অনলাইনে কাজ করে লাখপতি তেজগাঁও কলেজের শিবলী
রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্র্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী রাজিব হাসান শিবলী। ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো কূটনৈতিক হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাবেন। নিজ দেশের জন্য বয়ে আনবেন সুনাম আর সুখ্যাতি। তবে বাস্তবতার নিরিখে তিনি ছিটকে পড়েন সেই স্বপ্ন থেকে। স্বপ্নের পথে যাত্রা পূরণ না হলেও মন্দের ভালো হয়ে সুপ্রসন্ন হয়েছে তার ভাগ্য। কিছু একটা করতে হবে এমন চিন্তা থেকেই অনলাইন প্লাটফর্ম ফেসবুক আর ইউটিউবে সফলতা পেয়েছেন তিনি। শূন্য থেকে হয়েছেন লাখপতি।
রাজিব হাসান শিবলী জানান, স্নাতক পড়তে ২০১৮ সালে ঢাকায় আসেন তিনি৷ পড়ালেখার পাশাপাশি তখনই করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি। তবে পড়াশোনা, ক্লাস-পরীক্ষার পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী সময় দিয়ে চাকুরি করার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি তার।
চাকুরি ছেড়ে দিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। নানা দুশ্চিন্তার ভিড়ে হঠাৎ মনে হলো অনলাইনে কিছু একটা করার৷ সময়টা তখন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। ইউটিউবে ভিডিও দেখে খুলে ফেলেন ফেসবুক পেজ আর ইউটিউব চ্যানেল৷ পড়ালেখা আর কাজের ফাঁকে টুকটাক ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন ফেসবুক ও ইউটিউবে। ফ্যান, ফলোয়ার তখনও তেমন নেই বললেই চলে ৷
২০২১ সালের জুন মাসে তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। একটি ভিডিও হঠাৎ ভাইরাল হয়৷ এরপরে এক সপ্তাহেই ভাইরাল হয় আরও পাঁচটি ভিডিও৷ আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে৷ নিয়মিত বাড়তে থাকে ফেসবুক তার ফলোয়ারের সংখ্যা। বর্তমানে তা ছাড়িয়েছে দেড় মিলিয়ন।
ভিডিও আপলোড করলেই ফেসবুক ব্যবহারকারী তা দেখছেন ও শিবলী কে উৎসাহিত করছেন। গ্রাম থেকে উঠে আসা সাধারণ একজন ছেলে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে এমন বিশ্বাস মনেপ্রাণে মেনে নিয়েই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।
রাজীব বললেন, আমার জন্ম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নবগ্রামে ৷ ছোটবেলায় নানাবাড়ির স্থানীয় সাড়াতলা হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে ভর্তি হই যশোর বিএএফ শাহীন কলেজে ৷ সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বর্তমানে রাজধানীর তেঁজগাও সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শেষ বর্ষে পড়ছি৷ ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওতে মানুষের বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা, জীবনের চরম সত্য উপলব্ধি, মানুষের স্বাভাবিক দর্শন সহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলি। মানুষজনও বিষয়টিকে সুন্দরভাবে নিয়ে আমাকে উৎসাহিত করেন সব সময়।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানীর তালিকায় চুয়েট ছাত্র এম এ হান্নান
তিনি বলেন, শুরুতে ফেসবুক থেকে অর্থ আয়ের বিষয়টি জানা না থাকলেও পরবর্তীতে জানতে পারি যে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা সম্ভব৷ অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এবার পথচলা শুরু করি। এখন প্রতি মাসে ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিও থেকে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা৷ প্রথমে পরিবারের সহযোগীতা না পেলেও এখন বেশ উৎসাহ পান বলেও জানালেন।
শুরুর সময়ের পথ চলা বেশ বন্ধুর আর অমসৃণ ছিল উল্লেখ করে রাজিব বলেন, শুরুর পথটা অনেক কষ্টের ছিলো৷ পরিবার, বন্ধু কারো সাপোর্ট পাইনি৷ ভিডিও দেখে সবাই শুধু হাসাহাসি করতো৷ যখন দেখলো ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আমাকে ভালোভাবে নিচ্ছে। অনেকই ফলোয়ার হচ্ছে তখন সাবাই উৎসাহ দিয়েছে। আর সমালোচনাকারীরাও কথা বলেনি৷
প্রতিদিন নিয়ম করে একটি ভিডিও নিজের পেজে আপলোড করার চেষ্টা করেন রাজীব হাসান শিবলী৷ তবে ব্যস্ততার কারনে অনেক সময় সেটি সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ ব্যাবসায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি৷ বলেন, চাকরিতে এখন আর উৎসাহ নেই৷ অনলাইনকেই আমার প্লাটফর্ম হিসেবে বেঁছে নিয়েছি৷ ইচ্ছে আছে ব্যাবসার দিকে মনোযোগ দিব৷ আর পরিবার যেহেতু আমার কাজকে সাপোর্ট দেয় তাই আর চিন্তা নেই৷
সমালোচনা কারীদের উদ্দেশ্যে রাজীব বলেন, সমালোচনা অনেক সময় মানুষের প্রতিভা নষ্ট করে দেয়৷ কেউ কোন কাজ করতে চাইলে তাকে উৎসাহ দিতে হয়৷ এতে সে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরনা পাই।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর থেকে ছোট দুই বোন আর বাবাকে নিয়ে রাজিবের সংসার। জীবনের প্রতিমুহূর্তে মায়ের শূন্যতা উপলব্ধি করেন তিনি। বললেন, মায়ের শূণ্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়৷ আমার আয়ের একটি বড় অংশই অসহায় দুস্থ আরও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য ব্যয় করি। চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে সহজেই নিজেদের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন বেকাররা। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল এসব মাধ্যম ব্যবহার করে হতে পারেন স্বাবলম্বী। তবে তা অবশ্যই শালীন, গঠনমূলক ও সমালোচনা বিহীন হতে হবে।