আড়াই লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে গাড়ি আটকে রেখেছে জবি ছাত্রলীগ কর্মী
আড়াই লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় এফ. আর হিমাচল পরিবহনের একটি এসি বাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে রেখেছে শাখা ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী। গত ৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এফ. আর হিমাচল পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব; ১৫৭১-২২) বাসটি পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকা থেকে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাখা হয়।
এফ.আর পরিবহনের এমডি নোমান বলেন, তাঁতিবাজার মোড় থেকে কোন কারণ ছাড়াই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় গেইটে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মেহেদী নামের একজন আমার কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত গাড়ি ছাড়া হবে না বলে জানায়। আমি তাকে বলি আপনি আমার কাছে টাকা পান এমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে ডাবল টাকা দিবো। তখন সে আমাকে বলে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আকতার হোসেনের সবচেয়ে কাছের লোক। আমাকে কেউ কিছু করার ক্ষমতা নেই। টাকা না দিয়ে যদি এই নিয়ে বাড়াবাড়ি বা থানায় অভিযোগ করি তাহলে আমাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
সোমবার সকালে এ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাসটিকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ বর্ষের দর্শন বিভাগের ছাত্র মেহেদীও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে তাঁতীবাজার থেকে বাসটি আটক করে আনে। পরবর্তীতে এফ.আর পরিবহনের এমডি নোমানকে ফোন দিয়ে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। নয়দিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাসটি আটক করে রাখা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পুলিশ কোন ব্যবস্থায় নেয়নি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কানাঘুষা চললেও শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতা চুপ রয়েছেন।
আরও পড়ুন- চবি ছাত্রলীগ মানেই ‘সংঘর্ষ’
অভিযুক্ত মেহেদী বলেন, আমি তার কাছে টাকা পাই সেজন্য বাস আটকে রাখছি। সে টাকা পাওয়ার বিষয়ে কোন প্রমাণ আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে প্রমাণ না থাকলে আমি কিভাবে শত শত পুলিশ, এনএসআই, থানার ওসিদের টেক্কা দিয়ে গাড়িটা এখানে আটকে রাখছি। আর বাস মালিকের কাছে গিয়ে প্রমাণ কি আমি দিবো নাকি সে এসে প্রমাণ নিবে।
চাঁদাবাজির বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম আকতার হোসাইন বলেন, এ ব্যাপারে গতকাল আমাদের ফাঁড়ির ইনচার্জ আমাকে অবগত করলে আমি বলে দিয়েছি এর সাথে আমি এবং আমার সভাপতির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। মেহেদী সাধারণ সম্পাদকের কর্মী কিনা জানতে চাইলে আকতার হোসেন বলেন, ছাত্রলীগে কোন গ্রুপিং নেই সবাই ছাত্রলীগের কর্মী। আমাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে অনেকেই অনেক কিছু করতে চেষ্টা করে। আমাদের নির্দেশে গাড়ি এখানে আনা হয়নি ও এই ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ফাঁড়ি ইনচার্জকে বলে দিয়েছি আপনারা আপনাদের মত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন- গেস্টরুম-গণরুমে নির্যাতনের ভয়, ঢাবি ছেড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নয়দিন যাবত একটি বাস আটক করে রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল জানান, আমরাও কিছুদিন যাবৎ বাসটি গেটের সামনে দেখতে পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমি কোতোয়ালি থানার ওসি ও ক্যাম্পাস ফাঁড়ির ইনচার্জ নাহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলেছি। যেন বাসটিকে এখান থেকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের অবগত করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।