থাইল্যান্ডের ক্ষমতার কেন্দ্রে হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট পিটা
বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পাওয়া প্রথম কোনো থাইল্যান্ডের নাগরিক তিনি। ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ পেয়ে হাভার্ডে পড়তে যান পিটা। পুরো নাম পিটা লিমজারোয়েনরাত।
দেশটিতে এবারের নির্বাচনে সেনা সমর্থিত জোটকে পেছনে ফেলে বড় ব্যবধানে এগিয়ে গেল তার দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)। গণনা হওয়া ভোটের হিসাব অনুযায়ী, সামরিকবাহিনী সমর্থিত দলগুলোকে পেছনে ফেলে একক দল হিসেবে ১৫১টি আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়ে রীতিমতো বাজিমাৎ করেছে দলটি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে বড় জয়ের পথে আছে 'টিম পিটার' মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি এবং থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওত্রার দল ফেউ থাই পার্টি। মোট ৫০০টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯২টি আসন পেয়েছে এ দুই দল। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জয় পেলেও ১ দশকের সামরিক শাসনের অবসান ঘটাতে কঠিন যাত্রা অপেক্ষা করেছে তাদের জন্য।
জোট সরকারের ইঙ্গিত
থাইল্যান্ডের বিরোধী দল ফেউ থাই জানিয়েছে, তারা সংস্কারপন্থী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে যোগ দিতে রাজি আছে। জোট সরকারে যোগ দিতে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা তারা গ্রহণ করছে। ফেউ থাইয়ের নেত্রী ৩৬ বছর বয়সী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ডের অর্জনে তিনি খুশি। তবে জোট গঠন নিয়ে আলোচনার সময় এখনো হয়নি।
কে এই পিটা লিমজারোয়েনরাত?
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ১৯৮০ সালে জন্ম নেন পিটা লিমজারোয়েনরাতের। ডাক নাম টিম। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরে যোগ দেন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিতে। রাজনীতিবিদ হিসেবে পিটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচার শাসনের তুখোড় সমালোচকদের একজন। প্রধানমন্ত্রী প্রাউতের শাসনামলকে 'হারানো দশক' হিসেবে আখ্যায়িত করে জনগণের কাছে নিজেকে 'দিন বদলের দূত' হিসেবে তুলে ধরেছেন ৪২ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ। ব্যক্তিগত জীবনে পিটা বিয়ে করেছেন থাই মডেল ও অভিনেত্রী ছুতিমা তীপানার্টকে। এক কন্যা সন্তানের জনক তারা।
থাইল্যান্ডের থ্যামাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস পাশ করেন তিনি। মর্যাদাপূর্ণ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পাওয়া প্রথম কোনো থাইল্যান্ডের নাগরিক তিনি। চলে যান আমেরিকায়। 'ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট স্কলারশিপ' পেয়ে হাভার্ডে পড়তে যান পিটা। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন এফ. কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট থেকে পাবলিক পলিসি নিয়ে মাস্টার্স করেন তিনি। পরবর্তীতে এমআইটির স্লোয়ান স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনেও মাস্টার্স করেন পিটা।
মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি কিভাবে সামনে এলো
এবারের নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব কমানোর অঙ্গীকার করেছে। এছাড়া নির্বাচিত হলে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পিটা। মূলত ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি। আর পিটা তাতে যোগ দেন ২০২০ সালে। মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে থাইল্যান্ডের 'দ্য লিস ম্যাজেস্টি ল' হিসেবে পরিচিত একটি আইনের বিরোধিতা করেন। এই আইন অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের রাজা কিংবা রাজপরিবারের সদস্যদের মানহানি, অপমান কিংবা হুমকি দেওয়ার অভিযোগে থাই নাগরিকদের ১৫ বছর পর্যন্ত শাস্তির কঠিন বিধান আছে। এর আগে, 'সংস্কারবাদী এজেন্ডা' নিয়েই সর্বপ্রথম ভোটার ও তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ আকর্ষণ করে মুভ ফরোওয়ার্ড পার্টি।
সামরিকবাহিনীর দখলে সিনেট
তবে জোট গঠন হলেও ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের পর সেনা সরকার প্রণীত সংসদীয় বিধির কারণে তারা সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। ওই বিধি সেনাসমর্থিত দলগুলোকে সুবিধা দেয়।
এখন সরকার গঠন করতে হলে বিরোধী দলগুলোকে জান্তার নিয়োগকৃত সিনেট সদস্যসহ বিভিন্ন শিবিরের কাছ থেকে সমর্থন পেতে হবে। কারও কারও সঙ্গে তাদের চুক্তিও করতে হতে পারে। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং পরবর্তী প্রশাসন গঠন করবেন, তা সিনেট সদস্যদের ভোটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। তবে এ সিনেট সেনাসমর্থিত দলগুলোর পক্ষে।