ছাত্রলীগ সম্পাদকের পিএ না হওয়ায় কলেজছাত্রকে চোর বানিয়ে মারধর
ব্যক্তিগত সহকারীর (পিএ) চাকরি না করায় এক কলেজছাত্রকে রাতভর আটকে নির্যাতন করেছেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি। পরে তাকে ৫০ হাজার টাকা চুরির স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ভিডিও ধারণ করে রেখেছেন অমি।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা পুঠিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে। সেখানেই থাকেন ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন অমি। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রের নাম মিলন হোসেন (১৯)। উপজেলার শিবপুরহাটে মো. আলমগীরের ছেলে তিনি। মিলন এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। গত রোববার থেকে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আলমগীর জানান, অমির পিএ’র চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত বৃহস্পতিবার মিলনকে হোস্টেলে নিয়ে যান ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। রাতে হোস্টেলে মদ্যপান ও উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ দেখে মিলন বাড়ি ফিরে যান। তিনি চাকরি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। যাঁরা মিলনকে নিয়ে যান, তাঁদের ফোন করতে থাকেন অমি।
পরদিন শুক্রবার রাতে ফের মিলনকে হোস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে অমি বলেন, মিলন হোস্টেল থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করেছে। এ সময় মিলন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তখন অমিসহ ১০-১২ জন তাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় ব্যাটও ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুন: বুলবুলকে খুন করে ‘তিনজন’, ‘কল লিস্ট’ মুছে ফেলেছেন প্রেমিকা
একপর্যায়ে বালিশের নিচ থেকে অস্ত্র বের করে দেখানো হয় মিলনকে। তারপরও তিনি টাকা দিতে না চাইলে বেল্ট খুলে গলায় প্যাঁচানো হয়। অমি বলেন, তোকে মেরে ফেললেও কেউ দেখবে না। বাঁচতে চাইলে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার কর। পরে প্রাণ বাঁচাতে মিলন স্বীকারোক্তি দেন। তখন এ দৃশ্য ভিডিও করা হয়। ভোরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আলমগীর হোসেন আরও বলেন, অমি মিলনকে ভয় দেখিয়ে বলে দেন, কেউ জিজ্ঞেস করলে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে জানাতে। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে পরদিন তিনি নির্যাতনের কথা জানান। পরে তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মিলনের বাবা এর বিচার দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি বলেন, তাঁকে আনা হয়েছিল আমার সঙ্গে থাকার জন্য, কাজটাজ করবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগেই ও চলে গেছে। বালিশের নিচে ৫০ হাজার টাকা ছিল, তা নিয়ে চলে যায়। তাই তাকে ডেকে ছোট ভাইয়েরা চড়-থাপ্পড় দিয়েছে। বলা হয়েছে, এসব আর করো না ভাইয়া।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী জানান, বিষয়টি তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।