উচ্চশিক্ষার জন্য মধ্যপ্রাচ্য কেমন?
উচ্চ শিক্ষার জন্য মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের এক অন্যতম অবস্থানে রয়েছে। আরবি এবং ইসলামি শিক্ষা অর্জনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত গোটা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দেশ। এখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোর পড়ালেখার মানও বেশ উন্নত। বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনার সুযোগ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরই গন্তব্য আরব দেশ। পছন্দের তালিকায় আছে মিশর, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ সারিতে আছে।
বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হতে পারে উচ্চশিক্ষার জন্য আদর্শ স্থান। ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিল থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারেন।
একসময় মধ্যপ্রাচ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এতটা উন্নত ছিল না। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ বছরে দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নতি সাধন হয়েছে। আধুনিক ক্লাসরুম, সুপরিসর ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি, উন্নত হোস্টেল ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা উপযোগী সুন্দর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই আকর্ষণীয়।
মধ্যপ্রাচ্যের উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সৌদি আরবের রয়েছে তিনটি- কিং আবদুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মদিনা, কিং ফয়সাল ইউনিভার্সিটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়- আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন দুবাই, ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটি ইন দুবাই, ইউনিভার্সিটি অব দুবাই। মিসরের রয়েছে দুটি- আল-আজহার ইউনিভার্সিটি ও আলেকজান্দ্রিয়া ইউনিভার্সিটি।
উন্নত মানের শিক্ষা ব্যবস্থা: সৌদি আরব, মিসর ও আরব আমিরাতের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ভাষা আরবি। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষায়ও পড়াশোনা করা যায়। ২০০৯ সালে সৌদি সরকার উদ্বোধন করেন কিং আবদুল্লাহ্ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (কেএইউএসটি)।
জেদ্দায় অবস্থিত কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি ২০১৬ সালে টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাঙ্কিং অনুযায়ী আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থান অর্জন করেছে। বর্তমানে স্কলারশিপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটিকে আরবে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে মাইলফলক মনে করা হয়। অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে ইংরেজি মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন এখানে।
মধ্যপ্রাচ্যে দুবাইয়ে মার্কিন ও ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। আবার যুক্তরাজ্যের কিছু ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসও খোলা হয়েছে দেশটিতে। সৌদি আরব ও মিসরের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না।
সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয়। রেজাল্ট ভালো থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা থাকে না। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা বিবেচনা করে অফার লেটার পাঠিয়ে থাকেন। অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ: এসব দেশের সরকার প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। বৃত্তিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সুযোগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে সংযুক্ত মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থান শীর্ষে। সৌদি আরবের খ্যাতনামা একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়। বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এখানে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগরে পাশাপাশি ফ্রি থাকা-খাওয়ার সুবিধা পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অধীনে শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষাবৃত্তি পাবেন। এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক সুযোগ সুবিধা।
যেসব বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন-
জীববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও বায়োকেমিস্ট্রি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, থার্মাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ডিজালিনেশন, মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকক্ট্রিকাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এ্যারোনটিক ইঞ্জিনিয়ারিং,এনভায়রনমেন্ট এরিড ল্যান্ড এগ্রিকালচার, এরিড ল্যান্ড এগ্রিকালচার, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, মেটেরিওনলজি, হাইড্রলজি এন্ড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, মিনারেল রিসোর্স এন্ড রক্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এনভায়রনমেন্টাল জিওলজি,ম্যারিন বায়োলজি, ম্যারিন ফিজিক্স, ম্যারিন কেমেস্ট্রি, ম্যারিন জিওলজি, আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং, ফ্যাকাল্টি অব কম্পিউটিং এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্পিউটার সায়েন্সে স্কলারশিপের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাবেন।
ভর্তি এবং বৃত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসেও জানা যাবে। ভিসার জন্য ঢাকায় অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেশগুলোতে থাকলে আপনি যে শুধু আমিরাতি সংস্কৃতি শিখতে পারবেন তা কিন্তু নয়, আপনি আরো বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি শিখতে ও জানতে পারবেন কারণ এখানে আরো বিভিন্ন দেশের মানুষের বসবাস। এখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলনায় ভিনদেশিদের আধিক্য বেশি। পথে ঘাটে চলতে গেলে আপনি আরবি, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি বিভিন্ন ভাষার মানুষের কথোপকথন শুনতে পারবেন। এছাড়াও এখানের বাসিন্দারা খুবই অতিথিপরায়ণ। অথিতি আপ্যায়নে তাদের জুড়ি নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের বিনোদনেরও কোনো অভাব নেই। ওয়াটার ডাইভিং, স্কাই ডাইভিং, প্যারাসুটিং, শপিং, ব্যালি ডান্স, উটের পিঠে ভ্রমণ, অগণিত বিনোদন কেন্দ্র, থিম পার্ক, বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর ফেরারি ওয়ার্ল্ড, মানবসৃষ্ট দ্বীপ, স্ট্রিট ফুড থেকে শুরু করে বিলাসী রেস্টুরেন্টের, ক্যাফে আর লাউঞ্জ কোনো কিছুর অভাব নেই এসব দেশে।