হোটেলে খেয়ে বিল দেন না, উল্টো চাঁদা নেন ছাত্রলীগ নেতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক হোটেল মালিকের থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। একই সাথে হোটেলে খেয়ে টাকা দেয়না আবার তাদের অনুসারীরাও চার-পাঁচ’শ টাকা খেয়ে এক’শ টাকা পরিশোধ করে এমন অভিযোগও আছে। শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হল সংলগ্ন খাবারের হোটেল মালিক মানিক হোসেন বাবু।
হোটেল মালিকের অভিযোগ, হল কমিটি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা। দিনপ্রতি দুই হাজার করে দাবি করলেও প্রতিদিন এক হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছেন তারা।
ভুক্তভোগী বাবু বলেন, তারা (রাশেদ এবং রাকিব) জিয়া হলের সভাপতি, সেক্রেটারি হওয়ার পরেই আমার সাথে কন্ট্রাক্ট করে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে দোকান চালাতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। প্রথমে তারা প্রতিদিন দুই হাজার টাকা দাবি করে। এরপর আমি নিয়মিত তাদের এক হাজার করে দিতে রাজি হই। কিছুদিন ব্যবসা খারাপ থাকায় সপ্তাহে দুই হাজার করে নিলেও এখন প্রতিদিন এক হাজার করে নিচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে রাশেদ এসে এক হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এই সপ্তাহে ছুটি থাকায় তিন-চার দিনের টাকা দিতে পারি নি। সেটা তারা ধরে রেখেছে। পরে নিয়ে নেবে। মানে নিয়মিত এক হাজার করে দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা ফোন করে টাকা রেডি রাখতে বলে। কখনও রাশেদ, কখনও রাকিব এসে টাকা নিয়ে যায়। পরে তারা দুজন টাকাটা ভাগ করে নেয়। এছাড়া হল কমিটি হওয়ার পর থেকে রাকিব প্রতিদিন দুই’শ থেকে আড়াই’শ টাকার খাবার খায়। কখনও তিনি বিল পরিশোধ করেননি। আমি পুরো হিসাব লিখে রেখেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার টাকার মত বাকি রয়েছে তার।
আরও পড়ুন: শোকের মাসে ‘বেপরোয়া’ ছাত্রলীগ, থেমে নেই ছিনতাই-চাঁদাবাজি
ওই দোকানে কর্মরত মেহেদী হাসান আকাশ বলেন, প্রায়ই রাশেদ ভাইয়ের ছেলেরা এসে হুমকি-ধামকি দেয়। এখন যে খাবারের রেট, ৪-৫ জন খেয়ে তিন’শ থেকে চার’শ বিল আসলে এক’শ টাকা দিয়ে চলে যায়। আর রাশেদ ভাইয়ের যত টাকাই বিল হোক না কেন ফিক্সড ৩০ টাকা দিয়ে চলে যায়। রাকিব ভাইয়ের প্রতিদিন তিন বেলায় তিন’শ থেকে চার’শ টাকা বিল হয়। টাকা দেয়না এজন্য বাবু মামা লিখে রাখতে বলে। খাতায় হিসেব লিখে রাখার বিষয়টি রাকিবকে জানালে ‘লিখে রেখে লাভ নেই’ বলে জানিয়েছেন। এতেই বোঝা যায় সে টাকা দিবে না।
চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ মিয়া বলেন, এসব মিথ্যা। আমি তো সবার সামনেই টাকা দিয়ে খাই। ৫০ টাকার খাবার খেলে হয়ত ৪০ টাকা দেই। এখানে চাঁদা নেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাকে ফাঁসানোর জন্য হয়ত এটা করা হচ্ছে।
একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে আমি অবগত নই। আমার মনে হয় রাশেদ ভাইও এই বিষয়ে কিছু জানেন না। খাবারের বিল না দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কোন মাসে অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখতাম, আবার কোন মাসের শেষে টাকা দিতাম। সর্বশেষ দুই মাসের টাকা হয়তো বাকি আছে। সেটাও দিয়ে দেব।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্রলীগের সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। এ নিয়ে আমরা গতকালও মিটিং করেছি। আমরা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। ছাত্রলীগের কোন কর্মী অন্যায় করলে ছাড় দেয়া হবে না।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি বিষয়টি মাত্র জানলাম। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে টাকা চাঁদাবাজি করার ইখতিয়ার কারো নেই। আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদগুলো দেখছি এবং সার্বিক খোঁজ-খবরও রাখছি। আমি এ ধরণের চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করব।