বিল না দিয়ে ক্যান্টিনে তালা দিলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগকর্মী
ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খাওয়ার পর টাকা না দিয়ে উল্টো তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রলীগকর্মী শাহরিয়া হাসনাত জিয়নের বিরুদ্ধে। তিনি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। থাকেন উত্তর ছাত্রাবাসে (নর্থ হল)। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জিয়ন বলেন, ক্যান্টিনে তালা দেওয়া হয়নি শুধু খাবার পরিবেশন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজের ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরের খাবার খাওয়ার পর কয়েকজন ছেলে টাকা না দিয়ে যাওয়ার সময় বাগবিতন্ডতায় জড়ায়। এসময় টাকা দিতে জোর করলে জিয়ন ও তার সহযোগীরা ক্যাশের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারকে মারধর করেন। ক্যাফেটেরিয়ার অন্যান্য কর্মচারীরা এগিয়ে এলে তাদেরকেও গালিগালাজ করেন। এরকিছু সময় পরই জিয়ন সহ তার সহযোগীরা ক্যাফেটেরিয়ার দরজায় তালা লাগিয়ে দেন।
মারধরের শিকার ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার আক্তার হোসেন বলেন, এর আগেও জিয়ন প্রায়ই এসব কাজ করেছে। তার এমন আচরণে আমরা বিরক্ত। প্রায় সময়ই খাবার পর টাকা না দিয়ে অথবা কম দিয়ে চলে যেতো। গত বৃহস্পতিবারও খাবার খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বিল পরিশোধের কথা বলি। এসময় জিয়ন ও তার সাথের সবাই খারাপ আচরণ শুরু করে। টাকার জন্য জোড়াজুড়ি করতেই তিনি গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে মারধোর করে আমাকে ও বাকি কর্মচারীদের ভেতরে রেখেই বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। এসময় আমার এক স্টাফের একটি মোবাইল ফোনও মিসিং হয়েছে।
তবে এই ঘটনার জেরে পরবর্তীতে আবার মারধরের শিকার হয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী শাহরিয়া হাসনাত জিয়ন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে বিএনপি সমর্থক একজন প্রভাষকও নেই
জানা গেছে, ঐদিন (বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট) রাত এগারোটার দিকে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের পাশের বিশ্বাস বিল্ডার্সের নিচে ক্যাফেটেরিয়ায় তালা দেওয়ার ব্যাপারে জিয়নের সাথে তর্কে জড়ান দক্ষিণ ব্লকের শিক্ষার্থীরা। কথা-কাটাকাটি একপর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষে রুপ নেয়। এসময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীই আহন হন। অভিযুক্ত জিয়নও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
জিয়ন দাবি করেন, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণে তাকে মারধোর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কাউকে মারধর করিনি। খাবার নিয়ে অভিযোগ করার কারণে ক্যান্টিনের মালিক কাওসারের লোকজন আমাকে মারধর করেছে ৷
ক্যাফেটেরিয়ায় তালা লাগিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন,আমি তালা দিবো কেন? আর ক্যান্টিনে তালা দেওয়া হয়নি শুধু খাবার পরিবেশন বন্ধ থাকবে। খাবারের মান ছাত্ররা প্রিন্সিপাল স্যারকে অভিযোগ করার পর স্যার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
তবে ঘটনাটিতে নিজের সম্পৃক্ততা ও ক্যান্টিনের মালিকানার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কাওসার হোসেন ৷
তিনি বলেন, শুনেছি জিয়ন ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা দেয় না ৷ ম্যানেজার টাকা চাওয়ায় সে ক্যান্টিনে তালা দিয়েছে৷ ক্যান্টিনে যেহেতু সাধারন শিক্ষার্থীরা খাবার খেয়ে থাকে তাই শিক্ষার্থীরা তালা দেয়ার বিষয়ে জিওনকে প্রশ্ন করলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রভাব দেখায়৷ এসময় হাতাহাতিতে সে আহত হয়৷
কাওসার হোসেন আরও বলেন, জিয়ন কেমন ছেলে সবাই সেটা জানে৷ কয়েকমাস আগে নিউমার্কেটের সাথে ঢাকা কলেজের যখন মারামারি হয় তখন ক্যাম্পাসের সামনের দোকান থেকে জিওন দলবল দিয়ে পাঞ্জাবী ছিনিয়ে আনে ৷ এই ঘটনা নিয়ে তখন টিভিতে নিউজ হয়েছিলো ৷ তিনি চুরি, ছিনতাই এসবের সাথে জড়িত৷ রাজনৈতিক ভাবে হেয় করতেই আমাকে এসবের মধ্যে জড়ানো হচ্ছে৷
অপরদিকে এই ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ৷ উভয় পক্ষই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন৷
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ঘটনাটি আমাদের জানানো হয়েছে। আসলে কী ঘটেছিল তা আমরা খতিয়ে দেখছি।