‘সোনার চেন, কানের দুল ছিনতাই করেছেন ছাত্রলীগের তিলোত্তমা-ঊর্মি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দোয়েল চত্বর এলাকায় ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলায় ঘটনায় ছাত্রলীগের ৩২ নেতার নামে আদালতে মামলা হয়েছে। হামলার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার, শামসুন্নাহার হল শাখার শাখার সভাপতি খাদিজা আক্তার ঊর্মি মামলার বাদীর সোনার চেন ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলাটি আমলে নিয়ে শাহবাগ থানার ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মানসুরা আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে মারধর, হত্যা চেষ্টা, মোবাইল ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ৩০৬, ৩২৩, ৩২৬, ৩৭৯, ৪৪৭, ৫০৬, ৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
রবিবার (২৯ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালতে মামলার আবেদন করেন বাদী।
মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন মামলার প্রধান আসামি আল আমিন রহমান এর হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে মামলার বাদী মানসুরা আলম হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এরপর ঘটনাস্থলে আসামি রাশেদ ফেরদৌস আকাশ তার হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্য বাদীকে আঘাত করতে থাকেন। তখন নাজিমুদ্দিন এবং তিলোত্তমা শিকদার এর হাতে থাকা লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে মামলার বাদীকে হত্যার উদ্দেশে এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করতে থাকেন।
হামলার শিকার বাদী নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন। বাদীর হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশ এ সময় জখমপ্রাপ্ত হয়। একপর্যায়ে মামলার বাদী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ৪ নং আসামি তিলোত্তমা শিকদার ও ৫ নং আসামি খাদিজা আক্তার ঊর্মি ছিনিয়ে নেন।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক রাশেদ ফেরদৌস আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, সহ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শামীম পারভেজ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল বারী, উপ দফতর সম্পাদক মো. নাজির, উপ আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক শাহিন তালুকদার, উপ দফতর সম্পাদক খান মোহাম্মদ শিমুল, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের নেতা অভিজ্ঞান দাস অন্তু, শামসুন নাহার হলের সভাপতি খাদিজা আক্তার উর্মি, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক সামাদ আজাদ জুলফিকার, অমর একুশে হলের সভাপতি এনায়েত এইচ মনন, অমর একুশে হলের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হোসেন সোহাগ, অমর একুশে হলের সহ সভাপতি রাকিব হোসেন, বিজয় একাত্তর হলের সাবেক সহ সভাপতি মজিবুল বাশার, ঢাবির সলিমুল্লাহ হলের কর্মী নাজিমুদ্দিন সাইমুন, ঢাবির শহিদুল্লাহ হলের সভাপতি শরীফ আহম্মেদ, চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের, এফ রহমান হলের কর্মী আব্দুর রহিম, ছাত্রলীগের কর্মী মাহমুদ চৌধুরী, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ, এস এম হলের কর্মী সায়েম, ঢাবির এফ রহমান হলের সভাপতি রিয়াজ ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারিয়াল, ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক মুনিম শাহরিয়ার, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের কর্মী নাহিদ সানি, জগন্নাথ হলের কর্মী ঐশিক শুভ্র, জগন্নাথ হলের কর্মী সৌরভ চক্রবর্তী।
মামলার অভিযোগে থেকে জানা যায়, বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্রী। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন গত ২৬ মে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দোয়েল চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে বের হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, বিভিন্ন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ এবং বিভিন্ন ইউনিটের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদলের মিছিলে অতর্কিত হামলা শুরু করেন।
একপর্যায়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে আশ্রয় নিলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করিয়া ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর তাদের হাতে থাকা লোহার রোড, রাম দা, চাপাতি, বাশের লাঠি দ্বারা আঘাত করে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন এবং এলোপাতারি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয় হামলার নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতারা। তাদের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মানসুরা আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া হলের সভাপতি তারেক হাসান মামুন, বিজয় একাত্তর হলের সহ-সভাপতি তানভীর আজাদী, ঢাকা কলেজের সভাপতি শাহীনুর শাহীন, সাহাব উদ্দিন আহম্মেদ, বাংলা কলেজের কর্মী আব্দুল কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কর্মী শিহাব উদ্দিন শিহাব, মাসুদ এবং কবি নজরুল কলেজের নাহিদসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হয়।
মামলার আরজিতে বলা হয়— আসামি সামাদ আজদা জুলফিকার এর হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফকে হত্যার উদ্দেশ্য মাথায় আঘাত করতে থাকে। আসামি আমানুল্লাহ আমান এর হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া হলের সভাপতি তারেক হাসান মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্য এলোপাতাড়ি মাথায় এবং শরীরে আঘাত করতে থাকেন।
আসামি শামীম পারভেজ এর হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে বিজয় একাত্তর হলের সহ-সভাপতি তানভীর আজাদীকে গুরুতর জখম করার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে রক্তাক্ত করে। আসামি আব্দুল্লাহ ছিল বারী এর হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে লোহার রড ও বাশের লাঠি দিয়ে দোয়েল চত্বরের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কর্মী শিহাব উদ্দিন শিহাবকে হত্যার উদ্দেশ্য বেড়ধক মারধর শুরু করে। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম প্রাপ্ত হয়। আসামি নাজির, শাহিন তালুকদার, খান মোহাম্মদ শিমুলদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি এবং সাদ্দাম হোসেন, অভিজ্ঞান দাস অন্ত, এনায়েত এইচ মনন, ইমদাদুল হাসান সোহাগ দের হাতে থাকা হকিস্টিক দিয়ে ছাত্রদল নেতা মাসুদকে হত্যার উদ্দেশ্য এবং গুরুতর জখম করার এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে।
এজাহারে আরও বলা হয়, এ ছাড়া আসামি রাকিব হোসেন, মজিবুল বাশার, নাজিমুদ্দিন সাইমুন, সৈয়দ ইমাম বাকের দের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে ঢাকা কলেজের সভাপতি শাহীনুর শাহীন হত্যার উদ্দেশ্য মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে এবং আসামি মাহমুদ চৌধুরী, শরীফ আহম্মেদ, আব্দুর রহিম, সাজ্জাদ, মিজানুর রহমান পিকুলদের হাতে থাকা লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে ছাত্রদল নেতা সাহাব উদ্দিন আহম্মেদ কে গুরুতর জখম ও হত্যার উদ্দেশ্য এলোপাতাড়ি আঘাত করে মাথায় এবং হাতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করেন। আসামি রকিব, মজিবুল বাশার, নাজিমুদ্দিন সাইমুন ছাত্রদল নেতা সাহাব উদ্দিন আহম্মেদতে সজোরে লাথি, কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।
এ সময় তাদের বাচাতে পথচারী ও সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে আসামিরা তাদের ওপর চড়াও হন। আসামি সায়েম, রিয়াজ, মাহবুবুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল ফারিয়াল, ইয়াসির আরাফাত টিটু, মনিম শাহরিয়ার, নাহিদ সাদি, ঐশিক শুদ্র, সৌরভ চক্রবর্তী দের হাতে থাকা লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে ছাত্রদল নেতা কবি নজরুল কলেজের নাহিদ কে গুরুত্বর জখম ও হত্যার উদ্দেশ্য এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এ সময় আসামি সায়েম এর হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মাথায় আসামি রিয়াজ এবং মাহবুবুর রহমান এর হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্য আঘাত করিতে থাকে এবং আসামী মাহবুবুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল ফারিয়াল, ইয়াসির আরাফাত টিটু, মনিম শাহরিয়ার, নাহিদ সাদি, ঐশিক শুভ্র, সৌরভ চক্রবর্তী লাথি, কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।