জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরাত এখন যুক্তরাষ্ট্রের মমফেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

ইসরাত জাহান
ইসরাত জাহান  © সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের জেলার গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ইসরাত জাহান। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে ভর্তি হন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগে। অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় নানাজনের নানা কথা শুনতে হয়েছে তাকে। কারণ তার সহপাঠীরা কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ মেডিকেলে, কেউ আবার ভর্তি হয়েছেন বুয়েট, চুয়েট কিংবা কুয়েটে। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সেশনজটে পড়ে মুখ ভার হয়ে আসছিল ইসরাতের। তার স্নাতকের ক্লাস শুরু হয় ২০১০ সালে। ২০১৪ সালে স্নাতক শেষ করার কথা থাকলেও ২০১৬ সালে বসেন স্নাতক পরীক্ষায়। পড়াশোনায় নিয়মিত হওয়ায় ইসরাত বরাবরই ছিলেন ক্লাস টপার। যদিও ইংরেজি বলা এবং বোঝায় ছিল ঘাটতি। এর জন্য ব্যবহারিক জ্ঞান কম থাকাকেই দোষেন ইসরাত। তবে নিয়মিত অধ্যয়ন এবং পাঠ্যসূচি মন দিয়ে পড়ে তা কাটিয়ে ওঠেন দক্ষতার সঙ্গেই।

২০১৬ সালে স্নাতক শেষ করে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকেন ইসরাত। তখন এক বন্ধুর কথায় উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। সেই বন্ধুও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দু'জনের বুদ্ধি এবং পরামর্শে ইসরাত সরকারি চাকরির পরীক্ষার রণভঙ্গ দিয়ে মন দেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার ভর্তি প্রস্তুতিতে। 

ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক পাশ করা ইসরাত ওই সময় ঠিকঠাক একটা মেইল লিখতে পারতেন না, ভয় পেতেন ইংরেজি বলতে। সেই ইসরাত নতুন করে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। দিন-রাত পরিশ্রম করে বসেন জিআরই পরীক্ষায়। তবে ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। প্রস্তুতি নিতে থাকেন আবারও জিআরইতে বসার। সেই সঙ্গে খুঁজে বের করতে থাকেন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জিআরই স্কোর খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্ত হন বিদেশে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গেও। নানা প্রস্তুতি শেষে আবেদন করলেন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কিছুদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ই-মেইল পেলেন ইসরাত। তাঁকে জানানো হয়, আপনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পূর্ণ তহবিলসহ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ইসরাতের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। তবে এর জন্য ইসরাত কৃতজ্ঞতা জানান সেই বন্ধুদের প্রতি, যাঁরা তাঁর সঙ্গে কথা বলে কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এরপর উড়াল দেন স্বপ্নের পথে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে শুরুতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল ইসরাতকে। পড়াশোনায় কুলিয়ে উঠতে পারতেন না। আস্তে আস্তে নিজেকে প্রস্তুত করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে সোশিওলজি বিভাগে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দিয়েছেন ইসরাত। স্নাতকোত্তরে ইসরাত বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্য ও বৈষম্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। একই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে এ বছরই পিএইচডি গবেষণা শুরু করতে চান তিনি। বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নে কীভাবে আরও কার্যকর উপায় বের করে আনা যায়, তাই তাঁর গবেষণার বিষয়। হয়তো স্বপ্নবাজ এই ইসরাতদের হাত ধরেই নতুন পথ দেখবে বাংলাদেশের আগামীর নারী স্বাস্থ্য। নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়ন মানেই সুন্দর বাংলাদেশের পথচলা! 


সর্বশেষ সংবাদ