০৯ আগস্ট ২০১৮, ১৪:২৮

ইচ্ছাকৃতভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দিত যে বিশ্ববিদ্যালয়!

টোকিও মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (টিএমইউ)  © সংগৃহীত

১২ বছর যাবত ভর্তি-ইচ্ছুক নারী শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে অকৃতকার্য করিয়ে ভর্তির অযোগ্য তালিকায় রাখা হতো জাপানের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘টোকিও মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (টিএমইউ)’তে।  ভর্তি পরীক্ষায় এমন জালিয়াতির ‍বিষয়টি ধরা পড়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে টিএমইউ কর্তৃপক্ষ।

নারী শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি নেওয়ার পর চিকিৎসা পেশায় জড়িত না থেকে সন্তান লালন পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বলে ছেলে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিত এই প্রতিষ্ঠানটি।  তবে এতে জনগণের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে টিএমইউ কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে।

তদন্তে দেখা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে ভর্তি পরীক্ষায় নারী আবেদনকারীদের প্রাপ্ত নম্বর কমিয়ে প্রকাশ করত তারা।  যেসব পুরুষ আবেদনকারী অন্তত চারবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তাদের নম্বরও কমিয়ে দেওয়া হত।

বিবিসি জানিয়েছ, গত সপ্তাহে এ জালিয়াতির খবর প্রকাশ করেছে জাপানের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ইয়োমিরি শিম্বুনে’।  গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রীদের অকৃতকার্য করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল।  তাদের ধারণা, মেডিকেল পাস করলেও নারীরা পরবর্তী জীবনে চিকিৎসা পেশায় থাকেন না।

অনেক ছাত্রী এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে চিকিৎসা পেশায় না থেকে সন্তান জন্ম ও লালন পালন করে সময় পার করছে।  তাই ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রদের অগ্রাধিকার দিত তারা।  প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ বছরের শুরুতে দুই দফা ভর্তির আবেদন থেকে মাত্র ৩০ ছাত্রীকে ভর্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি, বিপরীতে ছাত্র নিয়েছে ১৪১ জন।  প্রতিবেদন প্রকাশের পরই শুরু হয় তদন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ধরা পড়ে বিষয়টি।

দায় স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না।  মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিতসুও ইউকিওকা বলেন, ‘এ ধরনের পরিবর্তন কখনোই উচিত নয়।  আমরা জনগণের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করেছি।  এর জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেইসুকি মিয়াজাওয়া অঙ্গীকার করেছেন, আগামী বছর থেকে পরীক্ষা স্বচ্ছ হবে।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী কেনজি নাকাই বলেছেন, ‘এটা সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা।  এ ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে নারীর বিরুদ্ধে গুরুতর বৈষম্য করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে টিএমইউর কর্তৃপক্ষকে সাড়ে ৩ কোটি জাপানি ইয়েন জরিমানা করেছে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।