০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২০

সুইডেনে আবেদন প্রক্রিয়াও সহজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মানের

স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফয়সেল সজিব  © টিডিসি ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতক শেষ করেছেন ফয়ছেল সজিব। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে এবার পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপের উন্নত শিক্ষা-ব্যবস্থার দেশ সুইডেনে। বর্তমানে তিনি স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করছেন। আগস্টের শেষ দিকে সুইডেন যাত্রা করা এই শিক্ষার্থী ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে’ জানিয়েছেন সেখানে উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতির নানা দিক।
কেন সুইডেন পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নিলেন?
এখানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেন্ট্রালভাবে নিয়ন্ত্রিত, ফলে এখানে এপ্লাইয়ের অনেক সহজ অন্যান্য দেশ থেকে, পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুবই ভালো মানের। একটা আন্তর্জাতিক মানের একটা পড়াশোনার পরিবেশ এখানে আছে। তাই সব মিলিয়ে এখানে এপ্লাই করেছি।  
একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে চাই। ভর্তির অভিজ্ঞতা
আমি কুমিলা বিশ্ববিদ্যলয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক করি। ফলাফল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশ হয়েছিলো। তারপর আমি দেশে ইউএস অ্যাম্বাসিতে ফান্ডেড ‘মিডিয়া লিটারেসি’ প্রজেক্টে কাজ করেছি। তারপর ECTS দেখে স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করেছি আর হয়ে গেছে।
ভাষা দক্ষতা ও ভিসা প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
আমি আমার এইচএসসি এর পরপরই আইইএলটিএস কোর্স শেষ করেছিলাম এবং দেশে থাকাকালীন একজন আইইএলটিএস ইন্সট্রাক্টর ছিলাম। আমার জন্য আইইএলটিএস নিয়ে কোনো সমস্যা ছিলো না। আর বাকি জিনিসগুলো যেমনঃ জিআরই/জিম্যাট/টোফেল এগুলো আমার ডিসিপ্লিনে ম্যান্ডাটরি না।

তবে আমি সবচেয়ে বেশি হয়রানি হয়েছিলাম ভিসা প্রসেসিং এর সময়ে আমার জন্ম নিবন্ধন এর জন্য যেটাতে বাংলা-ইংরেজি একটা অনলাইন ভার্সন তুলতে গিয়েছিলাম। আমার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এটা নিয়ে খুবই ঝামেলা করেছিলো। তারা একেবারেই আন্তরিক ছিলো না। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের দিয়ে আমাকে এটা তুলতে হয়েছিল।
একাডেমিক কোন চ্যালেঞ্জগুলো সবচেয়ে বেশি অনুভব করছেন? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমি এখানে একাডেমিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি প্রতিনিয়ত হচ্ছি। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই ভালো এবং খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এই প্রতিযোগিতার ভিড়ে টিকে থাকা বড় দায়। আমি এখানে মাস্টার্স শেষ করার পর PhD করার ইচ্ছে আছে।
পড়াশোনা শেষ করে সুইডেনে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছে আছে, নাকি দেশে ফেরার চিন্তা করছেন?
আমি ভবিষ্যতে পড়াশোনা শেষ করার পর আবার আমার দেশে ফিরতে চাই। আমি যদি আমার দেশের একাডেমিয়াতে কোনো সুযোগ পাই, আমি দেশে ফিরে যাবো। আমাদের দেশ নিয়ে একাডেমিয়াতে তেমন ভালো মানের কাজ খুবই কমই হয়েছে। ঠিকভাবে কাজ করলে অনেক ভালো ভালো কাজ করা যাবে। আমাদের দেশে অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যারা এসব বিষয়ে ভালো দিক-নির্দেশনা পেলে খুবই ভালো কাজ করতে পারবে।  
সাংস্কৃতিক অভিযোজন-সুইডেনে এসে প্রথম কদিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
অবশ্যই, একটা সাংস্কৃতিক পার্থক্য তো আছেই। তবে, সেটা প্রথম কয়েকদিনেই কেটে গেছে। এখানে একটা জিনিস খুবই ভালো লেগেছে আর তা হলো, স্টকহোমে মানে রাজধানীতে আমি যেখানে আছি সেখানে অনেক বাঙ্গালি আছে। বলতে পারেন কম করে হলেও ১৫ - ২০ হাজারেরও বেশি আর যদি সেকেন্ড জেনারেশন বাঙ্গালির কথা বলি তাহলে সে সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।
বাংলাদেশের তুলনায় সুইডেনে পড়াশোনার ধরনে কী কী পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন?
সেটার কথা যদি বলি, পুরো ৩৬০ ডিগ্রীর পরিবর্তন। এখানের পড়াশোনা পুরোটাই গবেষণা ভিত্তিক এবং এখানে সবকিছু একটা সিস্টেম অনুযায়ী চলে। এমনকি একাডেমিয়াও। এটা নিয়ে আরেকদিন বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ বা অন্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন কি?
আমি আপাতত এখানে কোনও কাজে যুক্ত নেই । তবে, পড়াশোনাটা একটু গুছিয়ে কিছু কাজ তো করতে হবেই। সেটা আরও পরে। 
স্থানীয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বা কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ কতটা সহায়ক?
সেটার অনেক সুফল । আমি যখন সুইডেন আসি তখন আমার এখানে পরিচিত বলতে কেউ ছিলো না কিন্তু আসার পর গত ৩০ দিনে আমি প্রায় ১৫ টা দাওয়াত খেয়েছি। তারপর এখানকার নতুন নিয়ম কানুন, পাশাপাশি কিছু দিক নির্দেশনা সহ আরও অনেক সাহায্য পেয়েছি তাদের থেকে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। 
বিশ্ববিদ্যালয় বা স্টেট থেকে কী ধরনের সহায়তা বা রিসোর্স সবচেয়ে কাজে লাগছে?
আপনি যদি পড়াশোনা করতে চান এখানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব পাবেন। এমন কিছু নেই, যা দিয়ে আপনাকে তারা হেল্প করবে না। তবে দিনশেষে পড়াশোনা করতে হবে। 
সুইডেনে পড়াশোনা করতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ কী হবে?
আপনি এখানে যে সাবজেক্টে এপ্লাই করবেন সেখানে আপনার ECTS (ক্রেডিট) মিলে কিনা তা দেখতে হবে। যদি তাদের রিকয়রমেন্ট অনুযায়ী ম্যাচ না করে আপনি সেখানে আবেদন করবেন না । কারণ শুধু শুধু কোনও লাভ হবে না । আর SOP, CV এসবে খেয়াল রাখবেন । প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো হেল্প নিন।