুন এখন আমরা এখানে, গ্র্যাজুয়েট। কে ভেবেছিল বলেন আমি এই দুইবছর পরে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো। মাত্র দুইবছর আগেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম। আমার নিজে দেশ বাংলাদেশ ছাড়া এটিই প্রথম দেশ যেখানে আমি পা রেখেছি।
তিন বছর আগে সাংবাদিকতা নিয়ে আমি আশাহীন ছিলাম, যার কারণে আমি তা ছেড়ে দেই। তারও ছয় বছর আগে আমি ভেবেছিলাম, আমি কলেজও সম্পূর্ণ করতে পারব না। আমি আমার হাইস্কুল শেষ করেছিলাম খুবই কম জিপিএ নিয়ে। আমি কখনো ভাবিনি আমি এতদূর আসতে পারব।
আমি বিশ্বে বিখ্যাত জার্নালিজম স্কুলগুলোর মধ্যে একটি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। আর এখানে আমি অনেক ভালো বন্ধু, সহপাঠী ও শিক্ষক পেয়েছি। আমি এটা বিশ্বাস করতে পারিনি যখন আমি জার্নালিজম স্কলারশিপ পাই। আমি নিজের ওপর ভরসা রাখতে অপারগ ছিলাম এবং এখনো তাই। সাংবাদিকতার কারণেই আমি অনেকই মৃত্যু হুমকি পেতে দেখেছি, অনেকে জেলে গেছে, অনেকে মারও খেয়েছে। এসবের কিছুর সম্মুখীন আমিও হয়েছি, উল্লেখ করেন নাজমুল।
তবে আমি ভয় করি না। একজন সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এটা অনুভব করতে পারি। সব দেশের সাংবাদিকরা এই পেশায় সমান নিরাপত্তা পায় না। বিশ্বের সব সাংবাদিকরা আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। যখনি আপনি সুযোগ পাবেন তাদের সহায়াতা করুন, তাদের গল্প তুলে ধরুন। আমার সহ-গ্র্যাজুয়েটরা, আমি জানি আপনারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক কিছু অর্জন করতে পারবেন। আমার আপনাদের ওপর কোন সন্দেহ নেই।
গ্র্যাজুয়েশনের পর আমি আমার আইডল রিচার্ড জো এর মত হতে চাই। সে সবসময় সবার সেরা ছিল। আমি আবারও আমার থিসিস পার্টনার মাইকেলকে ধন্যবাদ জানাই যে আমাকে সাহায্য করতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করেনি। আমি এই ব্যক্তির কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি আমার শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে এতকিছু শিখিয়েছেন। আপনাদের সময় এবং যত্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, একজনের নাম না নিলেই নয়, সে আমকে গত দুই বছরের প্রত্যেকটি সময়ে সাপোর্ট করেছে। ধন্যবাদ তাকে আমাকে আগলে রাখার জন্য এবং এই জার্নিকে সহজ করে তোলার জন্য। আমি সবাইকে অনেক মিস করবো। আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আপনারা। আপনারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন, অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন, অনেক যত্ন নিয়েছেন। আমরা লড়াই করেছি, আমরা কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আমরা একে অপরকে ভালবেসেছি। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
প্রসঙ্গত, এ বছর ইউসি বার্কলে স্কুলের ২ বছরমেয়াদি এই জার্নালিজম কোর্স সম্পন্ন করেছেন ১২ দেশের ৬৭ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিলেন বিদেশি শিক্ষার্থী।